সংবাদ প্রকাশের জেরে নারায়ণগঞ্জের স্থানীয় দৈনিক ‘সময়ের নারায়ণগঞ্জ’ পত্রিকা অফিসে হামলা চালিয়েছে দুর্বৃত্তরা। আলোচিত তানভীর মুহাম্মদ ত্বকী হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় র্যাবের দেওয়া খসড়া চার্জশিট নিয়ে সংবাদ প্রকাশ করায় এ ঘট্না ঘটেছে বলে জানা গেছে।
শনিবার (১২ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে শহরের চাষাঢ়া প্রেসিডেন্ট রোডের সিরাজ ম্যানশনের চার তলায় এ ঘটনা ঘটে। ওই সময় অফিসে সময়ের নারায়ণগঞ্জের চার সাংবাদিক ছিলেন। এ সময় প্রকাশিত সংবাদের প্রতিবাদ না ছাপালে আগুন দিয়ে পত্রিকা অফিস পুড়ে ফেলার হুমকি দেয় তারা। সেই সঙ্গে সাংবাদিকদের গালিগালাজ ও লাঞ্ছিত করে জিনিসপত্র ভাঙচুর এবং সিসিটিভি ফুটেজ নিয়ে যায়।
অফিসের প্রহরী হাফিজ উদ্দিন বলেন, শতাধিক লোকজন মোটরসাইকেলে মহড়া দিয়ে অফিসের ওপরে উঠতে চায়। বাধা দিতে গেলে আমাকে মেরে ফেলবে বলে হুমকি দিয়ে সবাই ওপরে উঠে যায়। আমি একা তাদের সঙ্গে পারছিলাম না।
ঘটনার সময় অফিসে থাকা সময়ের নারায়ণগঞ্জের সাংবাদিক জয় বলেন, ‘অফিসে ঢুকেই আমাকে শাসানো শুরু করে তারা। সময়ের নারায়ণগঞ্জ পত্রিকায় ‘যা ছিল খসড়া চার্জশিটে’ সংবাদটি কেন প্রকাশ করা হয়েছে তার কৈফিয়ত চায় তারা। বড় ভাই আজমেরী ওসমানকে কেন মাদকসেবী লেখা হয়েছে পত্রিকায় ওই কৈফিয়ত চাওয়া হয়। পরে গালিগালাজ করে তারা। ওই সংবাদের প্রতিবাদ না ছাপালে গুলি করে মেরে ফেলার হুমকি দেওয়া হয়। সংবাদের জন্য ক্ষমা না চাইলে আগুন দিয়ে অফিস পুড়িয়ে দেওয়ার কথা বলে চলে যায় তারা।
অফিসে থাকা সময়ের নারায়ণগঞ্জের স্টাফ রিপোর্টার আরিফ হোসাইন কনক বলেন, ‘দুপুর ১টার দিকে অফিসে ঢুকেই পত্রিকার সাংবাদিকদের গালিগালাজ শুরু করে তারা। গতকাল শুক্রবার (১১ ফেব্রুয়ারি) সময়ের নারায়ণগঞ্জ পত্রিকার লিড নিউজ ছিল ‘যা ছিল খসড়া চার্জশিটে’। এই সংবাদ কেন প্রকাশ করা হয়েছে তার কৈফিয়ত চেয়ে তারা বলতে থাকে, ‘তোরা আজমেরী ওসমানের বিরুদ্ধে নিউজ করিস। কালকের মধ্যে ক্ষমা না চাইলে পত্রিকা অফিস জ্বালিয়ে দেবো।’ তারা প্রায় ১৫ মিনিট অফিসে অবস্থান করেছিল। যাওয়ার সময় অফিসের বিদ্যুৎ সংযোগ বন্ধ করে দেয়। সেই সঙ্গে অফিসের সিসিটিভি ক্যামেরার ডিভাইস খুলে নিয়ে যায়। একটি পিসির হার্ড ডিস্ক নিয়ে গেছে, ক্যামেরা ভাঙচুর করেছে তারা।’
এদিকে, পত্রিকা অফিসে হামলার একটি ভিডিও ফুটেজ পেয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ। ওই ভিডিও ফুটেজ দেখে কয়েকজনকে শনাক্ত করা গেছে। তারা হলেন নাসির, আক্তার নূর, সুমন, সানি, ইসমাইল, আন্নান, কাজল, রুবেল, সিনাফি, রবিন, মনির, লক্ষণ, কৃষ্ণা ও রাতুল। তাদের মধ্যে নাসির ও আক্তার নূর এর আগে একাধিকবার সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের জন্য গ্রেফতার হয়েছিল বলে জানিয়েছে পুলিশ।
এ ব্যাপারে দৈনিক সময়ের নারায়ণগঞ্জের প্রকাশক ও সম্পাদক জাবেদ আহমেদ জুয়েল বলেন, সম্প্রতি তানভীর মুহাম্মদ ত্বকী হত্যার বিষয়টি সর্বত্র আলোচনা হচ্ছে। শুক্রবার র্যাবের খসড়া চার্জশিট নিয়ে একটি সংবাদ প্রকাশ হয়। মূলত ওই খসড়া চার্জশিট র্যাব প্রকাশ করে এবং ত্বকীর বাবা রফিউর রাব্বি গণমাধ্যমকর্মীদের সরবরাহ করে। সেটি আমরা প্রকাশ করেছি। সেখানে আমাদের কোনও বক্তব্য নেই। কিন্তু তারা যেভাবে অফিসে হানা দিয়েছে, এটি ন্যক্কারজনক। তারা অফিসে ভাঙচুর করেছে, সাংবাদিকদের লাঞ্ছিত করেছে। সিসি ক্যামেরা ও পিসির হার্ড ডিস্ক নিয়ে গেছে।
খবর পেয়ে অফিস পরিদর্শন করা নারায়ণগঞ্জ সদর মডেল থানার পরিদর্শক (তদন্ত) আজিজুল ইসলাম বলেন, ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে আলামত সংগ্রহ, অফিসের লোকজনদের সঙ্গে থাকা ভিডিও ফুটেজ দেখে হামলাকারীদের শনাক্তের চেষ্টা চলছে। তাদের গ্রেফতার করা হবে।
নারায়ণগঞ্জের পুলিশ সুপার জায়েদুল আলম বলেন, বিষয়টি শুনেছি। এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত দুই জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।