কুমিল্লা শিক্ষা বোর্ডে এবারের এইচএসসি পরীক্ষায় পাসের হার ও জিপিএ-৫–এ এগিয়ে মেয়েরা। গতবারের চেয়ে এবার জিপিএ-৫ বেড়েছে। এ বছর ৯৭টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সব শিক্ষার্থী পাস করেছেন। পাসের হার শূন্য, এমন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নেই। সারা দেশের নয়টি সাধারণ শিক্ষা বোর্ডের মধ্যে পাসের হারে দ্বিতীয় কুমিল্লা বোর্ড।
এ বছর ২ দশমিক ৫১ শতাংশ শিক্ষার্থী অকৃতকার্য হয়েছেন। করোনায় বিশেষ পরিস্থিতি বিবেচনায় এবার সীমিত পরিসরে কয়েকটি বিষয়ে (বিভাগভিত্তিক) এইচএসসি পরীক্ষা হয়। এতে পাসের হার ও জিপিএ-৫ লাফিয়ে লাফিয়ে বেড়েছে। ২০২১ সালে এসএসসি পরীক্ষায়ও মেয়েরা পাসের হার ও জিপিএ-৫–এ এগিয়ে ছিলেন। রোববার দুপুরে ওই ফল ঘোষণা করা হয়।
কুমিল্লা শিক্ষা বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, ২০২১ সালের এইচএসসি পরীক্ষায় কুমিল্লা শিক্ষা বোর্ডের অধিভুক্ত ছয় জেলার ৪০৭টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ১ লাখ ১৪ হাজার ৫৫৯ জন শিক্ষার্থী অংশ নেন। এর মধ্যে পাস করেছেন ১ লাখ ১১ হাজার ৬৮০ জন। পাসের হার ৯৭ দশমিক ৪৯ শতাংশ। ছেলেদের পাসের হার ৯৭ শতাংশ, মেয়েদের পাসের হার ৯৭ দশমিক ৮৯ শতাংশ। এ বছর অকৃতকার্য হয়েছেন ২ হাজার ৮৭৯ জন। মোট পরীক্ষার্থীর ২ দশমিক ৫১ শতাংশ শিক্ষার্থী অকৃতকার্য হয়েছেন। পুরো বোর্ডে জিপিএ-৫ পেয়েছেন ১৪ হাজার ১৫৩ জন। এর মধ্যে ছেলে ৫ হাজার ৩৯৬ জন ও মেয়ে ৮ হাজার ৭৫৭ জন। বিজ্ঞান বিভাগে জিপিএ-৫ প্রাপ্ত ৯ হাজার ৯৭২ জনের মধ্যে ৫ হাজার ৫৭২ জন মেয়ে, মানবিকে ২ হাজার ৬৬৪ জনের মধ্যে ২ হাজার ১৫৬ জন মেয়ে, ব্যবসায় শিক্ষা শাখায় ১ হাজার ৫১৭ জনের মধ্যে ১ হাজার ২৯ জন মেয়ে।
পাসের হারে ঊর্ধ্বমুখী মানবিক বিভাগ
এ বছর বিজ্ঞানে পাসের হার ৯৭ দশমিক ১১। ছেলেদের পাসের হার ৯৭ দশমিক শূন্য ২, মেয়েদের ৯৭ দশমিক ১১। মানবিকে পাসের হার ৯৮ দশমিক শূন্য ৬। ছেলেদের পাসের হার ৯৭ দশমিক ২৬, মেয়েদের পাসের হার ৯৮ দশমিক ৪৯। ব্যবসায় শিক্ষা শাখায় পাসের হার ৯৬ দশমিক ৮৭। ছেলেদের পাসের হার ৯৭, মেয়েদের ৯৭ দশমিক শূন্য ৪। তিন বিভাগের মধ্যে মানবিক বিভাগের ফল সবার শীর্ষে।
জানতে চাইলে কুমিল্লার লাকসাম নওয়াব ফয়জুন্নেছা সরকারি কলেজের উপাধ্যক্ষ মিতা সফিনাজ বলেন, ‘মানবিক বিভাগে বরাবরই প্রত্যাশিত ফল হয় না। এবার বিজ্ঞান ও ব্যবসায় শিক্ষা শাখাকে ছাড়িয়ে গেছে মানবিকের শিক্ষার্থীরা। কেবল নৈর্বাচনিক বিষয়ে পরীক্ষা হওয়ায় পাসের হার ও জিপিএ-৫ বেড়েছে।’
উপজেলা ও জেলাভিত্তিক ফল বিশ্লেষণ
ছয় জেলার মধ্যে কুমিল্লা জেলা পাসের হার ও জিপিএ-৫ শীর্ষে। এ জেলার ১৭ উপজেলার ১৫৬টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে জিপিএ-৫ পেয়েছেন ৭ হাজার ৪৪৮ জন। পাসের হার ৯৮ দশমিক ৩২। এ ছাড়া উপজেলার মধ্যে চাঁদপুরের হাইমচরের পাসের হার শীর্ষে। এ উপজেলার দুটি কলেজের ৬৪০ জন এইচএসসি পরীক্ষার্থীর মধ্যে ৬৩৮ জন পাস করেছেন। পাসের হার ৯৯ দশমিক ৬৯। জিপিএ-৫ পেয়েছেন ৫৬ জন। শতভাগ পাসের হারে সেরা ২০টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মধ্যে ১৮টি বেসরকারি ও ২টি সরকারি কলেজ রয়েছে। কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজ থেকে এবার ১ হাজার ২৫৫ জন পরীক্ষা দিয়ে ১ হাজার ২৪৭ জন পাস করেছেন। পাসের হার ৯৯ দশমিক ৩৬। জিপিএ-৫ পেয়েছেন ৯৩১ জন।
কলেজের অধ্যক্ষ আবু জাফর খান বলেন, ‘ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজ এবার প্রত্যাশিত ফল করেছে। সার্বিক ফলে খুশি আমি।’
বোর্ডের উপপরীক্ষা নিয়ন্ত্রক (উচ্চমাধ্যমিক) মো. হাবিবুর রহমান বলেন, করোনায় বিশেষ পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে এবার এসএসসি পরীক্ষা হয়। গত বছরের ২ ডিসেম্বর থেকে ৩০ ডিসেম্বর পর্যন্ত বিভাগভিত্তিক পরীক্ষা নেওয়া হয়। এর সঙ্গে জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট (জেএসসি) ও মাধ্যমিক স্কুল সার্টিফিকেট (এসএসসি) পরীক্ষার অন্যান্য বিষয়ের ফল সন্নিবেশ করে এইচএসসির ফল প্রকাশ করা হয়। ফলে পাসের হার ও জিপিএ-৫ বেড়েছে।
কুমিল্লা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান মো. আবদুস ছালাম বলেন, ‘এ ফলাফলে সন্তুষ্ট আমি। পুরো বোর্ডের সব কলেজের ফল ভালো হয়েছে।’