Image default
ইসলাম

অভিভাবককে না জানিয়ে গোপনে বিয়ে সম্পর্কে ইসলামের দৃষ্টিভঙ্গি

ইসলামী শরিয়তে ছেলে এবং মেয়ে দু’জনের মধ্যে সম্পর্ক গড়ে তোলার একমাত্র পদ্ধতি হচ্ছে বিয়ে। বিয়ের পূর্বে প্রেম-ভালোবাসার সম্পর্ক শরিয়তের দৃষ্টিতে বৈধ নয়।

ইসলামের দৃষ্টিতে বিবাহ শুধু জৈবিক প্রয়োজন পূরণের মাধ্যম নয়- বরং একটি মহান ইবাদত। এটি ধর্মীয় অনুশাসন ও রিচুয়ালের অন্যতম অংশ।

বিয়ের জন্য ছেলেদের শুধু নিজের সম্মতি প্রয়োজন । কিন্তু মেয়ের নিজের সম্মতির সাথে অভিভাবকের সম্মতিও সমান ভাবে গুরুত্বপূর্ণ । এই তিনজনের একজন যদি বিয়েতে মত না দেয় তবে বিয়ে হবে না ।

একটা স্পষ্ট কথা মেয়েদের জেনে রাখা উচিত যে, যত যাই হোক না কেন, তাঁর অভিভাবকের সম্মতি ব্যতীত কোন বিয়েই বৈধ নয়। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের হাদীস এ ব্যাপারটিই নির্দেশ করে।

# “যে নারী তার অভিভাবকের সম্মতি ছাড়াই নিজে নিজে বিবাহ করে, তার বিবাহ বাতিল, বাতিল, বাতিল।” (আহমাদ,আবু দাউদ,তিরমিযী,ইবনে মাজাহ,দারেমী,মিশকাত ৩১৩১ নং)

# “ওয়ালী (অভিভাবক) এবং দুইজন উত্তম চরিত্রের সাক্ষী ব্যতীত কোনো বিবাহ (বৈধ) হবে না”।
[আল বায়হাক্বী থেকে বর্ণিত ইমরান এবং ‘আয়িশা এর হাদীস; সহীহ আল-জামি’ ৭৫৫৭ এ আল-আলবানী হাদিসটিকে সহীহ হিসেবে আখ্যায়িত করেন।]

আরও বর্ণিত হয়েছে, এক স্ত্রীলোক অপর স্ত্রীলোক বিবাহ দিতে পারে না এবং কোনও স্ত্রীলোক নিজে নিজেই বিবাহ আবদ্ধ হতে পারে না। কারণ, কেবল ব্যভিচারিণীই নিজেকে বিবাহ আবদ্ধ করতে পারে।

আর অভিভাবক হলেন পিতা , পিতা না থাকলে ভাই এভাবে যাবে এবং যদি কাছের কোন আত্মীয় জীবিত না থাকেন বা কাফের/মুরতাদ/ফাসেক হবার কারণে অভিভাবকত্ব হারান তবে তার অভিভাবকত্ব রাষ্ট্রের জিম্মায় চলে যাবে ।

তাই পালিয়ে যদি ছেলে বিয়ে করে কিন্তু মেয়েটির অভিভাবক সম্মতি দিয়েছে তবে বিয়ে বৈধ ।

কিন্তু মেয়ে পালিয়ে অভিভাবকের সম্মতি না নিয়ে বিয়ে করলে বিয়ে বৈধ হবে না । ছেলের পরিবার জানুক বা না জানুক এতে কিছুই এক্ষেত্রে যায় আসবে না ।

সকল মাজহাব এ ব্যাপারে একমত । তবে মেয়ে যদি অভিভাবকের যুলুমের স্বীকার হয় তবে হানাফি মাজহাব সে যুলুম হতে বাচার জন্য একটু ছাড় দিয়েছে তবে অকারণ পালিয়ে বিয়েকে বৈধতা দেয়নি ।

সুতরাং মেয়েদের জন্য পালিয়ে বিয়ে সম্পূর্ণ অবৈধ ।

রাসুলুল্লাহ (সা.) দ্ব্যর্থহীনকন্ঠে ঘোষণা করেছেন, বিবাহ আমার সুন্নত। যে আমার সুন্নত থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয় সে আমাদের দলভুক্ত নয়। (সুনানু ইবনি মাযাহ, হাদিস নং-১৯১৯)

ইসলামে প্রতিটি বিষয়ে যেমন দিকনির্দেশনা রয়েছে তেমনি বিবাহের জন্যও রয়েছে অনেক বিধি নিষেধ।

বিয়ের সঠিক সময় এবং সঠিক পদ্ধতি হচ্ছে উপযুক্ত বয়সে স্ত্রীর ভরণ পোষণের ক্ষমতা অর্জনের পর পিতা-মাতার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী উপযুক্ত পাত্রীকে বিয়ে করা।

পারিবারিক ও সামাজিক শান্তি ও নিরাপত্তার ক্ষেত্রে এটা বিশেষ গুরুত্ব বহন করে। সময়ের পূর্বে অভিভাবকের অজান্তে বিয়ে করা একেবারেই অনুচিত।

রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘অভিভাবক ছাড়া বিয়ে সংঘটিত হয় না।’ (তিরমিজি, হাদিস : ১১০১; আবু দাউদ, হাদিস : ২০৮৩)

