Image default
জানা অজানা

জিপিএ ৫ ও পাসে এগিয়ে মেয়েরা

মহামারি নভেল করোনাভাইরাসের (কোভিড-১৯) কারণে বিলম্বিত শিক্ষাবর্ষ শেষে সংক্ষিপ্ত সিলেবাসে হওয়া উচ্চমাধ্যমিক ও সমমানের পরীক্ষায় পাস করেছে ৯৫ দশমিক ২৬ শতাংশ শিক্ষার্থী। এদের মধ্যে ১ লাখ ৮৯ হাজার ১৬৯ জন জিপিএ ৫ পেয়েছে, যা উত্তীর্ণের সংখ্যার ১৩.৭৯ শতাংশ। এবারও ছাত্রদের পেছনে ফেলে এগিয়ে গেলেন ছাত্রীরা। শুধু পাসের হারেই নয়, ফলের সর্বোচ্চ সূচক জিপিএ ৫ পাওয়ার ক্ষেত্রেও মেয়েরা এগিয়ে আছেন।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গতকাল রবিবার সকালে গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে ২০২১ সালের উচ্চমাধ্যমিকের ফল প্রকাশ করেন। পরে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটে সংবাদ সম্মেলন করে ফলের বিস্তারিত তুলে ধরেন শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি।

ছাত্রছাত্রীদের ফলের তথ্য পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, এবার ৯টি সাধারণ শিক্ষা বোর্ডের অধীন এইচএসসি পরীক্ষায় ছাত্রীদের পাসের হার ৯৬ দশমিক ৬৭ শতাংশ, যা গড় পাসের হারের চেয়েও বেশি। অন্যদিকে ছাত্রদের পাসের হার ৯৪ দশমিক ৪৪ শতাংশ, যা গড় পাসের হারের চেয়ে কম। এ বছর ছাত্রীদের মধ্যে জিপিএ ৫ পেয়েছে ১ লাখ ২ হাজার ৪০৬ জন। আর ছাত্রদের মধ্যে ৮৬ হাজার ৭৬৩ জন জিপিএ ৫ পেয়েছে। ছাত্রদের চেয়ে ১৫ হাজার ৬৪৩ জন বেশি ছাত্রী পূর্ণাঙ্গ জিপিএ পেয়েছে।

ক্যাডেট কলেজ : ১২টি ক্যাডেট কলেজ থেকে ৬২১ জন পরীক্ষার্থীর মধ্যে ৬২১ জনই অর্থাৎ শতভাগ জিপিএ-৫ পেয়ে অসাধারণ সাফল্য অর্জন করেছে। গতকাল এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানিয়েছে আইএসপিআর।

মাদরাসা ও কারিগরি : শিক্ষা বোর্ডে এবার পাসের হার ৯৫ দশমিক ৪৯ শতাংশ। পরীক্ষার্থী ছিলেন ১ লাখ ১৩ হাজার ১৬৭ জন। পাস করেছেন ১ লাখ ১ হাজার ৭৬৮ জন। কারিগরিতে পাসের হার ৯২ দশমিক ৮৫ শতাংশ। পরীক্ষার্থী ছিলেন ১ লাখ ৪৯ হাজার ৩৯৭ জন। উত্তীর্ণ হয়েছেন ১ লাখ ৩৮ হাজার ৭০৮ জন।

ফল পুনঃনিরীক্ষণ : প্রত্যাশিত ফল না পেলে আজ (গতকাল) থেকে ২০ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত শিক্ষার্থীরা ফল পুনঃনিরীক্ষণের আবেদন করতে পারবে। পুনঃনিরীক্ষণ আবেদনের প্রক্রিয়া শিক্ষা বোর্ডের ওয়েবসাইট ও টেলিটকের ওয়েবসাইটে জানা যাবে।

