ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জ নৌ-বন্দর থেকে আখাউড়া স্থলবন্দর পর্যন্ত দুটি মহাসড়কে চার লেনের কাজ চলছে। এর মধ্যে কুমিল্লা-সিলেট মহাসড়কের ব্রাহ্মণবাড়িয়া অংশে সদর উপজেলায় বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প কপোরেশন (বিসিক) শিল্প নগরীর সামনের খাল বালু দিয়ে ভরাট করা হয়েছে। কয়েকদিনের বৃষ্টিতে শিল্পনগরীর কারখানার পরিশোধিত পানি সরতে না পারায় জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে। এতে ৬০টির মধ্যে অন্তত ৩০টি কারখানায় পানি ঢুকে উৎপাদন বন্ধ হয়ে গেছে।
কারখানা মালিকরা বলছেন, ঈদ মৌসুমে বাড়তি উৎপাদন তো দূরের কথা, নিয়মিত উৎপাদনই করতে পারছেন না তারা। এতে আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন শিল্প প্রতিষ্ঠানের মালিকরা।
এলাকাবাসী ও ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, নন্দনপুর বিসিক শিল্পনগরীতে মোট ৬৮টি ছোট ও মাঝারি আকারের শিল্প প্রতিষ্ঠান রয়েছে। বিসিকের সামনে দিয়ে যাওয়া কুমিল্লা-সিলেট মহাসড়কটি চার লেনে উন্নীতের কাজ চলছে।
এর মধ্যে বিসিকের সামনের খালটিও বালু দিয়ে ভরাট করে ফেলা হয়েছে। ওই খালে পুরো বিসিক এলাকার কারখানাগুলোর বর্জ্য পানি ফেলা হতো।
সপ্তাহ দুয়েক আগে থেকে খালটি ভরাট কাজ শুরু হয়। গত চার-পাঁচ দিন আগে সামনের অংশের খাল পুরোপুরি ভরাট হয়ে যাওয়ায় বিসিকে জলাবদ্ধতা দেখা দেয়। এতে শিল্পনগরীতে থাকা রাজ্জাক ফুড ইন্ডাস্ট্রি, আব্দুল মোনেম লিমিটেড, মুন্নী সোপ, মা-মণি সোপ, আলম ক্যামিকেল, সুবর্ণ আইসক্রিম, বাবুল চিড়ার মিল, ভাই ভাই মুড়ির মিল, কাসেম মেটাল, রতন ফুড, রহিমা লুভ ওয়েল, জাবেদ মেটাল, ভাই ভাই অ্যালমুনিয়াম, পিন্টু বলপেন, মান্নান ক্যামিকেল ও আপন মেজর ফ্লাওয়ার মিলসহ অন্তত ৩০টি কারখানায় পানি ঢুকে উৎপাদন বন্ধ হয়ে গেছে।
এছাড়া বিসিক কার্যালয়ের অফিসেও জলাবদ্ধতা থাকায় প্রতিষ্ঠানটির কর্মকর্তা-কর্মচারীরা অফিসে আসা-যাওয়া করতে দুর্ভোগে পড়েছেন।
নন্দনপুর শিল্পনগরীর রাজ্জাক ফুড ইন্ডাস্ট্রির মালিক ফরিদ মিয়া জানান, ‘নব্বই দশকের দিকে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ননন্দনপুরে বিসিক শিল্পনগরী গড়ে ওঠার পর থেকে খালে বর্জ্য পানি যেতো। এখন হুট করেই এটি বন্ধ করে দেওয়ায় জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে। এর আগে অবশ্য মৌখিকভাবে নিজস্ব ড্রেনেজ ব্যবস্থার কথা বলা হয়। কিন্তু সরকারি এই শিল্প প্রতিষ্ঠানে ব্যবসায়ীদের পক্ষে এটা করা সম্ভব না। ব্যবসায়ীরা চান, সরকারের সংশ্লিষ্টরা বিষয়টি নিজেদের মধ্যে সমাধান করুক।’
মেসার্স সূবর্ণ আইসক্রিম ফ্যাক্টরির মালিক জাকির হোসেন জানান, ‘ঈদের আগমুহূর্ত কারখানার পণ্য উৎপাদনের মৌসুম। এমন সময় এই কৃত্রিম জলাবদ্ধতা ব্যাপক ক্ষতির মুখে ফেলেছে। এই সমস্যার দ্রুত আমরা সমাধান চাই।’
এ বিষয়ে সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী পংকজ ভৌমিক জানান, ‘বিসিকের সামনের জায়গাটি সড়ক ও জনপথ বিভাগের। চার লেন সম্প্রসারণ কাজ শুরু হওয়ার পর সেটা সংশ্লিষ্ট প্রকল্পের আওতায় চলে গেছে। এছাড়া অনেক আগে থেকেই বিসিক শিল্পনগরী কর্তৃপক্ষকে বলা হয়েছে, তারা যেন আলাদা বর্জ্য শোধনাগার তৈরি করেন। কিন্তু এখন পর্যন্ত সেটা করেননি তারা। এ কারণে মহাসড়ক সম্প্রসারণ কাজ করতে সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে।’
চার লেন সড়ক সম্প্রসারণ কাজের দায়িত্বে নিয়োজিত উপ-প্রকল্প ব্যবস্থাপক-২ শামীম আহমেদ জানান, সড়ক সম্প্রসারণ কাজ শুরুর আগেই শিল্পনগরী কর্তৃপক্ষকে একাধিকবার বলা হয়েছে, তারা যেন তাদের নিজস্ব বর্জ্য সুজনগর তৈরি করেন। কিন্তু সেটা তারা করেননি। যে কারণে আমাদের চার লেন সড়ক সম্প্রসারণ করতে গিয়ে কৃত্রিম জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। জলাবদ্ধতা নিরসনে শিল্পনগরীর ও মহাসড়কের পাশে অস্থায়ী ড্রেন করে দিচ্ছি। কিন্তু এটা স্থায়ী সমাধান নয়। স্থায়ী সমাধান শিল্পনগরী কর্তৃপক্ষকেই করতে হবে।’
এ ব্যাপারে চার লেন প্রকল্পের পরিচালক (পিডি) খন্দকার গোলাম মোস্তফা জানান, ‘খালের অংশটি সড়ক ও জনপথের। এখানে বিসিকের কোনও জায়গা নেই। বিসিক কর্তৃপক্ষকে নির্ধারণ করতে হবে তারা কোথায় বজ্র শোধনাগার তৈরি করবেন। তাদেরকে নিজস্ব ব্যবস্থায় তা করতেও বলা হয়েছে।’
বিসিক শিল্প নগরীরর সহকারী মহাব্যবস্থাপক রুকন উদ্দিন ভূঁইয়া বলেন, ‘আমাদের কার্যালয়সহ বিভিন্ন শিল্প কারখানা পানিতে তলিয়ে আছে। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ ও প্রকল্প সংশ্লিষ্টদেরকে জানানো হয়েছে। প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, একটি নালা কেটে সমাধান করবেন দেবেন। আমাদের পক্ষ থেকে কী করা যায়, সেটা ঊর্ধ্বতস কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে ব্যবস্থা সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’