নদীর মাঝ চরে পানিতে ভেসে আছে পেঁয়াজ। বোরো ধানের জমির ফাঁকে ফাঁকেও পেঁয়াজের গাছ। দেখে মনে হতে পারে কেউ শত্রুতা করে গাছ তুলে নিয়ে ফেলেছে। শত্রুতাতো বটেই, তবে সেটা প্রকৃতির। উজান থেকে নেমে আসা ঢলে তিস্তার বিস্তীর্ণ চরে চাষ করা পেঁয়াজ এখন পানিতে ভেসে বেড়াচ্ছে। জেগে ওঠা চরে স্থানে স্থানে বালিতে পড়ে আছে পেঁয়াজ, কোথাও রসুন। পচন ধরা এসব পেঁয়াজ-রসুনের গন্ধে চরের বাতাস ঝাঁজালো হয়ে উঠেছে। কুড়িগ্রামের রাজারহাট উপজেলার তিস্তার চরের চিত্রটা এখন এমনই।
উজানের ঢলে তিস্তার পানি বৃদ্ধি পেয়ে গত এক সপ্তাহে জেলার রাজারহাট উপজেলার বিদ্যানন্দ ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ডের রামহরি মৌজা, ২ নম্বর ওয়ার্ডের চতুরা মৌজাসহ তৈয়ব খাঁ, মানাবাড়ি এবং তিস্তার মধ্যচরে চাষ করা বোরো ধান, পেঁয়াজ, রসুন ও বাদামসহ বিভিন্ন ফসলি জমি ও চর তলিয়ে গেছে। পানির স্রোতের তোড়ে চরাঞ্চলে আবাদ করা পেঁয়াজ ও রসুন গাছ পানিতে ভেসে গেছে।
এদিকে এক সপ্তাহ ধরে পানিতে নিমজ্জিত থাকা জমির পেঁয়াজ-রসুনে পচন ধরেছে। পানি নামতে শুরু করায় অর্ধপচা পেঁয়াজ জমি থেকে তুলে রোদে শুকানোর চেষ্ট করছেন কেউ কেউ। তিস্তার চরাঞ্চলের বাতাস এখন তাই পচা পেঁয়াজ ও রসুনের গন্ধে ঝাঁজালো হয়ে উঠেছে।
বিদ্যানন্দ ইউনিয়নের মোশাররফ বলেন, গত এক সপ্তাহ আগেও তিস্তার চরে ছিল পেঁয়াজ-রসুন, বাদাম, ধান আর কাউন ক্ষেতের সমারোহ। লাভের আশায় স্থানীয় কৃষকরা তিস্তার চরে প্রতিবছর এসব ফসল চাষ করে থাকেন। কিন্তু এ বছর আকস্মিক উজানের ঢল কৃষকদের আশায় বালি চাপা দিয়েছে। পেঁয়াজ পচে চর জুড়ে এখন ঝাঁজালো গন্ধ।
বিদ্যানন্দের চতুরা মৌজার তিস্তার বিস্তৃর্ণ রামহরি চরে পেঁয়াজের চাষ করেছেন কৃষক হাফিজুর রহমান। প্রায় সাড়ে তিন একর এলাকাজুড়ে তার পেঁয়াজের জমি। নদীর পানিতে প্লাবিত হয়ে পেঁয়াজ ভেসে গিয়ে আর পলি পড়ে জমির সোয়া দুই একর আবাদ নষ্ট হয়েছে।
হাফিজুর বলেন, ‘চর জুড়ে পচা পেঁয়াজের গন্ধ। আমার মুখের কথা বন্ধ হয়া গেইছে।’
কৃষি বিভাগ থেকে পরিদর্শন কিংবা সহায়তা প্রশ্নে তিনি হতাশা প্রকাশ করে বলেন, ‘কেউ আসে নাই, খোঁজও নেয় নাই।’
কালির মেলা চতুরার চরের পেঁয়াজ চাষি আক্তারুজ্জামান, আমিনুল ও ইসমাইলসহ তিস্তার চরের ছোট বড় সব পেঁয়াজ ও বাদাম চাষি এবার লোকসানের মুখে পড়েছেন। আকস্মিক ঢলের বন্যায় তারা হতবিহ্বল।
আক্তারুজ্জামান বলেন,‘ আমরা সব ধ্বংস হয়া গেছে ভাই। সাড়ে তিন একর জায়গায় পেঁয়াজ চাষ করছিলাম। এখনও এক হাঁটু পানির নিচে পেঁয়াজের ক্ষেত। দেড় একর জমির পেঁয়াজ সব পচি গেইছে, নদীর পানিত পেঁয়াজ পচা গন্ধ।’
এদিকে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের দেওয়া তথ্য মতে, চলতি বছর জেলায় প্রায় ১৬২০ হেক্টর জমিতে পেঁয়াজ আবাদ হয়েছে। এর মধ্যে আকস্মিক বন্যায় প্রায় ৪৫ হেক্টর জমির পেঁয়াজ নষ্ট হয়েছে। তবে চাষিদের দাবি অনুযায়ী ক্ষতির পরিমাণ আরও বেশি।
খামার বাড়ির উপ-পরিচালক আব্দুর রশীদ বলেন, ‘নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে প্রায় ২৭৩ হেক্টর জমির পেঁয়াজ, বাদাম, তরমুজ, বোরো ও পাট আক্রান্ত হয়েছে। আসছে আউশ মৌসুমে আমরা এই ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের প্রণোদনায় অন্তর্ভুক্ত করবো।’
পেঁয়াজ প্রশ্নে এই উপ-পরিচালক বলেন, ‘পেঁয়াজতো বাড়িতে রাখলেই পঁচে যায়, আর পানি পেলেতো পচবেই। যারা তুলে নিতে পারবেন তারা হয়তো কিছু পাবে।’