বোর্ডওয়ারি পাসের হার

যশোর : এবার দেশসেরা হয়েছে যশোর শিক্ষা বোর্ড। এ বোর্ডে পাসের হার ৯৮.১১ শতাংশ। জিপিএ ৫ পেয়েছেন ২০ হাজার ৮৭৮ জন। এ বোর্ড থেকে খুলনা বিভাগের ১০ জেলার ২২৭টি কলেজ থেকে ৫৭৮টি কেন্দ্রে পরীক্ষায় অংশ নেয় ১ লাখ ৩১ হাজার ৫০০ জন শিক্ষার্থী। এরই মধ্যে বিজ্ঞান বিভাগ থেকে ১৯ হাজার ৩৬০, মানবিক বিভাগে ৯৪ হাজার ৫০০ এবং ব্যবসা শিক্ষা বিভাগ থেকে ১৭ হাজার ৬৪০ জন শিক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশ নেন। ছেলে শিক্ষার্থী ছিলেন ৬৭ হাজার ৪৪৭ জন। আর মেয়ে শিক্ষার্থী হচ্ছে ৬৪ হাজার ৫৩ জন।

উভয়ের উত্তীর্ণের সংখ্যা হচ্ছে ১ লাখ ২৮ হাজার ১৬৩ জন। এর মধ্যে ছাত্র ৬৫ হাজার ৭০৬ জন এবং ছাত্রী ৬২ হাজার ৪৫৭ জন। জিপিএ ৫ পেয়েছে ২০ হাজার ৮৭৮ জন। এরই মধ্যে জিপিএ ৫ পেয়েছেন ১২ হাজার ১৭১ মেয়ে শিক্ষার্থী ও ৮ হাজার ৭০৭ ছেলে। এ বোর্ডে এবার ১১৬ কলেজে শতভাগ পাস করেছে। সবাই ফেল করেছে- এমন কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নেই। এবারের পরীক্ষায় বহিষ্কৃত হয়েছিল মাত্র তিনজন।

কুমিল্লা : দ্বিতীয় অবস্থানে আছে কুমিল্লা। এ বোর্ডে ৯৭ দশমিক ৪৯ শতাংশ শিক্ষার্থী পাস করেছেন। ১ লাখ ১৪ হাজার ৫৫৯ জন শিক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশ নেন কুমিল্লা বোর্ড থেকে। এর মধ্যে পাস করেছেন ১ লাখ ১১ হাজার ৬৮০। জিপিএ ৫ পেয়েছে ১৪ হাজার ১৫৩ জন শিক্ষার্থী।

রাজশাহী ব্যুরো : এবার পাসের হারে রেকর্ড ভেঙেছে রাজশাহী শিক্ষা বোর্ড। এ বোর্ডে পাসের হার ৯৭ দশমিক ২৯। জিপিএ ৫ পেয়েছে ৩২ হাজার ৮০০ জন শিক্ষার্থী। পাসের হার এবং জিপিএ ৫ প্রাপ্তিতে ছেলেদের তুলনায় মেয়েরা ঈর্ষণীয় ফল করেছে। গতকাল রবিবার দুপুর ১২টার দিকে এ ফল ঘোষণা করা হয়। এবার ছাত্রদের পাসের হারের ৯৬ দশমিক ৫১ শতাংশ এবং ছাত্রীদের ৯৮ দশমমিক ৫১ শতাংশ। জিপিএ ৫ পেয়েছেন ৩২ হাজার ৮০০ জন শিক্ষার্থী। এর মধ্যে ১৪ হাজার ৪০০ জন ছাত্র এবং ১৮ হাজার ৪০০ জন ছাত্রী।

রাজশাহী শিক্ষা বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক আরিফুল ইসলাম জানান, এবার ২০০টি কেন্দ্রের মাধ্যমে ৮ জেলার ৭৫৯টি কলেজের পরীক্ষার্থী ছিলেন ১ লাখ ৫০ হাজার ৯১৮ জন। এর মধ্যে পরীক্ষায় অংশ নেন ১ লাখ ৪৭ হজার ৪৮৪ জন। এর মধ্যে ছাত্র ৭৭ হাজার ৭২৯ এবং ছাত্রীর সংখ্যা ৬৯ হাজার ৭৫৫। এর মধ্যে শতভাগ পাস করেছে এমন কলেজের সংখ্যা রয়েছে ১৬২টি। পাসের হার ‘শূন্য’ এমন কোনো কলেজ পাওয়া যায়নি।

