বিদেশে চাকরি পাওয়ার উপায় কি? আপনি কি বিদেশে চাকরি করার স্বপ্ন দেখছেন? সেই স্বপ্ন পূরণ করার জন্য প্রস্তুত করছেন তো নিজেকে? প্রতিবছর পড়াশোনা শেষ করে লক্ষ লক্ষ শিক্ষার্থী বিশ্বাবিদ্দ্যালয়ের গন্ডি পেরিয়ে ভালো একটি চাকারীর আশা নিয়ে বের হয়।
কিন্তু বাংলাদেশের চাকরির বাজারে ক্রমবর্ধমান সংকটের কারণে মানুষ চাকরি প্রত্যাশীরা এখন তাই, বিকল্প পথ নিতে বাধ্য হয়েছে। আর সেই বিকল্প পথের আশায়, বিদেশে চাকরি অর্জনের স্বপ্ন দেখছেন। কিন্তু, শুধু স্বপ্ন দেখলেই হবে না বরং সেই স্বপ্ন পূরণের জন্য দিনরাত চেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে।
স্বপ্ন দেখার নামই জীবন। বিদেশের উচ্চাভিলাসী লাইফস্টাল মানুষকে বিদেশে চাকরি গ্রহণে উৎসাহী করে তুলে সবচেয়ে বেশি পরিমানে। বিদেশে একইসাথে ব্যক্তিগত উপলব্ধি এবং প্রফেশনাল অভিজ্ঞতা বৃদ্ধি পাওয়া যায় বিধায় মানুষ এখন বিদেশে চাকরির দিকে ঝুঁকছে।
বিদেশে চাকরি পাওয়ার উপায়
এছাড়াও, ভিন্ন একটি সংস্কৃতিতে বিভিন্ন দেশের মানুষের সাথে একই ছাদের নিচে সম্পূর্ণ ভিন্ন একটি পরিবেশে কাজ করার অভিজ্ঞতা শুধুমাত্র বিদেশে চাকরির করার ক্ষেত্রে সুবিধা পাওয়া যায়।
তাই আজকের আর্টিকেলটি বিদেশে চাকুরীর গ্রহণের সুবিধা এবং সেই সাথে বিদেশে চাকরি পাওয়ার সম্পূর্ণ দিক-নির্দেশনা নিয়ে সাজানো হয়েছে। আশা করি যারা বিদেশে চাকরি করতে চাচ্ছেন তাদের ক্ষেত্রে উপকারী হতে পারে আজকের ব্লগটি।
বিদেশে চাকরি অর্জনের ক্ষেত্রে কি কি জিনিস জানা প্রয়োজন?
দেশে একটি চাকরি অর্জন করতে হলে আপনাকে যে পরিমান পরিশ্রম করতে হবে, বিদেশে চাকরি পেতে আপনার তার থেকে ৩ গুন বেশি পরিমানে পরিশ্রম করতে হবে। দেশে চাকরি করলে কিছু জিনিস সম্পর্কে ধারণা না রাখলেও চলবে। কিন্তু, বিদেশে চাকরি করতে চাইলে আপনার অতিরিক্ত কিছু জিনিস সম্পর্কে জানতে হবে।
বিদেশে চাকরি অর্জনে যেসব জিনিস জানা প্রয়োজন:
- ভিন্ন দেশের ভাষা জানা।
- পাসপোর্ট তৈরি করে রাখা।
- ভিসা এবং ওয়ার্ক পারমিট পারমিশন নেওয়া।
- ভিন্ন ইন্টারভিউ সিস্টেমের সাথে খাপ খাইয়ে নেওয়া।
- ভিন্ন টাইমজোনের সাথে নিজেকে খাপ খাইয়ে নেওয়া
- অর্থনীতি,সংস্কৃতি সম্পর্কে পরিষ্কার ধারণা রাখা।
- আবহাওয়া সম্পর্কে স্বচ্ছ ধারণা রাখা।
ভিন্ন দেশের ভাষা জানা
আপনি যে দেশে চাকরি করবেন সেই দেশের ভাষা অবশ্যই শিখে রাখুন। ভাষা জানা আপনার সিভিতে অভিজ্ঞতা হিসেবে যুক্ত করতে পারবেন এবং সেই সাথে আপনাকে বিভিন্ন অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতিতে থেকে বাঁচাতে ভূমিকা পালন করবে। ইংরেজিতে বা কোন ভাষায় দুর্বল হলে আমাদের নিচের লেখাগুলো পড়তে পারেন।
- দ্রুত ইংরেজি শেখার সহজ উপায়
- ইংরেজি থেকে বাংলা অনুবাদ করার নিয়ম
- কোরিয়ান ভাষা শিক্ষা করবেন কিভাবে?
