Image default
আন্তর্জাতিক

রাশিয়ার বিরুদ্ধে কি পদক্ষেপ নিলো পশ্চিমারা!

ইউক্রেনে রাশিয়ার আগ্রাসনের পর কঠোর নিষেধাজ্ঞা দেয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে পশ্চিমা দেশগুলো। এর উদ্দেশ্য রাশিয়ার অর্থনীতিকে ক্ষতিগ্রস্ত করা এবং প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের বাহিনীর সামরিক আগ্রাসন বন্ধ করানো। বৃটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন পার্লামেন্টে বলেছেন, তিনি একগাদা পদক্ষেপ নিচ্ছেন। এর মধ্যে রাশিয়ার সব বড় বড় ব্যাংকের সম্পদ জব্দ করা হবে। বৃটেনের আর্থিক ব্যবস্থা থেকে বাইরে রাখা হবে তাদেরকে। এর ফলে ভিটিবি ব্যাংকের সব কিছু পূর্ণাঙ্গভাবে এবং অবিলম্বে জব্দ করা হবে। রাশিয়ার কোম্পানিগুলোকে থামিয়ে দিতে আইন করা হবে। রাষ্ট্রীয় অর্থ সংগ্রহ ও অর্থ ধার করার ক্ষেত্রে বৃটেনের বাজারে তাদেরকে থামিয়ে দেয়া হবে।

নতুন করে রাশিয়ার একশত ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের সম্পদ জব্দ করা হবে। বৃটেনে নিষিদ্ধ করা হবে রাশিয়ার এরোফ্লোট এয়ারলাইনকে। রপ্তানি লাইসেন্স, যেগুলো দ্বৈতভাবে ব্যবহার করা হয়, তা স্থগিত করা হবে। এসব লাইসেন্স সামরিক উদ্দেশ্যে ব্যবহার করা হয়। উচ্চ প্রযুক্তির সরঞ্জাম এবং তেল শোধনের সরঞ্জামাদি রপ্তানি বন্ধ করা হবে। বৃটেনের ব্যাংকের একাউন্টে সীমিত পরিমাণ অর্থ জমা করতে পারবেন রাশিয়ানরা। বরিস জনসন বলেছেন, লন্ডনে অবস্থানকারী ধনীরা কোথাও পালাতে পারবেন না। তিনি আরও বলেছেন, ইউক্রেনে হামলায় ভূমিকার জন্য একই রকম আর্থিক নিষেধাজ্ঞা দেয়া হবে বেলারুশের বিরুদ্ধে।

এরপর বক্তব্য রাখেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। তিনি ঘোষণা করেন, রাশিয়া যুদ্ধকে বেছে নিয়েছে। তাই তাদেরকে এর পরিণতি ভোগ করতে হবে। এর মধ্যে রাশিয়ার বড় চারটি ব্যাংকের সম্পদ জব্দ করা হবে। তারা মার্কিন ডলারে লেনদেন করতে পারবে না। ক্রেমলিনের সঙ্গে যোগাযোগ আছে এমন রাশিয়ান অভিজাতদের বিরুদ্ধেও নিষেধাজ্ঞা দিয়েছেন বাইডেন। যুক্তরাষ্ট্র এবং এর মিত্ররা রাশিয়ার উচ্চ প্রযুত্তি আমদানি অর্ধেকের বেশি কমিয়ে ফেলবে। এর ফলে রাশিয়ার সেনাবাহিনীকে আধুনিকায়ন, জাহাজ নির্মাণ, বিমান নির্মাণ এবং মহাকাশ গবেষণায় পিছিয়ে পড়বে।

ইউরোপিয়ান ইউনিয়নও বৃহস্পতিবার রাশিয়ার বিরুদ্ধে একগাদা নিষেধাজ্ঞায় সম্মতি দিয়েছে। বলা হয়েছে, এতে ব্যাপক এবং ভয়াবহ পরিণতি ভোগ করতে হবে রাশিয়াকে। বিবৃতিতে বলা হয়েছে, এই নিষেধাজ্ঞায় থাকবে রাশিয়ার আর্থিক খাত, জ্বালানি ও পরিবহন খাত, দ্বৈত ব্যবহারের পণ্য, রপ্তানি নিয়ন্ত্রন ও রপ্তানিমুখী অর্থনীতি, ভিসা পলিসি। এ ছাড়া তালিকায় থাকবে রাশিয়ার বিভিন্ন ব্যক্তি।

আগেই ইউক্রেনের দোনেৎস্ক এবং লুহানস্ককে স্বাধীন রাষ্ট্রের স্বীকৃতি দেয়ার কারণে সীমিত পরিসরে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র, বৃটেন, ইইউ এবং অন্যরা। এতে রাশিয়ার কিছু ব্যাংক ও ব্যক্তিকে টার্গেট করা হয়েছে। আর্থিক বাজারে রাশিয়ানদের বাইরে রাখার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। রাশিয়া থেকে জার্মানিতে নর্ড স্ট্রিম ২ গ্যাস পাইপলাইনের অনুমোদন স্থগিত করেছেন জার্মান চ্যান্সেলর ওলাফ শুলজ।

পশ্চিমা দেশগুলো রাশিয়ার বিরুদ্ধে আরও কঠোর নিষেধাজ্ঞা নিচ্ছে। এর মধ্যে থাকবে বিশ্ববাজারে অর্থ স্থানান্তরে ব্যবহৃত সুইফট ব্যবস্থা থেকে রাশিয়াকে বাদ রাখা। এই উদ্যোগ অবিলম্বে কার্যকর করার আহবান জানিয়েছে ইউক্রেন। সুইফট ব্যবস্থায় দ্রুততার সঙ্গে অর্থ স্থানান্তর করা যায়। বিশ্বের ২০০টি দেশে ১১ হাজার আর্থিক প্রতিষ্ঠান এই ব্যবস্থা ব্যবহার করে। রাশিয়াকে এই ব্যবস্থা থেকে বাইরে রাখলে তারা যে তেল এবং গ্যাস রপ্তানি করবে তার পেমেন্ট বা পাওনা হাতে পেতে অনেক বিলম্ব হবে। ২০১২ সালে ইরানের জন্য সুইফট ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়েছিল। ফলে ইরান যে পরিমাণ তেল রপ্তানি করে তার মধ্যে অর্ধেকের পাওনা হারিয়েছে, যা তাদের বৈদেশিক বাণিজ্যের শতকরা প্রায় ৩০ ভাগ।

পক্ষান্তরে রাশিয়ার একজন সিনেটর এর জবাব দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, রাশিয়াকে সুইফট ব্যবহার বন্ধ করে দেয়া হলে ইউরোপে তেল ও গ্যাস সরবরাহও বন্ধ করে দিতে পারে রাশিয়া। এক্ষেত্রে রাশিয়া অন্য ক্রেতার দিকে দৃষ্টি দেবে। পাওনা আদায় করবে অন্য ব্যবস্থায়- যেমন, চীনের ক্রস-বর্ডার ইন্টার‌্যাংক পেমেন্ট সিস্টেমে।

Related posts

রাষ্ট্রপতির সিংহাসনে দ্রৌপদী না যশবন্ত, ভোট গণনা শুরু

News Desk

গোপনে রাশিয়ার জ্বালানি কিনছে ব্রিটেন!

News Desk

মহামারির মধ্যেও বাড়ছে ধনীর সংখ্যা

News Desk

Leave a Comment