ঢাকা : পাসের হারে রাজশাহীর পরেই ঢাকা বোর্ডের অবস্থান। এ বোর্ডে এবার উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষায় পাসের হার ৯৬ দশমিক ২০ শতাংশ। পরীক্ষার্থী ছিলেন ৩ লাখ ১৫ হাজার ৯৫৭ জন। এর মধ্যে উত্তীর্ণ হয়েছেন ২ লাখ ৯৮ হাজার ৯৭৯ জন।

বরিশাল : পঞ্চম অবস্থানে রয়েছে বরিশালে বোর্ড। বরিশাল বোর্ডে পাসের হার ৯৫ দশমিক ৭৬ শতাংশ। এ বছর পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিলেন ৬৬ হাজার ৭৯৬ জন শিক্ষার্থী। এর মধ্যে ছাত্র ৩২ হাজার ৫৭ জন এবং ছাত্রী ৩৪ হাজার ৭৩৯ জন। এরই মধ্যে পাস করেছেন ৬৩ হাজার ৯৬৪ জন। এর মধ্যে ছাত্র ৩০ হাজার ২৮৯ জন আর ছাত্রী ৩৩ হাজার ৬৭৫ জন।

ময়মনসিংহ : এ বোর্ডে পাসের হার ৯৫.৭১ শতাংশ। আর জিপিএ ৫ পাওয়া শিক্ষার্থীর সংখ্যা ৭ হাজার ৬৮৭ জন। গত বছর জিপিএ ৫ পাওয়া শিক্ষার্থীর সংখ্যা ছিল ১০ হাজার ৪০ জন।

ময়মনসিংহ মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক মো. সামছুল ইসলাম জানান, চার জেলায় ৬৯ হাজার ২১৭ জন পরীক্ষার্থীর মধ্যে পাস করেছে ৬৬ হাজার ২৫০ জন। এর মধ্যে জিপিএ ৫ পেয়েছে ৭ হাজার ৬৮৭ হাজার ৪০ জন শিক্ষার্থী। বিজ্ঞান শাখা থেকে সর্বোচ্চ গ্রেড জিপিএ ৫ পেয়েছেন ৫ হাজার ৫৪২ জন, মানবিক শাখা থেকে ১৯৮৬ জন ও ব্যবসায় শিক্ষা শাখার ১৫৯ জন শিক্ষার্থী। এ বোর্ডে পাসের হার এবং জিপিএ ৫ প্রাপ্তিতে ছেলেদের চেয়ে এগিয়ে আছে মেয়েরা। ৩১ হাজার ৭৮৫ শিক্ষার্থী পাস করেছে, পাসের হার ৯৫ দশমিক ৪১ শতাংশ। পাস করা ছাত্রীর সংখ্যা ৩৪ হাজার ৪৬৫ জন, পাসের হার ৯৬ দশমিক ৯৫ শতাংশ।

অন্যদিকে জিপিএ ৫ প্রাপ্ত পরীক্ষার্থীদের মধ্যে ছাত্র সংখ্যা ৩ হাজার ৫৬৪ জন এবং ছাত্রীর সংখ্যা ৪ হাজার ১২৩ জন।

চার জেলার মধ্যে পাসের হারে এগিয়ে নেত্রকোনা। এ জেলায় পাসের হার ৯৬ দশমিক ৪৩ শতাংশ। এ ছাড়া জামালপুর ৯৫ দশমিক ৯৬, ময়মনসিংহ ৯৫ দশমিক ৭০ এবং শেরপুরে পাসের হার ৯৪ দশমিক ৩৪ শতাংশ।

চার জেলার ২৭৫টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশ নেন। শতভাগ কৃতকার্য প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ২৯টি। এ ছাড়া একজনও কৃতকার্য হয়নি এমন প্রতিষ্ঠান রয়েছে একটি।

সিলেট : ৯৪ দশমিক ৮০ শতাংশ পাসের হার নিয়ে সপ্তম অবস্থানে রয়েছে সিলেট শিক্ষা বোর্ড। এ বোর্ডে জিপিএ ৫ পেয়েছেন ৪ হাজার ৭৩১ জন। এই বিভাগে মোট পরীক্ষার্থী ছিলেন ৬৬ হাজার ৬৬১ জন। এর মধ্যে উত্তীর্ণ হয়েছেন ৬৩ হাজার ১৯৩ জন। সিলেট বোর্ডে শতভাগ পাস করেছে ৫৩টি কলেজের শিক্ষার্থীরা।

