শীতলক্ষ্যা নদীতে কার্গো জাহাজের ধাক্কায় লঞ্চডুবির ঘটনার পর নারায়ণগঞ্জ থেকে লঞ্চ চলাচল বন্ধ করে দিয়েছে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ)। এতে ৭০টি লঞ্চের মালিক ও শ্রমিকরা বেকার হয়ে পড়েছেন। দুর্ঘটনার চার দিন পর নারায়ণগঞ্জ-মুন্সীগঞ্জ নৌপথে এসটি শহীদ আব্দুর রব সেরনিয়াবাত নামে সি-ট্রাক চালু করা হয়। এর একদিন পর নারায়ণগঞ্জ-চাঁদপুর নৌপথে ঢাকা থেকে ‘এমভি নিউ আরিফ’ নামে দোতলা লঞ্চ চালু করা হয়েছে।
তবে নারায়ণগঞ্জের ছোট লঞ্চগুলো ঝুঁকিপূর্ণ বলে চলাচলের অনুমতি দেয়নি বিআইডব্লিউটিএ। এবার নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরীও একই কথা বলেছেন। তিনি বলেছেন, ‘এখানে (নারায়ণগঞ্জের নৌপথে) চলাচল করা ছোট লঞ্চগুলো নিরাপদ নয়। এজন্য লঞ্চগুলো তুলে দেওয়ার সুপারিশ করেছিলাম।’
মঙ্গলবার (২৯ মার্চ) নারায়ণগঞ্জের বন্দরে কর্ণফুলী শিপ বিল্ডার্স লিমিটেডে বিআইডব্লিউটিএ’র জন্য চারটি ‘কাটার সাকশন ড্রেজার’ এবং মোংলা বন্দরের জন্য একটি ‘বয়া লেয়িং জাহাজ’ নির্মাণকাজের উদ্বোধন শেষে এসব কথা বলেন প্রতিমন্ত্রী।
খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ‘প্রতি বছরই নৌযান চালকদের সঙ্গে আমরা আলোচনা ও বৈঠক করি। বারবার পরামর্শ দেওয়ার পরও নির্দেশনা অমান্য করায় দুর্ঘটনা ঘটছে।’
ছোট লঞ্চগুলো বন্ধের সুপারিশের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আমরা সুপারিশ করেছিলাম ছোট লঞ্চগুলো ধারাবাহিকভাবে তুলে দেবো। কারণ এগুলো এখন এই জায়গায় নিরাপদ নয়। কিন্তু দেখা যাচ্ছে সেটা আমরা যথাসময়ে করতে পারিনি। এটার জন্য আমাদের আরেকটি খেসারত দিতে হলো। ভবিষ্যতে এই বিধিনিষেধগুলো যেন সঠিকভাবে মানা হয়, সেজন্য অধিদফতরকে নির্দেশনা দিয়েছি। নৌপথে দুর্ঘটনা হচ্ছে বা ভবিষ্যতে হতে পারে। কিন্তু আমরা চাই না, অবহেলার কারণে আর কোনও প্রাণহানি হোক।’
তিনি বলেন, ‘জনগণের কথা চিন্তা করেই পদক্ষেপ নিচ্ছি। ছোট লঞ্চ যখন বন্ধ হয়েছে তখন সি-ট্রাক দিয়েছি। আমরা বড় লঞ্চেরও ব্যবস্থা করেছি।’
