স্বাধীনতার ৫০ বছর পরও দিনাজপুরের খানসামা উপজেলার বধ্যভূমিটি সংরক্ষণ করা হয়নি। অস্থায়ী বাঁশের বেড়ায় শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধাঞ্জলি অর্পণ করছেন শহীদ পরিবার ও স্থানীয়রা।
শুক্রবার (২৫ মার্চ) সকালে গত আট বছরের ধারাবাহিকতায় খানসামা ডিগ্রি কলেজের আয়োজনে ইছামতী নদীর তীরে অসংরক্ষিত বধ্যভূমিতে গণহত্যা দিবসে শহীদদের স্মরণে পুষ্পস্তবক অর্পণ করা হয়। এ সময় অস্থায়ী বাঁশের বেড়ার স্মৃতিস্তম্ভে শহীদ পরিবারের সদস্যরা, খানসামা ডিগ্রি কলেজ ও উপজেলা ছাত্রলীগের নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
খানসামা ডিগ্রি কলেজের প্রভাষক রশিদুল ইসলামের সঞ্চালনায় স্মরণ সভায় বক্তব্য রাখেন খানসামা ডিগ্রি কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ সাইফুল ইসলাম, শহীদ অমিয় কুমার গুহের দৌহিত্র ও উপজেলা ছাত্রলীগের আহ্বায়ক রাকেশ গুহ, উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি এরশাদ জামানসহ অন্যরা।
স্থানীয়রা জানায়, সংগ্রাম কমিটির সদস্য ও মুক্তিবাহিনীর অন্যতম সদস্য বাবু অমিয় কুমার গুহকে ১৯৭১ সালের ১ জুন গভীর রাতে তৎকালীন আওয়ামী লীগ নেতা অ্যাডভোকেট জহির উদ্দিনের বাড়ি থেকে আটক করে পাকিস্তানি দালালরা। এরপর খানসামা থানায় বন্দি করে রাখে। পরদিন পাকস্তানি বাহিনীকে খবর দিয়ে বাবু অমিয় কুমার গুহকে পাকিস্তানী সেনাবাহিনীর হাতে তুলে দেয় রাজাকাররা। এরপর সাইকেলে রশি দিয়ে বেঁধে নিয়ে পার্শ্ববর্তী নীলফামারী ও খানসামা উপজেলার সংযোগস্থল পুলহাট নামক স্থানে ইছামতী নদীর তীরে গুলি করে ও বেয়োনেট দিয়ে খুঁচিয়ে মৃত্যু নিশ্চিত করে।
একই স্থানে আহত বীর মুক্তিযোদ্ধাদের চিকিৎসা সেবা দেওয়া টেডি ডাক্তার ও মুক্তিযোদ্ধাদের সহযোগী খ্ট্টুু মিয়াকে হত্যা করে পাকিস্তানি বাহিনী। পরে স্থানীয় তরনী কান্ত ও নজরুল ইসলামসহ অনেকে তাদের লাশ নদী থেকে তুলে কবর দেন।
কিন্তু স্বাধীনতার ৫০ বছরেও এসব পরিবার ‘শহীদ পরিবার’ হিসেবে সরকারিভাবে স্বীকৃতি পায়নি। শুধু অমিয় কুমার গুহের নামে একটি রাস্তার নামকরণ ও উপজেলা প্রশাসন আয়োজিত বিভিন্ন দিবসে খেলাধুলার নামকরণ ছাড়া আজ পর্যন্ত কোনও সাহায্য পায়নি।
এদিকে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতেও গণকবরের তালিকা ও সংরক্ষণ, শহীদ পরিবারের তালিকা তৈরি ও রাজাকারের তালিকা প্রকাশ না হওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন বীর মুক্তিযোদ্ধা ও শহীদ পরিবারের সদস্যরা।
গণকবরের প্রত্যক্ষদর্শী ও স্থানীয় বাসিন্দা নজরুল ইসলাম বলেন, অমানবিক নির্যাতন করে অমিয় বাবুসহ কয়েকজনকে এখানে হত্যা করা হয়। সেই স্মৃতি আজও আমাদের চোখে ভাসে। কিন্তু এই স্থান সংরক্ষণে কোনও উদ্যোগ নেই, যা আমাদের জন্য কষ্টদায়ক। জায়গাটি সংরক্ষণ করা না হলে কবরগুলো নদীতে বিলীন হয়ে যাবে।
শহীদ অমিয় কুমার গুহের মেয়ের ছেলে ও উপজেলা ছাত্রলীগের আহ্বায়ক রাকেশ গুহ বলেন, স্বাধীনতা ও আওয়ামী লীগের স্বার্থে আমার দাদু মৃত্যুর আগ পর্যন্ত আপস করেননি। এর ফলে তার এই করুণ মৃত্যু হয়েছে। কিন্তু বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার বীর মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য অনেক কিছু করলেও আমরা আজও সরকারি তালিকভুক্ত হইনি এবং গণকবর সংরক্ষণ করা হয়নি। তাই গণকবর সংরক্ষণ ও শহীদ পরিবার হিসেবে তালিকা অন্তর্ভুক্ত করতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সংশ্লিষ্টদের প্রতি অনুরোধ রইলো।
খানসামা ডিগ্রি কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি সাইফুল ইসলাম বলেন, শহীদের কারণেই আমরা বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে স্বাধীন বাংলাদেশ পেয়েছি। তাই তাদের স্মৃতি ধরে রাখতে গণকবর সংরক্ষণের দাবি জানাচ্ছি।