শরীয়তপুরে প্রাণিসম্পদ মেলায় এবার সেরা আকর্ষণ ‘বাদশা’। দৃষ্টিনন্দন রঙ, বিশালাকৃতির বাদশাকে দেখতে ছোট-বড় সব মানুষ ভিড় জমাচ্ছেন। সম্পূর্ণ দেশীয় পদ্ধতিতে পালন করা ষাড়টিকে পরম মমতায় বড় করে তুলেছেন দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী বিলকিছ বেগম।
বাদশার নামের সঙ্গে ভাবভঙ্গি ও আচরণেরও মিল আছে। গরম সহ্য করতে না পারা বাদশা থাকে সব সময় শীতল ও ছায়াযুক্ত স্থানে। খাওয়া-দাওয়ায় মেলে রুচির পরিচয়। স্বাভাবিক খাবারের সঙ্গে তাকে দিতে হয় সবরি কলা, আপেল, মালটা, পেয়ারা, ডাবের পানি ও সেমাই! প্রতিদিন বাদশার এক হাজার দুইশত টাকার খাবার লাগে। মেলায় বাদশার দাম চাওয়া হচ্ছে ১৫ লাখ টাকা।
শরীয়তপুর সদর উপজেলায় চিতলীয় ইউনিয়নের মীরাকান্দি গ্রামের হাজী এসকান্দার বেপারীর মেয়ে বিলকিছ বেগম। কাশিপুর নেছারিয়া মাদ্রাসা থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করেছেন। পড়াশোনা বন্ধ হওয়ার পর নিজেকে স্বাবলম্বী করতে গরু পালন শুরু করেন। আড়াই বছর আগে কুষ্টিয়া থেকে বাদশাকে কেনা হয়। এর পর থেকেই নিজের সন্তানের মতো কালো বাদশাকে লালন পালন শুরু করেন। তার খামারে রানী নামে আরও একটি গরু রয়েছে। রানী বাদশার চেয়ে একটু ছোট।
বাদশার ওজন ৩১ মণ আর রাণীর ওজন ২৩ মণ। তবে সবার নজর কেড়েছে বাদশা। বাদশার উচ্চতা সাড়ে ৬ ফুট, বুকের প্রস্থ প্রায় ১২০ ইঞ্চি ও উচ্চতা ৯৫ ইঞ্চি। আগামী ঈদুল আজহায় বাদশাকে বিক্রি করা হবে। তার দাম হাকানো হয়েছে ১৫ লাখ টাকা। তবে এখন যদি কাঙ্খিত দাম পান তাহলে এটাকে বিক্রি করে দেওয়া হবে।
প্রাণিসম্পদ মেলায় বাদশার নাম শুনার পর সকাল থেকে বিভিন্ন এলাকা হতে বাদশাকে দেখতে আসছেন অনেকে। কেনার আগ্রহ দেখিয়ে করছেন দরদামও।
বিলকিছ বেগম বলেন, আমি আড়াই বছর ধরে খুব যত্ন করে বাদশাকে লালন পালন করেছি। করোনার কারণে গরুর খাবারের দাম বেড়ে গেছে। যার কারণে বাদশার পিছনে আমাদের অনেক টাকা খরচ হয়েছে। আমরা গরিব মানুষ। কষ্ট করে এটাকে লালন পালন করছি। যদি ১৫ লাখ টাকায় আমরা বাদশাকে বিক্রি করতে পারি তাহলে আমাদের লাভ হবে। বাদশাকে আমরা সন্তানের মত লালন পালন করেছি। আমি ছাড়া অন্য কেউ সহজে বাদশা পোষ মানাতে পারে না।
বিলকিছের ভাই জাহিদ বলেন, সম্পূর্ণ দেশীয় পদ্ধতিতে কোনও ওষুধ ব্যবহার না করে তাকে বড় করা হয়েছে। আমরা বাদশাকে হাটে নিয়ে বিক্রি করবো না। তাকে বাড়িতে রেখেই বিক্রি করতে চাই।
সদর উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা তরুণ কুমার রায় বলেন, আজকের মেলায় বাদশাই ছিল মূল আকর্ষণ। একটি মেয়ে নিজেকে স্বাবলম্বী করার জন্য যেভাবে এগিয়ে এসেছে এটাই হলো নারীদের এগিয়ে আসার উৎকৃষ্ট উদাহরণ। এটি লালন পালন করা খুব ব্যয়বহুল। জেলায় ৩১ মণের বাদশাই সবার বড়। আমরা আশা করি বিলকিছ বাদশাকে বিক্রি করে লাভবান হবে। আর যেকানও প্রয়োজনে বাদশার জন্য সহযোগিতার প্রয়োজন হলে আমরা তা করবো।
চিতলীয় ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আব্দুস সালাম হাওলার বলেন, আমার ইউনিয়নে একটি মেয়ে তার সন্তানের মতো গরুটি লালন পালন করছে। এটা শুনে আমি খুব খুশি হয়েছে। আমি চাই এ এলাকায় মহিলারা একটি করে হলেও গরু পালন করুক। তাহলে প্রধানমন্ত্রী যে উদ্যোগ সোনার বাংলা গড়া সেটা সহজেই সম্ভব হবে এবং নিজেকে সহজেই স্বাবলম্বী করে গড়ে তুলতে পারবে। গরু লালন পালন করতে যদি কোনও সহযোগিতা প্রয়োজন হয় সেটা ইউনিয়ন পরিষদ থেকে করার আশ্বাস দেন তিনি।