ফায়ার সার্ভিসের কর্মীদের জড়িয়ে ধরে কাঁদলেন রানার মা
বাংলাদেশ

ফায়ার সার্ভিসের কর্মীদের জড়িয়ে ধরে কাঁদলেন রানার মা

ছেলেকে হারিয়ে বাকরুদ্ধ বাবা। মৃত্যুর খবর শোনার পর থেকে বারবার মূর্ছা যাচ্ছেন মা। কোনোভাবেই থামছে না ভাইবোনের কান্না। স্বজন হারানোর বেদনায় শোকে পাথর পুরো পরিবার। এমন অবস্থা বিরাজ করছে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের ফায়ার ফাইটার রানা মিয়ার পরিবারে। 

সীতাকুণ্ডের বিএম কনটেইনার ডিপোতে আগুন নেভাতে গিয়ে প্রাণ হারিয়েছেন রানা মিয়া (২২)। মানিকগঞ্জের শিবালয় উপজেলার নবগ্রামের বাসিন্দা রানা মিয়া কুমিরা ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের ফায়ার ফাইটার হিসেবে কর্মরত ছিলেন। সোমবার (৬ জুন) সকালে তার দাফন সম্পন্ন হয়। 

সোমবার সকাল ৭টায় চট্টগ্রাম থেকে অ্যাম্বুলেন্সযোগে তার মরদেহ নবগ্রামে পৌঁছে। এ সময় বাবা-মা, ভাইবোন ও স্বজনের মধ্যে কান্নার রোল পড়ে যায়। পরিবারের সদস্য, স্বজন ও বন্ধুবান্ধবের আহাজারিতে হৃদয়বিদারক দৃশ্যের অবতারণা হয়। লাশ নিয়ে যাওয়া ফায়ার সার্ভিস কর্মীদের জড়িয়ে ধরে কাঁদছিলেন রানার মা ও ভাইবোন।

সকাল ৮টায় নবগ্রাম খেলার মাঠে তার জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। জানাজায় কয়েকশ মানুষের সঙ্গে শিবালয় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জাহিদুর রহমান ও ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তারা অংশ নেন। পরে যথাযোগ্য মর্যাদায় তাকে স্থানীয় জান্নাতুল বাকি কবরস্থানে দাফন করা হয়।

পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, নবগ্রামের পান দোকানদার পান্নু মিয়ার তিন সন্তানের মধ্যে রানা মিয়া মেজো। দেড় বছর ধরে ফায়ার সার্ভিসে কর্মরত। বড় মেয়ে বন্যা আক্তারের বিয়ে হয়েছে। ছোট সন্তান সাজ্জাদ মিয়া স্থানীয় একটি বেসরকারি কলেজের প্রথমবর্ষের শিক্ষার্থী। 

রানার দাদার বাড়ি ছিল শিবালয়ের তেওতা এলাকায়। পরিবারের অসচ্ছলতার কারণে রানার পরিবার নানার বাড়ি নবগ্রামে চলে আসে। এরপর সেখানে বাড়িঘর তুলে পরিবারের সদস্যরা বসবাস করছেন।

২০২০ সালে ফায়ারম্যান পদে রানার চাকরি হয়। ওই বছরের ২৪ নভেম্বর সীতাকুণ্ডের কুমিরা ফায়ার স্টেশনে যোগ দেন। বাবা-মাসহ পরিবারের সঙ্গে সাত দিনের ছুটি কাটিয়ে গত বৃহস্পতিবার (২ জুন) কর্মস্থলে যান রানা।

