Image default
বাংলাদেশ

পাঁচ বিভাগের সমন্বয়ে চলছে রক্তিমের চিকিৎসা

নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রের (আইসিইউ) ৬ নম্বর শয্যায় লাইফ সাপোর্টে আছেন রক্তিম সুশীল। পাশে বসে মুখের দিকে নিষ্পলক তাকিয়ে আছেন স্ত্রী সুমনা শর্মা। পাঁচটি বিভাগের সমন্বয়ে রক্তিমের চিকিৎসা চলছে।

রক্তিম সুশীল গত মঙ্গলবার ভোরে কক্সবাজারের চকরিয়া উপজেলার ডুলাহাজারা ইউনিয়নের মালুমঘাট এলাকায় পিকআপ ভ্যানের চাপায় গুরুতর আহত হন। এই ঘটনায় তাঁর পাঁচ ভাইয়ের মৃত্যু হয়। আহত হন আরও দুই ভাই ও এক বোন। ১০ দিন আগে তাঁদের বাবা মারা গিয়েছিলেন। বাবার শ্রাদ্ধ অনুষ্ঠানে যোগ দিতে তাঁরা ৯ ভাইবোন বাড়িতে সমবেত হয়েছিলেন। ৮ ফেব্রুয়ারি সেখানে একটি মন্দিরে ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান শেষে হেঁটে বাড়িতে আসার জন্য সড়কের পাশে দাঁড়িয়েছিলেন ভাইবোনেরা। এ সময় পিকআপের ধাক্কায় ঘটনাস্থলেই একসঙ্গে চারজনের মৃত্যু হয়।

দুর্ঘটনার পর রক্তিম ও তাঁর ভাই প্লাবনকে উন্নত চিকিৎসার জন্য চট্টগ্রাম পাঠিয়ে দেওয়া হয়। প্লাবন গতকাল বৃহস্পতিবার চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে কিছুটা সুস্থ হয়ে বাড়িতে ফিরেছেন। রক্তিমের দুই পায়ের হাড়, পাঁজরের হাড়, গলার হাড় ভেঙে গেছে। এ ছাড়া মাথায় আঘাত রয়েছে।

রক্তিমকে প্রথমে চট্টগ্রামের একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল। সেখান থেকে বুধবার তাঁকে চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের আইসিইউয়ে ভর্তি করা হয়। বর্তমানে তাঁকে লাইফ সাপোর্টে রাখা হয়েছে।

রক্তিমের চিকিৎসা পরিকল্পনা নিয়ে গতকাল মেডিকেল বোর্ড বসেছিল। মেডিসিন বিভাগ, আইসিইউ বিভাগ, নিউরো মেডিসিন, অর্থোপেডিক ও রেসপেরিটরি মেডিসিন মিলে রক্তিমের সমন্বিত চিকিৎসা চলছে।

জেনারেল হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের জ্যেষ্ঠ কনসালট্যান্ট মো. আবদুর রব প্রথম আলোকে বলেন, পাঁচটি বিভাগের সমন্বয়ে রক্তিমের চিকিৎসা চলছে। তাঁর মাথায় কিছুটা রক্ত জমাট বেঁধে আছে। এ ছাড়া ফুসফুসে পানি আছে। ফুসফুসের পানি অপসারণের ব্যবস্থা করা হয়েছে। তবে তাঁর স্যাচুরেশন ও ব্রিদিং ভালো আছে। জ্ঞান ফিরলে অন্যান্য চিকিৎসা আস্তে আস্তে শুরু করা হবে।

আজ শুক্রবার দুপুরে দেখা যায়, মুখে অক্সিজেন মাস্ক লাগানো। মেশিনে শ্বাসপ্রশ্বাসের প্যারামিটার ওঠানামা করছে। স্ত্রী সুমনা শর্মা কিছুক্ষণ শয্যার পাশে বসেন। আবার কিছুক্ষণ বাইরের চেয়ারে গিয়ে অপেক্ষা করেন। তাঁর চোখেমুখে অন্ধকার। অন্যান্য স্বজনও আসা–যাওয়া করছেন হাসপাতালে। দুপুরে রক্তিমের একমাত্র ছেলে চার বছরের ঋদ্ধিও এসেছিল হাসপাতালে।

সুমনা বলেন, ‘জ্ঞান ফেরে না। শ্বাসপ্রশ্বাস কখনো কমে, কখনো বাড়ে। এত বড় বিপদ কেন ভগবান আমাদের দিল, জানি না। আমি শুধু স্বামীর প্রাণটা চাই। একটু সুস্থ হয়ে উঠুক।’

সরকারি হাসপাতালে থাকলেও প্রতিদিন ওষুধপত্রসহ চিকিৎসা বাবদ অনেক টাকা খরচ হচ্ছে। কক্সবাজারের রামু উপজেলায় ছোট একটা দোকান ছিল রক্তিমের। যৌথ পরিবারে তাঁরা বসবাস করতেন।

সুমনা বলেন, ‘আমরা নিঃশেষ হয়ে গেছি। পাঁচজন জলজ্যান্ত মানুষ চলে গেছে। আর দুই ভাইও আহত। এখন তাদের বাঁচানোর জন্য আমরা সাহায্য চাই। একটু সাহায্য আশা করছি সবার।’

Related posts

করোনা রোধে নতুন কৌশল পোশাক কারখানায়

News Desk

করোনা সনাক্ত ১৫০৪ প্রাণহানী আরও ২৬ জনের

News Desk

করোনায় সবচেয়ে বেশি মৃত্যু খুলনা-রাজশাহীতে

News Desk

Leave a Comment