- ইংরেজি বানান শেখার ৭টি সহজ উপায়
পাসপোর্ট তৈরি করে রাখা
বিদেশে যেতে চাইলে সবার আগে পাসপোর্ট তৈরী করে রাখা অত্যাবশ্যক। কারণ, হঠাৎ করে আপনার চাকরি হয়ে গেলে যদি তখন পাসপোর্ট রেডি না থাকে খানিকটা বিপত্তির মুখে পড়তে হবে আপনাকে। তাই, আগে থেকে সবকিছু রেডি করে রাখাটা জরুরি।
ভিসা ও ওয়ার্ক পারমিট
আপনি বিদেশে চাকরির আবেদন পত্রের সাথে ভিসা এবং একই সাথে ওয়ার্ক পারমিট পারমিশন জমা দিতে হবে। বিদেশে চাকরি করতে চাইলে আগে থেকে ভিসা এবং ওয়ার্ক পারমিট রেডি করে রাখতে হবে।
ভিন্ন ধরণের ইন্টারভিউ সিস্টেমের সাথে খাপ খাইয়ে নেওয়া
বাইরের দেশে চাকরির আবেদনে বেশির ভাগ ইন্টারভিউ ভিডিও কলের মাধ্যমে নেওয়া হয়ে থাকে। তাই, আপনাকে আগে থেকে ভিডিও কলে ইন্টারভিউ দেওয়ার জন্য নিজেকে প্রস্তুত করে নিতে হবে।
ভিন্ন টাইমজোনের সাথে নিজেকে খাপ খাইয়ে নেওয়া
যে দেশে চাকরির আবেদন করবেন আবেদন পত্র জমা দেওয়ার পর সেই দেশের টাইম মোবাইলে সেট করে নিবেন, কারণ আপনাকে ইন্টারভিউ সেই দেশের টাইম অনুযায়ী দিতে হবে। অনাকাঙ্খিত বিপদ এড়াতে এই কাজটি করে নেওয়াটা জরুরি।
অর্থনীতি ও সংস্কৃতি সম্পর্কে ধারণা রাখা
আপনি সে দেশে যাবেন চাকরির উদ্দেশে সেই দেশের অর্থনীতি এবং সংস্কৃতি সম্পর্কে স্বচ্ছ ধারণা নিয়ে যাবেন। এতে আপনার জন্য অনেকটা সহজ হবে।
আবাহাওয়া সম্পর্কে স্বচ্ছ ধারণা রাখা
আপনি যে দেশে যাবেন সেই দেশের আবহাওয়া সম্পর্কে পরিপূর্ণ স্বচ্ছ ধারণা নিয়ে যাবেন। কারণ, সেই দেশের আবহাওয়া কেমন আপনি কেমন মানিয়ে নিতে পারবেন সেই সম্পর্কে ধারণা রাখা উচিত।
ভিন্ন একটি দেশে চাকরি পাবার উপায়
বিদেশে চাকরির প্রসেসটা অনেক সময় খুব লম্বা হয়ে থাকে। সেই জন্য আপনাকে প্রচুর পরিমানে ধৈর্যের অধিকারী হতে হবে, ফলাফল যাই আসুক না কেন নিজের মনোবল শক্ত করে রেখে পরিশ্রম করে যেতে হবে।
বিদেশে চাকরির জন্য নিচের ধাপগুলো অনুসরণ করা জরুরি:
- আপনি কি ধরণের চাকরি খুঁজছেন সেই সম্পর্কে ধারণা রাখা প্রয়োজন।
- আপনি চাকরির জন্য কোন দেশে যেতে চান সেই দেশ সম্পর্কে জানা প্রয়োজন।
- আপনার পছন্দের কর্মক্ষেত্র বাছাই করা প্রয়োজন।
- ওয়ার্ক পারমিট ভিসার জন্য আবেদন করা।
- সবসময় নিজেকে সিভিকে আপডেট করে রাখা
- জবের জন্য এপ্লাই করা।
১. আপনি কি ধরনের চাকরি খুঁজছেন?
