কক্সবাজারে রাখাইন সম্প্রদায়ের জলকেলি উৎসব শুরু হয়েছে। রবিবার (১৭ এপ্রিল) দুপুর ২টার দিকে এ উৎসব উদ্বোধন করা হয়। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা) বিভূতিভূষণ দাশ। এ উপলক্ষে গত কয়েকদিন আগে থেকে বর্ণিল রূপে সেজেছে রাখাইন পল্লীগুলো।
রাখাইন বর্ষ ১৩৮৩-কে বিদায় জানিয়ে পাপ আর কালিমা মুছে নতুন ১৩৮৪-কে বরণ করতে রাখাইন সম্প্রদায় মেতেছে জলকেলির প্রাণের উৎসবে।
রাখাইনদের নতুন বর্ষ ১৩৮৪ মগি বা রাখাইন সাল। রাখাইনদের ভাষায় বর্ষবরণের এই উৎসবকে বলা হয় ‘সাংগ্রেং পোয়ে’। আগামী মঙ্গলবার এই উৎসব শেষ হবে।
কক্সবাজার শহরের পূর্ব মাছ বাজার, পশ্চিম মাছ বাজার, ফুলবাগ সড়ক, ক্যাংপাড়া, হাঙরপাড়া, টেকপাড়া, বার্মিজ স্কুল রোড, বৌদ্ধ মন্দির সড়ক ও চাউল বাজার এলাকায় এক ডজন মণ্ডপ তৈরি করেছেন। এ ছাড়াও মহেশখালী, টেকনাফ, চকরিয়া, হারবাং, রামু, চৌফলদণ্ডীসহ জেলার বিভিন্ন স্থানে একই আয়োজন চলছে। জেলার বিভিন্ন স্থানে ৪৫টি মণ্ডপ করা হয়েছে।
রাখাইন সম্প্রদায়ের এই বর্ষবরণ উৎসব উপভোগ করছেন স্থানীয় বিভিন্ন সম্প্রদায়ের লোকজন। তারা রাখাইনপল্লির মণ্ডপগুলোতে গিয়ে জল ছিটানোসহ নানা উৎসব দেখছেন।
রাখাইন তরুণী মং টিন রাখাইন জানান, জলে স্নিগ্ধ হওয়ার অন্যরকম প্রয়াস এটি। এ উৎসব কোনও ধর্মীয় রীতির ভিত্তিতে নয়। সামাজিক রীতিমতে, রাখাইন নববর্ষ বরণের অনুষ্ঠানের অংশ হিসেবে কক্সবাজারের রাখাইনরা একে-অপরকে পানি ছোড়ার খেলায় মেতে উঠেছে। তার পরও নতুন বছর যেন ভালো কাটে, এজন্য আয়োজন করা হয় নানা ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠানের।
কক্সবাজার বৌদ্ধ মন্দির সড়কে রাখাইন তরুণী মং হ্লা জানান, সাংগ্রেং পোয়ের তিন দিনের এই উৎসবকে তাদের ভাষায় বলা হয় ‘মাহা সাংগ্রেং পোয়ে’। ওই দিন সকালে এলাকাভিত্তিক শোভাযাত্রা বৌদ্ধ কিয়াংয়ে যাবে। একজন ঘণ্টাবাদক বিশেষ ঘণ্টা বাজিয়ে কিয়াং-সহ প্যান্ডেল পরিদর্শনের নির্দেশনা দেন। এই শোভাযাত্রায় তরুণরা মাটির তৈরি কলসি ও পেছনে বয়স্ক নারী-পুরুষ ‘কল্প তরু’ বহন করবে। কিয়াং থেকে শোভাযাত্রাটি প্যান্ডেলে ঘুরে বেড়ায় আর পানি নিক্ষেপ খেলায় মেতে উঠবে। প্যান্ডেলে ঘুরে বেড়ানো এসব তরুণদের নাচে গানে আনন্দের পাশাপাশি তাদের ঐতিহ্যবাহী পানীয় পান করবে। একে অপরকে পানিতে ভিজিয়ে দিয়ে পুরনো বছরের সব পাপ, ক্লান্তি আর অসঙ্গতি মুছে-ধুয়ে নতুন বছরকে বরণ করতে তাদের এ আয়োজন।
আরেক রাখাইন তরুণী থেন থেন নাই বলেন, ‘আদিকাল থেকে রাখাইন নববর্ষ উপলক্ষে সামাজিকভাবে সাংগ্রে পোয়ে উৎসব পালন হয়ে আসছে। এবারও ব্যতিক্রম ঘটেনি। আনন্দ-উল্লাসে নতুন বছরকে বরণ করে নিচ্ছে সবাই। এর মাধ্যমে আমরা একে অপরের গায়ে পানি ছিটানোর মধ্য দিয়ে পুরনো দিনের সব ব্যথা, বেদনা, হিংসা বিদ্বেষ ভুলে এগিয়ে যাওয়ার স্বপ্ন দেখি। এটি আমাদের কাছে খুবই পবিত্র ও উৎসবের দিন।’
কক্সবাজারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘রাখাইনদের জলকেলি উৎসব উপলক্ষে প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। পুলিশের পাশাপাশি বিভিন্ন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা মাঠে রয়েছেন। কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।’