অনেক মুখমন্ডল সেদিন হবে সজীব, তাদের কর্মের কারণে সন্তুষ্ট, তারা থাকবে সুউচ্চ জান্নাতে সেখানে শুনবে না কোন অসাড় কথাবার্তা, সেখানে থাকবে প্রবাহিত ঝরণা, উন্নত সুসজ্জিত আসন এবং সংরক্ষিত পানপাত্র এবং সারি সারি গালিচা এবং বিস্তৃত বিছানো কার্পেট। (সূরা গাশিয়াহ, আয়াত: ৮-১৬)
মুমিন জীবনের সর্বোচ্চ আকাঙ্ক্ষিত গন্তব্য জান্নাত। দুনিয়ার জীবনে মুমিন যা কিছুই করে, সকল কাজের লক্ষ্যই হলো তার স্রষ্টা আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন এবং এর বিনিময়ে মানবজাতির চিরস্থায়ী আবাস জান্নাত অর্জনের।
কুরআন ও হাদীসের বিভিন্ন সূত্রানুসারে জানা যায়, জান্নাতে প্রবেশের জন্য ভিন্ন ভিন্ন কাজের উপর ভিত্তি করে ভিন্ন ভিন্ন আটটি দরজা রয়েছে।
সহীহ বুখারীর সাওম অধ্যায়ে চারটি স্বতন্ত্র দরজার বর্ণণা দেওয়া হয়েছে। এই দরজাগুলো যথাক্রমে,
এক. বাব আস-সালাহ (সালাতের দরজা), যারা আন্তরিক একনিষ্ঠতার সাথে নিয়মিত সালাত আদায় করবে, তাদের সম্মানে জান্নাতের এই দরজার নাম রাখা হয়েছে।
দুই. বাব আল-জিহাদ (জিহাদের দরজা), যারা একনিষ্ঠতার সাথে আল্লাহর পথে তার জীবন ও সম্পদ দিয়ে চেষ্টা ও সংগ্রাম করবে তার সম্মানে জান্নাতের এই দরজার নামকরণ হয়েছে।
তিন. বাব আর-রাইয়ান (সাওমের দরজা), একনিষ্ঠতার সাথে সাওম পালনকারীর জন্য জান্নাতের এই দরজার নামকরণ হয়েছে।
চার. বাব আস-সদাকা (দানের দরজা), মানুষের প্রয়োজনে যারা তাদের অর্থসম্পদ দিয়ে মানুষকে সাহায্য করেছে, তাদের সম্মানে এই দরজার নামকরণ হয়েছে।
এছাড়া বিভিন্ন সূত্র থেকে আরো যে দরজাসূহের নাম পাওয়া যায় তা হলো,
পাঁচ. বাব আল-ঈমান (ঈমানের দরজা), যারা বিনাহিসেবে জান্নাতে স্থান পাবে, তাদের সম্মানে এই দরজার নামকরণ হয়েছে।
ছয়. বাব আল-কাযিমিন আল-গায়িজ ওয়াল আফিনা আনিন্নাস (রাগকে দমনকারী ও লোকের ভুলকে ক্ষমাকারী ব্যক্তিদের দরজা), যারা লোকাদের ভুলকে ক্ষমা করে এবং নিজের রাগকে দমন করে, এই দরজার নামকরণ তাদের সম্মানে।
সাত. বাব আর-রাযিয়িন (সন্তুষ্টদের দরজা), যারা আল্লাহর উপর সন্তুষ্ট এবং আল্লাহও যাদের উপর সন্তুষ্ট, তাদের সম্মানে এ দরজার নামকরণ হয়েছে।
আট. বাব আত-তওবা (ক্ষমা প্রার্থনার দরজা), নিজের কৃতকর্মের জন্য অনুতপ্ত হয়ে যে আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করেছে, তাদের সম্মানার্থে জান্নাতের এই দরজার নামকরণ করা হয়েছে।
যে দোয়া পড়লে জান্নাতের ৮টি দরজা খুলে
ওজু করা ইবাদত হিসেবে ছোট্ট ও সহজ হলেও এর রয়েছে অনেক বড় সাওয়াব। যে ইবাদত ও আমলের মাধ্যমে মানুষ গোনাহ মুক্ত হয়ে যায় বলেও ঘোষণা দিয়েছেন বিশ্বনবি। অজু পবিত্রতার মাধ্যম। নামাজ আদায়েরও প্রধান মাধ্যম। কারণ, অজু ছাড়া নামাজ হয় না। নামাজের জন্য অজু ফরজ। হাদিসে অজুকে নামাজের চাবি বলা হয়েছে। আর নামাজকে বলা হয়েছে জান্নাতের চাবি।