এর কারণ হলো, পারিবারিক মূল্যবোধের জায়গা থেকে পরিবারের সদস্যদের অভিমত ও বংশীয় মর্যাদা পারিবারিক বন্ধনের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ। আবার অভিভাবকহীন বিয়েতে কখনো কখনো ‘কুফু’ (সমতা) রক্ষা হয় না। সে ক্ষেত্রে বংশের অপমান হয়। তাই অভিভাবকদের এ ক্ষেত্রে কিছু অধিকার দেওয়া হয়েছে।

আর অভিভাবকহীন বিয়ে বা গোপন বিয়ে অসামাজিক ও অকৃতজ্ঞতাপূর্ণ কাজ। এ জন্য বিয়ের ক্ষেত্রে গোপনীয়তা ইসলাম পছন্দ করে না। তাই ইসলামের নির্দেশনা হলো, ‘বিয়ে করবে ঘোষণা দিয়ে।’ (মুসনাদে আহমাদ : ৪/৫)

এতদসত্ত্বেও যদি কেউ অন্যায় লালসায় তাড়িত হয়ে কমপক্ষে দু’জন সাক্ষীর উপস্থিতিতে বিয়ে করেই ফেলে, তাহলে যদিও শরিয়তের দৃষ্টিতে বিশেষ বিবেচনায় বিয়ে শুদ্ধ হয়ে যাবে। কিন্তু পারিবারিক ও সামাজিক দৃষ্টিকোণ থেকে তা সম্পূর্ণ অনুচিত হবে।

কারণ বিবাহ শুদ্ধ হওয়ার শর্ত হল শরীয়তের মুকাল্লাফ (যাদের উপর শরীয়তের বিধান আরোপিত হয়) এমন দুইজন স্বাধীন পুরুষ সাক্ষী বা একজন স্বাধীন পুরুষ ও দুইজন নারী সাক্ষী হতে হবে, যারা প্রস্তাবনা ও কবুল বলার উভয় বক্তব্য নিজ কানে উপস্থিত থেকে শুনতে পায়। (আদ দুররুল মুখতার-৩/৯, ফাতওয়ায়ে হিন্দিয়া-১/২৬৮)

তাই এ ধরনের বিয়ে নিন্দনীয় হলেও গোপনে বিয়ে করে ফেললে বিয়ে হয়ে যাবে, তখন এই বন্ধন রক্ষা করতে হবে। কেননা বিয়ে কোনো ছেলেখেলা নয়, বরং এটি নারী-পুরুষের সারা জীবনের পবিত্র বন্ধন। তাই গোপনে বিয়ে করে ফেললেও তালাকের পথে পা বাড়াবে না।

কেউ গোপনে বিয়ে করে ফেললে মা-বাবার সঙ্গে এ বিষয়ে খোলাখুলি আলোচনা করা জরুরি। তাদের বুঝিয়ে বলতে হবে যে অভিভাবককে না জানিয়ে যে বিয়ে করেছে, তার শাস্তি সে পেতে পারে, তার স্ত্রী নয়। এর প্রতিকার হিসেবে তালাকের মতো দুর্ঘটনা ঘটলে তা হবে আরেকটি অন্যায়।

অবশ্য যদি ‘কুফু’ (সমতা) রক্ষা না হয় বা অভিভাবক মারাত্মক কোনো সমস্যা দেখেন, তাহলে তারা সন্তানকে বিবাহবিচ্ছেদের কথা বলার অধিকার রাখে। এক্ষেত্রে যদি তারা তালাকের কথা বলে, তাহলে দেখতে হবে, তাদের কথা সঠিক ও যুক্তিসংগত কি না?

যদি অভিভাবকের কথা সঠিক ও যুক্তিসংগত হয় এবং সে কারণে তালাক ছাড়া আর কোনো পথ বাকি না থাকে, পাশাপাশি যদি তালাক দেওয়ার দ্বারা তার ব্যভিচারে জড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা না থাকে, তাহলে মা-বাবার সন্তুষ্টির জন্য স্ত্রীকে তালাক দেওয়া যাবে।

পক্ষান্তরে তালাকের কারণ যদি যৌক্তিক না হয়, তাহলে তালাক দেওয়া জায়েজ হবে না। (মুসনাদে আহমাদ, হাদিস : ৪৭১২, আবু দাউদ, হাদিস : ৫১৩৮)

সুতরাং আখেরাত ও জাহান্নামের কথা স্মরণ করে গুনাহ থেকে বাঁচার চেষ্টা করতে হবে এবং প্রয়োজনে অভিভাবকদের জানিয়ে তাদের পরামর্শক্রমেই বিয়ে করতে হবে। দায় দায়িত্বহীনভাবে গোপনে বিয়ে করা শরিয়তের দৃষ্টিতে পছন্দনীয় নয়।
এক্ষেত্রে, অবশ্যকরনীয় হল, আল্লাহর কাছে কান্নাকাটি করে অতীতের ভুলের জন্য ক্ষমাপ্রার্থনা করা। তওবা করা। ইনশাল্লাহ আল্লাহ্‌ মাফ করবেন।

Related posts

মাহে রমজানের গুরুত্ব এবং প্রস্তুতি

News Desk

কেমন হবে মৃত্যু-পরবর্তী জীবন

News Desk

সৌদিতে আজান-ইকামাত ছাড়া মসজিদের মাইক ব্যবহার নিষিদ্ধ

News Desk

Leave a Comment