দিনাজপুর : এ বোর্ডে পাসের হার ৯২ দশমিক ৪৩ শতাংশ। দিনাজপুর বোর্ডে পরীক্ষার্থী ছিলেন ১ লাখ ১৫ হাজার ৯৮৬ জন। এর মধ্যে উত্তীর্ণ হয়েছেন ১ লাখ ৪ হাজার ৪৮৪ জন।

চট্টগ্রাম ব্যুরো : এবার পাসের হার ৮৯ দশমিক ৩৯ শতাংশ। পাসের দিকে ছাত্রীরা এগিয়ে আছেন। ছাত্রী পাসের হার ৯১ দশমিক ৮৫ শতাংশ। ছাত্র পাস করেছে ৮৬ দশমিক ৮৯ শতাংশ। এবার পাসের হারে পিছিয়ে পড়েছে চট্টগ্রাম। গতকাল ঘোষিত ফল অনুযায়ী, জিপিএ ফাইভ পেয়েছেন ১৩ হাজার ৭২০ জন।

চট্টগ্রাম, কক্সবাজার ও তিন পার্বত্য জেলা মিলিয়ে ২৬৭টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিল ৯৯ হাজার ৬২৮ জন শিক্ষার্থী। পাস করেছেন ৮৯ হাজার ৬২ জন। পাসের হারে এবং জিপিএ ফাইভ অর্জনে ছাত্রীরা এগিয়ে আছে। ৯১ দশমিক ৮৫ শতাংশ ছাত্রী ও ৮৬ দশমিক ৮৯ শতাংশ ছাত্র পাস করেছে। জিপিএ ফাইভ পেয়েছে ১৩ হাজার ৭২০ জন পরীক্ষার্থী, এর মধ্যে ছাত্রী ৭ হাজার ৬৭০ জন, ছাত্র ৬ হাজার ৫০ জন। চট্টগ্রাম মহানগরী ও জেলা মিলিয়ে পাসের হার ৯০ দশমিক ৭২ শতাংশ। শুধু মহানগরীতে পাসের হার ৯৩ দশমিক ৬২ শতাংশ। শুধু জেলায় পাসের হার ৮৮ দশমিক ২২ শতাংশ।

বিজ্ঞান বিভাগে পাসের হার ৯২ দশমিক ২০ শতাংশ। মানবিক বিভাগে পাসের হার ৮৮ দশমিক ৭৬ শতাংশ। ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগে পাসের হার ৮৮ দশমিক ৫৮ শতাংশ। কেউ পাস করেনি এমন কলেজের সংখ্যা দুটি। এর মধ্যে চট্টগ্রামের পটিয়া আইডিয়াল কলেজ ও খাগড়াছড়ির মহালছড়ির বৌদ্ধ শিশুঘর হাইস্কুল অ্যান্ড কলেজ।

পিছিয়ে পড়ার কারণ সম্পর্কে জানতে চাইলে চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক নারায়ণ চন্দ্র নাথ বলেন, ‘তিন পার্বত্য জেলার কারণে সামগ্রিক ফলে প্রভাব পড়েছে। এ অঞ্চলে অবকাঠামোগত সংকট আছে। বিষয়ভিত্তিক দক্ষ ও অভিজ্ঞ শিক্ষকেরও সংকট আছে। আবার অনেক দুর্গম অঞ্চলও আছে। সেই বাস্তবতাও আমাদের বিবেচনায় নিতে হবে।’

তথ্য সূত্র : https://www.protidinersangbad.com/

Related posts

ইবনে বতুতার ভ্রমণকাহিনী

News Desk

অধিকাংশ জলদস্যুদের একটি চোখ বন্ধ করে রাখা থাকে কেন?

News Desk

মেডলা: ইউরোপীয়দের কাছে প্রিয় এই ফলটি মিলেছিল শৌচাগারে

News Desk

Leave a Comment