২০ মার্চ শীতলক্ষ্যা নদীতে কার্গো জাহাজ রূপসী-৯-এর ধাক্কায় যাত্রীবাহী লঞ্চ এমএল আফসারউদ্দিন ডুবে ১০ জনের মৃত্যু হয়। ওই ঘটনার পর থেকে দুর্ঘটনা ও প্রাণহানি এড়াতে নারায়ণগঞ্জ থেকে পাঁচটি নৌপথে লঞ্চ চলাচল বন্ধ করে দেয় বিআইডব্লিউটিএ।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, নারায়ণগঞ্জ কেন্দ্রীয় লঞ্চ টার্মিনাল থেকে সাতটি নৌপথে প্রতিদিন ৭০টি যাত্রীবাহী লঞ্চ চলাচল করে। সাতটি নৌপথ হলো- নারায়ণগঞ্জ-হোমনা উত্তর থানা, নারায়ণগঞ্জ-মতলব থানা, নারায়ণগঞ্জ-চাঁদপুর, নারায়ণগঞ্জ-শরীয়তপুর, নারায়ণগঞ্জ-মুন্সীগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জ-তালতলা ও নারায়ণগঞ্জ-বাঞ্ছারামপুর। তবে তালতলা ও বাঞ্ছারামপুর নৌপথে নাব্যতার কারণে লঞ্চ চলাচল বন্ধ আছে। এসব নৌপথে প্রতিদিন চার থেকে পাঁচ হাজার যাত্রী যাতায়াত করেন।
বিআইডব্লিউটিএ’র নারায়ণগঞ্জ নদী বন্দরের যুগ্ম পরিচালক মাসুদ কামাল বলেন, ‘লঞ্চ বন্ধের পর যাত্রীদের নিরাপত্তার স্বার্থে সি-ট্রাক চালু করা হয়েছে। এই নৌপথে চলাচলকারী লঞ্চগুলো ঝুঁকিপূর্ণ। যে কারণে সি-ট্রাক চালু করা হয়েছে। সি-ট্রাক নারায়ণগঞ্জের লঞ্চগুলোর তুলনায় নিরাপদ।’
বিআইডব্লিউটিএ’র নারায়ণগঞ্জ নদী বন্দরের উপ-পরিচালক (নৌ-নিরাপত্তা ও ট্রাফিক) বাবু লাল বৈদ্য বলেন, বিআইডব্লিউটিএ’র উদ্যোগে শুক্রবার থেকে নারায়ণগঞ্জ-চাঁদপুর নৌপথে লঞ্চ চলাচল শুরু হয়েছে। লঞ্চটি আপার ডেকের। এজন্য ঝুঁকি কম। সানকিং ডেকের লঞ্চ নারায়ণগঞ্জে চলাচল বন্ধ রয়েছে। লঞ্চগুলো ঝুঁকিপূর্ণ। তাই অনুমতি দেওয়া হয়নি।’
বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-চলাচল (যাত্রী পরিবহন) সংস্থা নারায়ণগঞ্জ জোনের সভাপতি মো. বদিউজ্জামান বাদল বলেন, ‘লঞ্চের কাঠের বডিগুলো বদলে স্টিলের বডি করা হয়েছে। তবে সরকারের কোনও সংস্থা আমাদের সহযোগিতা করেনি। সরকারের তরফ থেকে সহযোগিতা পেলে আমরা লঞ্চগুলোকে আধুনিক করতে চাই। কিন্তু কোনও ধরনের নির্দেশনা না দিয়ে হঠাৎ সব ধরনের লঞ্চ চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘নারায়ণগঞ্জ থেকে সাতটি নৌপথে ৭০টি লঞ্চ চলাচল করে। এর মধ্যে দুটি নৌপথ নাব্য সংকটে বন্ধ হয়ে গেছে। বাকি পাঁচটি নৌপথ সচল আছে। প্রতিটি লঞ্চে আট জন করে তিন শতাধিক শ্রমিক কর্মরত রয়েছেন। লঞ্চ চলাচলের অনুমতি না দিলে এসব শ্রমিক বেকার হয়ে পড়বেন। এজন্য আমরা লঞ্চ চলাচলের অনুমতি চাই। সেই সঙ্গে নারায়ণগঞ্জের লঞ্চগুলোকে আধুনিকায়নের জন্য সরকারের সহযোগিতা চাই।’