ইউক্রেনের ডনবাস দখলে হামলা শুরু রাশিয়ার
আন্তর্জাতিক

ইউক্রেনের ডনবাস দখলে হামলা শুরু রাশিয়ার

ইউক্রেনে রুশ সেনাবহর

ইউক্রেনের ডনবাস দখলে হামলা শুরু করেছে রাশিয়া। এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন ইউক্রেন প্রেসিডেন্ট ভলোদামির জেলেনস্কি। এক ভিডিওবার্তায় তিনি জানান, রকেট ও আর্টিলারি দিয়ে উপত্যকার বিভিন্ন শহরের ওপর বোমা হামলা করছে মস্কো কর্তৃপক্ষ। কিয়েভ দখলে ব্যর্থতার পর এ হামলার বিষয়ে বেশ কয়েকদিন ধরেই আশঙ্কা করা হচ্ছিল। খবর বিবিসির।

যুদ্ধের প্রাথমিক পর্যায়ে ইউক্রেনের বড় শহরগুলোর নিয়ন্ত্রণ ও দেশটির সরকার উৎখাতের পরিকল্পনা করেছিল রাশিয়া। কিন্তু ইউক্রেনের শক্ত প্রতিরোধের সম্মুখীন হয়ে রুশ প্রতিরক্ষা দপ্তর জানিয়েছে, ‘অভিযানের প্রথম ধাপ’ শেষ হয়েছে। এখন রাজধানী কিয়েভের আশপাশে থাকা রুশ সেনাদের সরিয়ে নেয়া হচ্ছে। সেসময় রাশিয়া ঘোষণা করে, তাদের মনোযোগ থাকবে ডনবাস উপত্যকার দিকে।

ধারণা করা হচ্ছে, এ উপত্যকায় যুদ্ধ দীর্ঘ দিন ধরে চলবে। রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন এ বিষয়ে বলেন, ইউক্রেনের এ প্রাচীন শিল্পাঞ্চলকে ‘মুক্ত’ করতে হবে। এদিকে, সোমবার ইউক্রেনের বেশ কয়েকটি শহরের ওপর বোমা হামলা করেছে। পশ্চিমের লভিভ হামলায় অন্তত সাতজন ও উত্তরের খারকিভ শহরে অন্তত দুইজন বেসামরিক লোক নিহত হয়েছে। এছাড়া রাজধানী কিয়েভেও বিস্ফোরণের শব্দ শোনা গেছে।

হামলার বিষয়ে সতর্ক করতে প্রায় সবসময়ই ইউক্রেনের বিভিন্ন শহরে যুদ্ধের সাইরেন বাজছে। অন্যদিকে রুশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় বলছে, তাদের সামরিক বাহিনী ইউক্রেনের ভেতরে মোট ৩১৫টি লক্ষ্যবস্তুর ওপর আঘাত হেনেছে।

উত্তরের খারকিভ এবং দক্ষিণের বন্দরনগরী ওডেসার কাছাকাছি মিকোলায়েভের ওপরও আক্রমণ হয়েছে। পূর্বাঞ্চলীয় ডনবাস উপত্যকার ওপর পূর্ণমাত্রায় হামলা চালানোর আগে ইউক্রেনের সামরিক স্থাপনাগুলোকে দুর্বল করার চেষ্টা করছে রাশিয়া।

ডনবাস উপত্যকা

ডনবাস কোথায়, কেন গুরুত্বপূর্ণ

রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন যখন ডনবাসের কথা বলেন তখন তিনি ইউক্রেনের কয়লা ও ইস্পাত উৎপাদনকারী অঞ্চলের প্রসঙ্গ টেনে আনেন। অর্থাৎ তিনি পূর্বাঞ্চলের বৃহৎ দুটো অঞ্চল লুহানস্ক এবং ডোনেৎস্কের পুরো এলাকাকে বোঝাতে চান। এই এলাকা দক্ষিণের মারিউপোল বন্দর-শহর থেকে শুরু করে উত্তরে রুশ সীমান্ত পর্যন্ত বিস্তৃত।

পশ্চিমা দেশগুলোর সামরিক জোট ন্যাটো মনে করে, রাশিয়া এ উপত্যকা দখলে নেয়ার মাধ্যমে ডোনেৎস্ক থেকে ক্রিমিয়া পর্যন্ত দক্ষিণ উপকূলে একটি স্থল করিডোর প্রতিষ্ঠার করতে চায়।

ব্রিটেনে প্রতিরক্ষা ও নিরাপত্তা বিষয়ক গবেষণা প্রতিষ্ঠান রয়্যাল ইউনাইটেড সার্ভিসেস ইন্সটিটিউট বা রুসির স্যাম ক্র্যানি-ইভান্স বলেন, মূল বিষয় হচ্ছে ক্রেমলিন এ অঞ্চলকে ইউক্রেনে রুশভাষীদের অংশ বলে চিহ্নিত করেছে যার অর্থ এই অঞ্চল ইউক্রেনের চেয়েও অনেক বেশি রাশিয়া।

এসব অঞ্চলে হয়তো রুশভাষী লোকেরাই বসবাস করেন, কিন্তু তারা এখন আর রুশপন্থী নন।

পোল্যান্ডে অবস্থিত নিরাপত্তা ও প্রতিরক্ষা সংক্রান্ত আঞ্চলিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান রোচান কনসাল্টিংয়ের প্রধান কনরাড মুজাইকা বলেন, মারিউপোল একসময় ছিল ইউক্রেনের সবচেয়ে বেশি রুশপন্থী শহরগুলোর একটি এবং এটি এমন মাত্রায় ছিল যা আমার ধারণাতেও ছিল না।