দৈনিক কতবার অজু করা হয়! নামাজের সময়, কোরআন তেলাওয়াতের আগে কিংবা অপবিত্রতা থেকে পবিত্রতা লাভ করতে। কিন্তু আমরা অনেকে হয়তো জানি না যে, এই অজুর পর একটি দোয়া পড়লে আল্লাহ তালা বিপুল সওয়াব দেবেন। এমনকি জান্নাতের সব দরজা উন্মুক্ত করে দেন।
উকবা ইবনে আমের (রা.) থেকে বর্ণিত, আল্লাহর রাসুল (সা.) ইরশাদ করেন, ‘তোমাদের কেউ যখন অজু করে, আর সে পূর্ণরূপে সুন্দর করে অজু করে; এরপর সে নিম্নের দুআটি পাঠ করে- তাহলে তার জন্য জান্নাতের আটটি দরজা খুলে দেয়া হয়। সে যে দরজা দিয়ে ইচ্ছে, প্রবেশ করতে পারবে।’ (মুসলিম শরিফ, হাদিস: ৩৪৫)
أَشْهَدُ أَنْ لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ وَحْدَهُ لَا شَرِيكَ لَهُ وَأَشْهَدُ أَنَّ مُحَمَّدًا عَبْدُهُ وَرَسُولُهُ
উচ্চারণ: আশহাদু আল-লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহদাহু লা-শারিকা লাহু, ওয়া আশহাদু আন্না মুহাম্মাদান আবদুহু ওয়া রাসুলুহু।
অর্থ: আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ ছাড়া কোনো উপাস্য নেই। তিনি একক, তার কোনো অংশীদার নেই। এবং আমি আরও সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, মুহাম্মদ (সা.) তার বান্দা ও রাসুল।
অজুর শেষে যে দোয়ায় জান্নাতের আট দরজা খুলে যায়
অপর একটি হাদিসে আরেকটি দোয়া বর্ণিত আছে। সেই দোয়াটি পড়লেও জান্নাতের আটটি দরজা খুলে দেয়ার ঘোষণা দেয়া হয়েছে।
উমর ইবনে খাত্তাব (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি সুন্দরভাবে অজু করার পর উল্লিখিত দোয়া পড়বে, তার জন্য জান্নাতের আটটি দরজাই খুলে দেওয়া হবে। সে নিজ ইচ্ছামতো যেকোনো দরজা দিয়েই তাতে যেতে পারবে।’ (তিরমিজি, হাদিস : ৫৫)
أَشْهَدُ أَنْ لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ وَحْدَهُ لَا شَرِيكَ لَهُ وَأَشْهَدُ أَنَّ مُحَمَّدًا عَبْدُهُ وَرَسُولُهُ، اللَّهُمَّ اجْعَلْنِي مِنَ التَوَّابِينَ ، واجْعَلْني مِنَ المُتَطَهِّرِينَ
উচ্চারণ: আশহাদু আল-লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহদাহু লা-শারিকা লাহু, ওয়া আশহাদু আন্না মুহাম্মাদান আবদুহু ওয়া রাসুলুহু, আল্লাহুম্মাজ-আলনি মিনাত-তাওয়া-বিনা, ওয়াজ-আলনি মিনাল-মুতা-ত্বাহহিরিন।
অর্থ: ‘আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ ছাড়া কোনো উপাস্য নেই। তিনি একক, তার কোনো অংশীদার নেই। এবং আমি আরও সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, মুহাম্মদ (সা.) তার বান্দা ও রাসুল।
হে আল্লাহ! আপনি আমাকে তাওবাকারীদের অন্তর্ভুক্ত করুন এবং পবিত্রতা অর্জনকারীদেরও অন্তর্ভুক্ত করুন।’