বাংলার আবহমানকালের প্রাণ-সংস্কৃতির অবিচ্ছেদ্য অংশ বর্ষা। বাংলা বছরের দ্বিতীয় ঋতু এটি। এ ঋতু বরণ করে নিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাংস্কৃতিক সংসদের উদ্যোগে অনুষ্ঠিত হয়েছে ‘আষাঢ় পার্বণ ১৪২৯’।
বুধবার বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্রের (টিএসসি) মিলনায়তনে রিভাইভাল টি নিবেদিত ‘আষাঢ় পার্বণ’ উদযাপন করা হয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাংস্কৃতিক সংসদ প্রথমবারের মতো সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও কারুশিল্প মেলা আয়োজনের মাধ্যমে উৎসবটি উদযাপন করে।
প্রখ্যাত নাট্য ও গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব ম. হামিদ বেলা সাড়ে চারটায় অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন। অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ সামাদ। এছাড়াও বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন নৃত্যশিল্পী ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব শর্মিলা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এর ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্রের উপদেষ্টা ড. শিকদার মনোয়ার মুর্শেদ। মুখ্য আলোচক হিসেবে ছিলেন সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব গোলাম কুদ্দুস। অতিথি হিসেবে ছিলেন রিভাইভাল টি-এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক রাহতুল আশেকীন। এছাড়াও সভা প্রধান হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাংস্কৃতিক সংসদের মডারেটর সাবরিনা সুলতানা চৌধুরী।
অনুষ্ঠানের উদ্বোধক ম. হামিদ বলেন, ‘জীবনে যতই দুঃখবোধ থাকুক, ইতিবাচক দিকগুলোকে আনন্দের সঙ্গে উদযাপন করতে হবে। বর্ষার নেতিবাচক সকল দিককে পেছনে ফেলে আনন্দময় পরিবেশে আমরা এই ঋতুকে উপভোগ করব আশা করি।’
প্রধান অতিথির বক্তব্যে উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ সামাদ বলেন, আমরা যদি আবহমান সংস্কৃতিকে ধরে রাখতে পারি, জঙ্গিবাদ, মৌলবাদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানো সম্ভব। অসাম্প্রদায়িক মূল্যবোধ চর্চায় এবং দেশ ও সমাজে সম্প্রীতি বজায় রাখতে সংস্কৃতিচর্চার গুরুত্ব অপরিসীম।
তিনি বলেন, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের বিভিন্ন সৃষ্টিকর্মের মধ্য দিয়ে বর্ষার রূপের সৃষ্টি হয়েছে বলা যায়। রবীন্দ্রনাথ বর্ষা নিয়ে যেসব লিখেছেন তার সবই রোমান্টিকধর্মী। বর্তমানে যারা শহরে জন্মগ্রহণ করেছে তাদের পক্ষে রবীন্দ্রনাথের সময়ের সেই গ্রামের দৃশ্য কল্পনা করা সম্ভব না।
মুখ্য আলোচকের বক্তব্যে সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি গোলাম কুদ্দুস বলেন, বর্ষা আমাদের জীবনের সাথে, পেশার সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। যদি বর্ষা না থাকে তাহলে ফসল হবে না, মৎস্য সম্পদ হারিয়ে যাবে। যদি বর্ষা না থাকে ভাটিয়ালি গান আমরা হারিয়ে ফেলবো। আর বর্ষা রক্ষায় প্রকৃতিকে রক্ষা করতে হবে।
ঢাবি সাংস্কৃতিক সংসদের সভাপতি সাদিয়া আশরাফি থিজবী বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাংস্কৃতিক সংসদ সর্বদাই নিজস্ব সংস্কৃতির সুস্থ ধারায় চর্চাকে সুস্থ উৎসাহিত করে আসছে। এই সংস্কৃতিকে তরুণ প্রজন্মের মধ্য দিয়ে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে আমরা পৌঁছে দিতে চাই। বাঙালির জীবনে বর্ষা একটি গুরুত্বপূর্ণ ঋতু। শ্যামল-বাদল জলে এই তিক্ত-মিষ্ট অভিজ্ঞতার ঋতুকে বরণ করে নিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাংস্কৃতিক সংসদের এই আয়োজন।
বর্ষার প্রথম দিন উৎসবের আয়োজন সম্পর্কে সাধারণ সম্পাদক জয় দাস বলেন,সংস্কৃতি চর্চা মানুষের মনের সুন্দর বিকাশ সম্ভব বলে আমরা বিশ্বাস করি। ধর্মান্ধতা, হিংসাদ্বেষের বিরুদ্ধে আমরা সর্বদাই সোচ্চার। আষাঢ় পার্বণ বাঙালি সত্তাকে আরো প্রগাঢ় করতে আরেকটি উদ্যোগ।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাংস্কৃতিক সংসদের নানা সাংস্কৃতিক পরিবেশনার পাশাপাশি প্রখ্যাত ব্র্যান্ড ‘কৃষ্ণপক্ষ’ সঙ্গীত পরিবেশন করে। এছাড়া টিএসসি প্রাঙ্গনে দিনব্যাপী আয়োজিত হয়েছে কারুশিল্প মেলা, এতে নবীন উদ্যোক্তাদের বিভিন্ন স্টল ও বর্ষাযাপনের নানা উপাদান ছিল। সংবাদ বিজ্ঞপ্তি