কলকাতার আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ছাত্র ও ছাত্রনেতা আনিস খানকে ‘হত্যার’ অভিযোগের চার দিনের মাথায় পুলিশের তিন সদস্যকে সাময়িক বহিষ্কার করছে পশ্চিমবঙ্গ সরকার। তাঁদের মধ্যে একজন কর্মকর্তা পদমর্যাদার পুলিশ সদস্য।
অন্যদিকে আনিসের মৃত্যুর ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিদের বিচার চেয়ে কলকাতার রাজপথে বিক্ষোভ ও মিছিল করেছে বিভিন্ন রাজনৈতিক সংগঠন।
পুলিশ সূত্রে জানা যায়, আজ মঙ্গলবার সকালে বহিষ্কার করা পুলিশের চার সদস্যের মধ্যে একজন সাব-ইন্সপেক্টর, একজন কনস্টেবল ও একজন হোমগার্ড। তাঁরা তিনজনই হাওড়া জেলার আমতা থানা এলাকায় কর্মরত ছিলেন। গত শুক্রবার রাতে আনিসের রহস্যজনক মৃত্যুর সময় তাঁরা আনিসের বাসস্থানসংলগ্ন এলাকায় টহল দিচ্ছিলেন। ওই রাতে ছাদ থেকে পড়ে মৃত্যু হয় নাগরিকত্ব নথিভুক্তকরণ বিধি (ন্যাশনাল রেজিস্টার অব সিটিজেনস বা এনআরসি)–বিরোধী আন্দোলনের নেতা আনিস খানের।
আনিসের মৃত্যুর বিষয়টি এখন পশ্চিমবঙ্গের বড় রাজনৈতিক ইস্যুতে পরিণত হয়েছে। ঘটনার তদন্তে বিশেষ তদন্তকারী দল এসআইটি (স্পেশাল ইনভেস্টিগেশন টিম) গঠন করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তবে এ ঘটনায় কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা সিবিআইয়ের (সেন্ট্রাল ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন) তদন্ত দাবি করেছে আনিস খানের পরিবার।
ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি) ছাড়া সব প্রধান দল দাবি করেছে, গত নির্বাচনে তাদের হয়ে কাজ করেছেন আনিস খান। গতকাল সোমবার মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছেন, আনিসের সঙ্গে তাঁর দলের যোগাযোগ ছিল। মমতার দাবি, গত নির্বাচনে তৃণমূল কংগ্রেসের হয়ে কাজ করেছিলেন আনিস।
পাশাপাশি ইন্ডিয়ান সেক্যুলার ফোরামের (আইএসএফ) এমএলএ নওশাদ সিদ্দিকীর দাবি, আনিসকে নেতা হিসেবে সামনে রেখে ছাত্রসংগঠন গঠনের চেষ্টা করছিলেন তাঁরা। অন্যদিকে ভারতের প্রাচীন দল কংগ্রেসের ছাত্রসংগঠন ছাত্র পরিষদের রাজ্য সভাপতি সৌরভ প্রসাদ দাবি করেছেন, ২০১৮ সালের আগস্ট মাস থেকেই আনিস খান তাঁদের দলের সদস্য।
বিষয়টি নিয়ে সবচেয়ে সক্রিয় কমিউনিস্ট পার্টি অব ইন্ডিয়া মার্ক্সিস্টসহ (সিপিআইএম) বাম দলগুলো। সিপিআইএমের ছাত্রসংগঠন এসএফআইয়ের রাজ্য সম্পাদক সৃজন ভট্টাচার্যের দাবি, বিধানসভা নির্বাচনে বামফ্রন্ট ও কংগ্রেসের যে সংযুক্ত মোর্চা গঠিত হয়েছিল; সেই মোর্চার সমাবেশে সভামঞ্চে দেখা গিয়েছিল আনিসকে। সৃজন ভট্টাচার্য বলেন, ‘মুখ্যমন্ত্রী যে দাবি করেছেন, তা সম্পূর্ণ অসত্য। আনিস আমাদের সদস্য ছিলেন।’
আনিসের মৃত্যুর পর এখন পর্যন্ত যে বড় মিছিল হয়েছে, তা করেছে বাম–সমর্থিত রাজনৈতিক সংগঠন। ‘স্টুডেন্টস অ্যাগেইনস্ট ফ্যাসিজম’ নামের সংগঠন একুশে ফেব্রুয়ারির ভাষা দিবস উপলক্ষে একটি বড় মিছিল কলকাতায় বের করে। মিছিলের সামনের সারিতে বাম নেতৃত্বকে একটি বড় ব্যানার হাতে দেখা যায়, সেখানে আনিসের ছবির পাশে লেখা ছিল, ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো…।’ হাজারের বেশি মানুষ মিছিলটিতে অংশ নেন।
এদিকে আনিস খানকে ‘হত্যার’ প্রতিবাদ এবং এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত দোষীদের শাস্তির দাবিতে আজ মিছিল করেছেন আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। আনিস খানের ‘হত্যাকে’ সংখ্যালঘুদের ওপর লাগাতার হামলার একটি নতুন অধ্যায় বলে দাবি করেন আন্দোলনকারীরা। মিছিলটি মধ্য কলকাতায় পৌঁছালে পুলিশ লাঠিচার্জ করে তাঁদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়।