রানার বোন-জামাই ও বিজিবির সদস্য মো. রাসেল শেখ বলেন, ‘সীতাকুণ্ডে বিএম কনটেইনার ডিপোতে আগুন লাগার খবর পেয়ে কুমিরা ফায়ার স্টেশনের সদস্যরা ঘটনাস্থলে যান। তাদের মধ্যে রানাও ছিলেন। অগ্নিকাণ্ডের খবর পেয়ে রাতেই সেখানে যান তারা। রবিবার সকালে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে গিয়ে রানাকে খোঁজাখুঁজি করতে থাকি। একপর্যায়ে হাসপাতাল মর্গে গিয়ে তার লাশ শনাক্ত করি।’

তিনি বলেন, ‘রানার শরীর ও পোশাক পুড়ে গেছে। তবে ফায়ার সার্ভিসের পোশাকের নিচে এলাকার একটি ক্লাবের লেখা সংবলিত টি-শার্ট দেখে লাশ শনাক্ত করেছি আমি। সোমবার সকালে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল মর্গ থেকে লাশ নবগ্রামের বাড়িতে আনা হয়।’

সন্তানের লাশ দেখে আহাজারি করতে করতে বারবার মূর্ছা যাচ্ছিলেন মা রেনোয়ারা বেগম। সন্তানের এমন মৃত্যু কিছুতেই মেনে নিতে পারছেন না তিনি। ফায়ার সার্ভিস কর্মীদের জড়িয়ে ধরে কাঁদছিলেন রেনোয়ারা। এ সময় রানার বড় বোন বন্যা আক্তার ও ছোট ভাই সাজ্জাদ মিয়া হাউমাউ করে কাঁদছিলেন। তাদের সান্ত্বনা দিচ্ছিলেন ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা। 

আরও পড়ুন: নতুন ঘরে উঠতে চেয়েছিলেন রানা মিয়া

সাজ্জাদ মিয়া বলেন, ‘মামার বাড়িতে রাতযাপন করে কর্মস্থলে গিয়েছিলেন ভাই। যাওয়ার আগে বাবাকে বলে গেছেন, আবার ছুটিতে এসে নিজেদের নতুন ঘরে উঠবেন। কিন্তু সেই স্বপ্ন নিয়ে না ফেরার দেশে চলে গেলেন ভাই।’

ফায়ার সার্ভিসের পক্ষ থেকে রানার কফিনে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানানো হয়

নবগ্রাম খেলার মাঠে তার জানাজায় উপস্থিত ছিলেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জাহিদুর রহমান ও মানিকগঞ্জ ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের উপ-সহকারী পরিচালক মো. শফিকুল ইসলাম এবং স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিরা। ফায়ার সার্ভিসের পক্ষ থেকে রানার কফিনে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানানো হয়। জানাজা শেষে তাকে দাফন করা হয়।

মানিকগঞ্জ ফায়ার সার্ভিসের সহকারী পরিচালক মো. শরীফুল ইসলাম বলেন, ‘মানুষজনকে বাঁচাতে গিয়ে ফায়ারম্যান রানা প্রাণ দিলেন। শুধু তিনি নন, আমাদের আরও আট সদস্য নিহত ও অনেকে আহত হয়েছেন। ফায়ার সার্ভিসের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশনায় রানার পরিবারের পাশে থাকবো আমরা।’

ইউএনও মো. জাহিদুর রহমান বলেন, ‘রানার পরিবারকে ফায়ার সার্ভিসের পক্ষ থেকে সহযোগিতা করার সম্ভাবনা রয়েছে। এরপরও তার পরিবার চাইলে উপজেলা প্রশাসন থেকে সহযোগিতা করা হবে। রানার ছোট ভাই কলেজের ছাত্র। চাইলে তার পড়াশোনার দায়িত্বও নিতে পারি আমরা।’

 

Source link

Related posts

বছরের পর বছর ভাঙা ঘরে বসবাস ৩০ পরিবারের

News Desk

যেভাবে ২০ গ্রাম রক্ষা করলো সাতক্ষীরা উপকূলের মানুষ

News Desk

এক্সপ্রেসওয়েতে ডিসির গাড়িতে বাসের ধাক্কা

News Desk

Leave a Comment