এক মাসেরও বেশি সময় ধরে চলা যুদ্ধের পর রাশিয়া দাবি করছে যে তারা লুহানস্ক অঞ্চলের ৯৩ শতাংশ ও ডোনেৎস্কের ৫৪ শতাংশ এলাকায় নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করেছে।

এখন পুরো উপত্যকাকে নিয়ন্ত্রণে আনতে হলে রুশ প্রেসিডেন্টকে আরও লম্বা পথে হাঁটতে হবে। তিনি যদি একসময় বিজয় অর্জনেও সক্ষম হন, ওই উপত্যকা এতো বড় যে সেখানে সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করা সহজ হবে না।

রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। ফাইল ছবি

পুতিন কেন ডনবাস নিয়ন্ত্রণে নিতে চান

রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ইউক্রেনের বিরুদ্ধে বারবার অভিযোগ তুলেছেন, তারা পূর্বাঞ্চলে গণহত্যা পরিচালনা করছে, যদিও তার এ অভিযোগের পক্ষে কোনো তথ্যপ্রমাণ নেই।

যুদ্ধ যখন শুরু হয় তখন পূর্বদিকের এসব অঞ্চলের দুই-তৃতীয়াংশ ছিল ইউক্রেনের হাতে। বাকি অংশ বিচ্ছিন্নতাবাদীরা পরিচালনা করতো যারা সেখানে আট বছর আগে শুরু হওয়া যুদ্ধে রাশিয়ার সমর্থনে ক্ষুদ্র রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করেছে।

যুদ্ধ শুরু হওয়ার ঠিক আগেভাগে প্রেসিডেন্ট পুতিন ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলীয় দুটো এলাকাকে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছেন।

রাশিয়া যদি এ দুই বৃহৎ অঞ্চল জয় করতে পারে, তাহলে প্রেসিডেন্ট পুতিন দেখাতে পারবেন যে এ যুদ্ধ থেকে তিনি কিছু একটা অর্জন করতে সক্ষম হয়েছেন। পরবর্তী পদক্ষেপ হবে ডনবাসকে রাশিয়ার সঙ্গে একীভূত করে নেয়া। ২০১৪ সালে বিতর্কিত এক গণভোটের মাধ্যমে ক্রিমিয়াকে ঠিক যেভাবে তিনি রাশিয়ার অংশ করেছেন।

লুহানস্কে রাশিয়ার পুতুল-নেতা এর মধ্যেই ‘অদূর ভবিষ্যতে’ সেখানে গণভোট আয়োজনের বিষয়ে কথা বলেছেন। যদিও রণক্ষেত্রে এখনই এরকম একটি ছলের আয়োজন করা অসম্ভব হবে।

রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। ফাইল ছবি

পুতিনের কৌশল কী

রাশিয়ার সেনারা উত্তর, পূর্ব এবং দক্ষিণ দিক থেকে অগ্রসর হয়ে ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলে ইউক্রেনীয় সেনাবাহিনীকে ঘিরে ফেলতে চেষ্টা করছে।

লন্ডনে কিংস কলেজে সংঘাত ও নিরাপত্তা বিষয়ক অধ্যাপক ট্রেসি জার্মান বলেন, নিয়ন্ত্রণ করার জন্য এই অঞ্চল অনেক বৃহৎ। এছাড়াও এর ভৌগলিক জটিলতাকেও ছোট করে দেখা যাবে না।

সাত সপ্তাহ ধরে যুদ্ধের পরেও রাশিয়া তাদের সীমান্তের কাছে ইউক্রেনের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর খারকিভ দখল করতে পারেনি। কিন্তু তারা ইজিওম শহরে নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করেছে। বিচ্ছিন্নতাবাদীদের নিয়ন্ত্রিত পূর্বাঞ্চলে প্রবেশের জন্য এই শহরটি কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ।

রুশ সমর্থিত বিচ্ছিন্নতাবাদীরা ডনবাসের বিস্তৃত এলাকা প্রথমবারের মতো দখলে নেয়ার পর থেকে রাশিয়ার কাছাকাছি শহরগুলোতে কয়েক বছর ধরে যুদ্ধ চলছে।

রাশিয়ার এর পরের বড় টার্গেট হবে স্লোভিয়ান্সকের একটি সড়ক। এ শহরে সোয়া এক লাখ মানুষের বাস। রুশ সমর্থিত বাহিনী ২০১৪ সালে শহরটি দখলে নিয়েছিল। কিন্তু পরে সেটি ইউক্রেনের সেনাবাহিনীর দখলে চলে যায়।

রাশিয়ার আরও একটি বড় টার্গেট হবে দক্ষিণ দিকে ক্রামাটরস্ক শহর দখলে নেয়া।

Source link

Related posts

বাগদাদে গাড়িবোমা হামলায় নিহত ৪, আহত ২০

News Desk

ইজিয়ামে গণকবর থেকে ৪৪০ মরদেহের সন্ধান পেল ইউক্রেন

News Desk

জাতিসংঘে ফিলিস্তিনের পক্ষে বললেন ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী

News Desk

Leave a Comment