ঘূর্ণিঝড় অশনির প্রভাবে উত্তাল সাগর, পটুয়াখালীতে টানা বৃষ্টি
বাংলাদেশ

ঘূর্ণিঝড় অশনির প্রভাবে উত্তাল সাগর, পটুয়াখালীতে টানা বৃষ্টি

ঘূর্ণিঝড় অশনির প্রভাবে সোমবার (৯ মে) সকাল থেকেই উপকূলীয় জেলা পটুয়াখালীতে টানা বৃষ্টি হচ্ছে। আগামী পাঁচ দিন এই বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকতে পারে। এদিকে, কুয়াকাটা সংলগ্ন বঙ্গোপসাগর বেশ উত্তাল রয়েছে। বাতাসের চাপও বেশ বেড়েছে।

আবহাওয়া অফিস থেকে জানা গেছে, দক্ষিণপূর্ব বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থানরত প্রবল ঘূর্ণিঝড় অশনি উত্তরপশ্চিম দিকে অগ্রসর হয়ে বর্তমানে পশ্চিম-মধ্য বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন দক্ষিণপূর্ব বঙ্গোপসাগর এলাকায় অবস্থান করছে। এর প্রভাবে পটুয়াখালীর কুয়াকাটা সংলগ্ন বঙ্গোপসাগর বেশ উত্তাল রয়েছে। আকাশেও প্রবল মেঘ। বাতাসের চাপ বেড়েছে। সোমবার দুপুর ১২টায় ঘূর্ণিঝড়টি পটুয়াখালীর পায়ার বন্দর থেকে এক হাজার কিলোমিটার দক্ষিণ-দক্ষিণ পশ্চিমে অবস্থান করছিল। তাই পায়রাসহ সব বন্দরকে দুই নম্বর দূরবর্তী সতর্ক সংকেত দেখিয়ে যেতে বলেছে আবহাওয়া অফিস।

পটুয়াখালী আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. মাসুদ রানা অন্তত জানান, ঘূর্ণিঝড় অশনির প্রভাবে উপকূলীয় এলাকায় বৃষ্টিপাত হচ্ছে। বিকাল ৩টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত পটুয়াখালীতে ৪৪ দশমিক ৪ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। ঘূর্ণিঝড় এবং অগ্রবর্তী অংশের প্রভাবে সোমবার সকাল ৯টা পরবর্তী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে খুলনা, বরিশাল ও চট্টগ্রাম বিভাগের কোথাও কোথাও মাঝারি ধরনের থেকে ভারী (২৩-৪৩ মিলিমিটার) ও ভারী থেকে অতি ভারী (৮৯ মিলিমিটার বা তারও বেশি) বৃষ্টি হতে পারে। আগামী পাঁচ দিন পর্যন্ত বৃষ্টি অব্যাহত থাকতে পারে। সঙ্গে বজ্রপাত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। 

তিনি বলেন, ‘ঘূর্ণিঝড় অশনি আজ দুপুর ১২টায় পটুয়াখালীর পায়রা সমুদ্র বন্দর থেকে এক হাজার কিলোমিটার দক্ষিণ-দক্ষিণপশ্চিমে, চট্টগ্রাম সমুদ্র বন্দর থেকে এক হাজার ১০৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-দক্ষিণ পশ্চিমে, কক্সবাজার সমুদ্র বন্দর থেকে এক হাজার ৪৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-দক্ষিণ পশ্চিমে এবং মোংলা সমুদ্র বন্দর থেকে এক হাজার ১৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-দক্ষিণ পশ্চিমে অবস্থান করছে। ঘূর্ণিঝড়টি আরও উত্তর পশ্চিম দিকে অগ্রসর হতে পারে। তবে এটি কোন এলাকায় আঘাত হানতে পারে তা এখনও নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না।’

 

এই আবহাওয়াবিদ আরও বলেন, ‘ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের ৬৪ কিলোমিটারের মধ্যে বাতাসের একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় ৮৯ কিলোমিটার যা দমকা অথবা ঝোড়ো হাওয়া আকারে ২১৭ কিলোমিটার পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। প্রবল শক্তির এই ঘূর্ণিঝড়ের কেন্দ্রের নিকটবর্তী এলাকার সাগর খুবই বিক্ষুব্ধ রয়েছে। তাই সব সমুদ্র বন্দরকে দুই নম্বর দূরবর্তী হুঁশিয়ারি সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। উত্তর বঙ্গোপসাগরে অবস্থানরত ট্রলারগুলোকে উপকূলের কাছাকাছি থেকে সাবধানে চলাচল করতে বলা হয়েছে। সেই সঙ্গে গভীর সাগরে বিচরণ না করতে বলা হয়েছে।’

এদিকে, আজ সবচেয়ে বেশি বৃষ্টিপাত হচ্ছে পটুয়াখালীর উপকূলীয় এলাকায়। কলাপাড়া আবহাওয়া অফিসের ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ার ও রাডার স্টেশন এপিডিও জব্বার শরিফ বলেন, ‘সকাল ৭টা থেকে বিকাল ৩টা পর্যন্ত কলাপাড়া উপজেলায় ১১১ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। এর মাত্রা আরও বাড়তে পারে।’

এদিকে, দুর্যোগ মোকাবিলায় পটুয়াখালীর স্বেচ্ছাসেবকরা প্রস্তুতি নিচ্ছেন। ঝুঁকিপূর্ণ কলাপাড়া, রাঙ্গাবালী, গলাচিপা ও দশমিনায় ঘূর্ণিঝড় কর্মসূচির আওতায় ৯ হাজার ১২০ জন দুর্যোগ মোকাবিলায় প্রস্তুতি নিচ্ছেন। কলাপাড়া উপজেলা ঘূর্ণিঝড় প্রস্তুতি কর্মসূচির সহকারী পরিচালক মো. আসাদুজ্জামান খান জানান, তারা টিম লিডারদের সঙ্গে কথা বলছেন। নির্দেশনা পেলেই মাঠে নামবেন।

পটুয়াখালী ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা সুমন চন্দ্র দেবনাথ জানান, ঘূর্ণিঝড় মোকাবিলায় ৭০৭টি আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে। প্রয়োজনে আরও বাড়ানো হবে।

পটুয়াখালী জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ কামাল হোসেন জানান, গতকাল দুপুরে একটি সভা হয়েছে, ওই সভায় সব নির্বাহী কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। সেখানে ঘূর্ণিঝড় অশনির প্রস্তুতি সম্পর্কে আলোচনা হয়েছে। তবে সংকেত তিন কিংবা চার ঘোষণা হলে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে কন্ট্রোল রুম খোলা হবে। এ ছাড়াও ঘূর্ণিঝড় মোকাবিলায় সব প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে।’

Source link

Related posts

জলকেলিতে শেষ হলো মারমাদের সাংগ্রাই উৎসব

News Desk

ভাসানচরে গেলো আরও ১৫৩৫ রোহিঙ্গা

News Desk

আসন স্বল্পতায় ট্রেনে দাঁড়িয়ে যাতায়াত

News Desk

Leave a Comment