বিদেশে চাকরির জন্য সবার আগে আপনি কি ধরণের চাকরি খুজঁছেন সেই সম্পর্কে সম্মুখ ধারণা রাখা প্রয়োজন। কারণ আপনি যে ধরণের চাকরির চাচ্ছেন যে দেশে যেতে চান সেখানে তার ক্ষেত্র কতটুকু এইসকল বিষয় সম্পর্কে পরিপূর্ণ ধারণা রাখা প্রয়োজন।
২. যে দেশে যেতে চান সেই দেশ সম্পর্কে ধারণা রাখা
আপনি যে দেশে চাকরির উদ্দেশ্যে যেতে চান সেই দেশে আবহাওয়া, সংস্কৃতি,রাজনীতি সম্পর্কে পরিপূর্ণ ধারণা রাখা প্রয়োজন।
৩. পছন্দের কর্মক্ষেত্র বাছাই করা
আপনার পছন্দের কর্মক্ষেত্র বাছাই করে সেখানে আবেদন করা যুক্তিসঙ্গত কাজ।
৪. ওয়ার্ক পারমিট ভিসার জন্য আবেদন করা
বিদেশে চাকরির সিদ্ধান্ত নেওয়ার পর সবার আগে ওয়ার্ক পারমিট ভিসার জন্য আবেদন করা উচিত। কারণ, ওয়ার্ক পারমিট ভিসার কাগজপত্র আপনাকে চাকরির আবেদন পত্রের সাথে জমা দিতে হবে। তাই, আগে থেকে আবেদন করে রাখাটা জরুরি।
বিদেশে যাওয়ার জন্য অবশ্যই সরকারিভাবে নিবন্ধন করতে হবে। এজন্য, ৮৯/২, কাকরাইল ঢাকা এর জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরো (বিএমইটি) www.bmet.org.bd এইখানে গিয়ে নিবন্ধন করতে হবে।
৫. সিভিকে আপডেট করে রাখা
নিজের সিভিকে সবসময় আপডেট করে রাখাটা জরুরি। বিদেশে চাকরির ক্ষেত্রে ভলেন্টিয়ারিং এক্সপেরিয়েন্ট এবং পার্টটাইম চাকরির অভিজ্ঞতা খুবই গুরুত্ব বহন করে। তাই বিশ্ববিদ্যালয়ের থাকাকালীন সময়ে ভলেন্টিয়ারিং কাজে নিজেকে যুক্ত করে রাখাটা বুদ্ধিমানের কাজ।
৬. জবের জন্য আবেদন করা
আজকাল ঘরে বসেই আপনি আপনার পছন্দের দেশে ইন্টারনেটকে কাজে লাগিয়ে সেই দেশের কোম্পানীসমূহের আবেদন করতে পারবেন।
বিদেশে চাকরির ওয়েবসাইট
উপরে উল্লেখিত ওয়েবসাইটগুলোতে সবসময় নজর রাখুন। আপনি যে বিষয়ে স্কিল, সে বিষয়ে কাজের অফার পেলে আবেদন করে ফেলুন। বিদেশে উচ্চশিক্ষার সরকারি স্কলারশিপের ওয়েবসাইট।
বিদেশের চাকরির ব্যাপরে সহায়তা পেতে যোগাযোগ করুন:
প্রবাসীকলাণ ভবন: ৭১-৭২, পুরোনো এলিফ্যান্ট রোড, ইস্কাটন গার্ডেন, ঢাকা। www.probashi.gov.bd
বোয়েসেল: ৭১-৭২ এলিফ্যান্ট রোড, ইস্কাটন গার্ডের ঢাকা। 02-9361515, 02-9336551 www.boesl.org.bd
বায়রা: বায়রা ভবন, ১৩০ নিউ ইস্কাটন রোড, ঢাকা। টেলিফোন: 02-7359642, 02-934556
বিদেশে চাকরি করার সুবিধা সমূহ
বিদেশে চাকরি করার অভিজ্ঞতা আপনার প্রফেশনাল কর্মজীবনের টার্নিং পয়েন্ট হিসেবে কাজ করবে। শুধুমাত্র এই অভিজ্ঞতা যদি আপনি আপনার প্রফেশনাল ক্যারিয়ারে যুক্ত করতে পারেন তাহলে আপনি কর্মজীবনে কখনো খালি বসে হাতে হবে না।
