মহামারীর বিপর্যয় কাটিয়ে উঠেছে যুক্তরাষ্ট্র। ২০২০ সালের শেষ দিক থেকেই পুনরুদ্ধার হতে থাকে বিশ্বের বৃহত্তম অর্থনীতি। তবে মহামারীর শুরু থেকেই চলমান সরবরাহ ব্যবস্থার বাধা সবকিছুর দাম বাড়িয়ে দেয়। পাশাপাশি তুমুল ভোক্তা চাহিদায় ত্বরান্বিত হয় মূল্যস্ফীতির পারদ। এ অবস্থায় চলতি বছরের জানুয়ারিতে ভোক্তামূল্য আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ৭ দশমিক ৫ শতাংশ বেড়েছে। এ হার গত চার দশকের মধ্যে সর্বোচ্চ। ক্রমবর্ধমান এ মূল্যস্ফীতি কেন্দ্রীয় ব্যাংকের আগামী মাসে সুদহার বাড়ানোর সিদ্ধান্তকে ত্বরান্বিত করছে। খবর এপি।
যুক্তরাষ্ট্রের শ্রম বিভাগ জানিয়েছে, জানুয়ারিতে বার্ষিক মূল্যস্ফীতি বাড়ার হার ১৯৮২ সালের সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছেছে। গত ডিসেম্বরের তুলনায় জানুয়ারিতে পণ্যের মূল্য দশমিক ৬ শতাংশ বেড়েছে। মাসভিত্তিক বাড়ার এ হার আগের মাসের মতো হলেও অর্থনীতিবিদদের পূর্বাভাসের চেয়ে বেশি। গত অক্টোবর থেকে নভেম্বর পর্যন্ত পণ্যের দাম বেড়েছে দশমিক ৭ শতাংশ। তারও আগে সেপ্টেম্বর থেকে অক্টোবর পর্যন্ত দাম বাড়ার হার ছিল দশমিক ৯ শতাংশ।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সরবরাহ ও শ্রমের ঘাটতি, কেন্দ্রীয় সরকারের প্রণোদনা, রেকর্ড নিম্ন সুদহার ও শক্তিশালী ভোক্তা ব্যয়ের কারণে মূল্যস্ফীতি লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে। শিগগিরই এ মূল্যস্ফীতি কমারও কোনো লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না।
যুক্তরাষ্ট্রে গত ২০ বছরের মধ্যে মজুরি সবচেয়ে দ্রুতগতিতে বেড়েছে। ফলে উচ্চ শ্রমব্যয় প্রতিষ্ঠানগুলোকে দাম বাড়াতে প্ররোচিত করছে। দেশটির বন্দর ও গুদামগুলো পণ্যজটের মুখোমুখি হয়েছে। গত মাসের এ মূল্যস্ফীতির পরিপ্রেক্ষিতে কিছু অর্থনীতিবিদ বেশি হারে সুদের হার বাড়ানোর পরামর্শ দিচ্ছেন। আগামী মাসে ফেডারেল রিজার্ভ এক-চতুর্থাংশ পয়েন্ট সুদের হার বাড়ানোর পরিকল্পনা করেছিল। তবে এ হার অর্ধ শতাংশীয় পয়েন্ট বাড়ানোর পরামর্শ দিচ্ছেন অর্থনীতিবিদরা।
সেন্ট লুইস ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংকের প্রেসিডেন্ট বুলার্ড বলেন, আমি চাই আগামী জুলাইয়ের মধ্যে বেঞ্চমার্ক স্বল্পমেয়াদি সুদের হার পুরো ১ শতাংশ বাড়াতে।
এভাবে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বন্ধকি ও ক্রেডিট কার্ড থেকে ব্যবসায়িক ঋণে ব্যয় বাড়বে। সবমিলিয়ে ঋণে বাড়তি এ খরচ ভোক্তা ব্যয় ও মূল্যস্ফীতিকে শিথিল করতে পারে। ফেডারেল রিজার্ভের প্রধান জেরোম পাওয়েল ইঙ্গিত দিয়েছেন, চলতি বছর কেন্দ্রীয় ব্যাংক সম্ভবত একাধিকবার বেঞ্চমার্ক স্বল্পমেয়াদি সুদহার বাড়াবে।
জানুয়ারিতে ডিসেম্বরের তুলনায় বিস্তৃত পরিসরে পণ্য ও পরিষেবার দাম বেড়েছে। মহামারীর সরাসরি প্রভাবের বাইরে থাকা পণ্য ও সেবার দামও ত্বরান্বিত হয়েছে। জানুয়ারিতে অ্যাপার্টমেন্টের ভাড়া দশমিক ৫ শতাংশ বেড়েছে। এ হার গত ২০ বছরের মধ্যে সবচেয়ে বেশি। শুধু জানুয়ারিতেই বিদ্যুতের দাম ৪ দশমিক ২ শতাংশ বেড়েছে, যা ১৫ বছরের মধ্যে দ্রুততম বৃদ্ধি। যদিও গত বছরের একই সময়ের তুলনায় এ দাম ১০ দশমিক ৭ শতাংশ বেড়েছে।
গত মাসে গৃহস্থালি আসবাবপত্রের দাম ১ দশমিক ৬ শতাংশ বেড়েছে। এ বাড়ার হার ১৯৬৭ সালে রেকর্ড শুরু হওয়ার পর সর্বোচ্চ। এছাড়া ডিম ও দুগ্ধজাত পণ্যের নেতৃত্বে জানুয়ারিতে খাদ্য ব্যয় দশমিক ৯ শতাংশ লাফিয়েছে। চিপ ঘাটতির কারণে নতুন গাড়ির দামও বেড়েছে। গত মাসের নতুন গাড়ির দাম আগের মাসের তুলনায় অপরিবর্তিত থাকলেও এক বছর আগের তুলনায় ১২ দশমিক ২ শতাংশ বেড়েছে। আর নতুন গাড়ির দাম বাড়ায় ব্যবহূত গাড়ির দামও ত্বরান্বিত হয়েছে। জানুয়ারিতে এক মাসের ব্যবধানে ব্যবহূত গাড়ির দাম বেড়েছে ১ দশমিক ৫ শতাংশ। যদিও এক বছর আগের তুলনায় দাম বাড়ার হার ৪১ শতাংশ।
মার্কিন বিনিয়োগ ব্যাংক ওয়েলস ফার্গোর একজন অর্থনীতিবিদ সারাহ হাউজ বলেন, কিছু ক্ষেত্রে দাম কমার ঘটনাও ঘটেছে। তবে অর্থনীতির বিস্তৃত খাতজুড়ে দাম ঊর্ধ্বমুখী রয়েছে। ক্রমবর্ধমান মূল্যস্ফীতি অনেক মার্কিন নাগরিকের খাদ্য, গ্যাস, ভাড়া, শিশু যত্ন ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় পণ্যে ব্যয় করার সক্ষমতা কমিয়ে দিয়েছে। আরো বিস্তৃতভাবে বললে, মূল্যস্ফীতি অর্থনীতি পুনরুদ্ধারে সবচেয়ে বড় ঝুঁকির কারণ হয়েছে।
তথ্য সূত্র :https://bonikbarta.net/