বিদেশে চাকরি করার কিছু সুবিধা সমূহ তুলে ধরা হলো:
- ভিন্ন একটি সংস্কৃতি সম্পর্কে জানার সুবিধা।
- সিভিতে ভ্যালু এড করা।
- স্বাধীনভাবে সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা অর্জন করা।
- খাপ খাইয়ে নেওয়ার ক্ষমতা অর্জন করা।
ভিন্ন একটি সংস্কৃতি সম্পর্কে জানার সুবিধা

প্রিন্ট এবং ইলেক্ট্রনিক্স মিডিয়ার কল্যানে আজকাল আমাদের ঘরে বসেই বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সংস্কৃতি সম্পর্কে জানার সুযোগ হচ্ছে। কিন্তু এসব ক্ষেত্রে আমরা ঠিক ততটুকুই জানছি ঠিক যতটুকু তারা আমাদের সামনে তুলে ধরছে। কিন্তু বিদেশে চাকরি নিলে আপনি আপনার সামনে একটি ভিন্ন দেশের আচার -আচরণ, সংস্কৃতি খুব কাছে থেকে দেখার সুযোগ হবে।
সিভিতে ভ্যালু এড হবে
বর্তমানে চাকরির অর্জন এর ক্ষেত্রে সিভির গুরুত্ব কম নয়। যেখানে আপনি পৌঁছাতে পারেন নি সেখানে আপনার আগে আপনাকে সিভি দিয়ে যাচাই করা হবে। তাই যদি বিদেশে চাকরির অভিজ্ঞতা আপনার সিভিতে যুক্ত করতে পারেন তাহলে তা আপনার সিভিতে ভ্যালু এড করতে সাহায্য করবে। যা ভবিষ্যতে আপনার চাকরির ক্ষেত্রে টার্নিং পয়েন্ট আকারে কাজ করবে। তখন আপনাকে চাকরি খুজতে হবে না চাকরি আপনাকে খুঁজে নিবে।
স্বাধীনভাবে সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা
বিদেশে চাকরি নিলে আপনি সম্পূর্ণ নিজের দায়িত্ব নিজে নিয়ে দেশ ত্যাগ করবেন। সেই দেশে আপনার ভালো মন্দ নিজে বুঝে সম্পূর্ণরূপে সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা আপনার রয়েছে। তাই কোনটা আপনার ভালো হবে আর কোনটা আপনার জন্য খারাপ হবে তা যাচাই করার দায়িত্ব থাকবে সম্পূর্ণ আপনার নিজের উপর।
খাপ খাইয়ে নেওয়ার ক্ষমতা অর্জন করা
বিদেশে চাকরি গ্রহণে আপনাকে একটি নতুন দেশে খুব সহজে খাপ খাইয়ে নেওয়ার অভিজ্ঞতা অর্জন করতে সহায়তা করবে। একটি নতুন দেশে ,নতুন একটি অফিসে, সম্পূর্ণ ভিন্ন পরিবেশে, নতুন মানুষদের সাথ্র আপনি নিজেকে খাপ খাইয়ে নেওয়ার সুযোগ অর্জন করতে পারবেন। যা আপনাকে সকলের সাথে একটি বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়তে সহায়তা করবে।
উপসংহার
বিদেশে চাকরি অর্জন এর পথটা মোটেও সহজ নয়। কিন্তু, তাই বলে বসে না থেকে চেষ্টা করে যান। সাফল্য ধরা দিবেই কোন একসময়।