উজানের ঢল ও ভারী বর্ষণে কুড়িগ্রামে সব নদ-নদীর পানি বেড়েছে। হু হু করে পানি বাড়তে থাকায় ধরলা, ব্রহ্মপুত্র ও দুধকুমার নদের পানি বিপৎসীমা অতিক্রম করেছে। এতে হাজারও মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন।
নদ-নদী অববাহিকার বসতভিটায় পানি প্রবেশ করায় বিপাকে পড়েছেন দুগর্তরা। আগামী কয়েক দিন বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হতে পারে বলে জানিয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)। এ অবস্থায় জেলায় মাঝারি মেয়াদে বন্যার আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা।
পাউবোর নিয়ন্ত্রণ কক্ষ জানায়, শুক্রবার (১৭ জুন) দুপুর ১২টায় ধরলা নদীর পানি সেতু পয়েন্টে বিপৎসীমার ১২ সেন্টিমিটার এবং ব্রহ্মপুত্রের পানি চিলমারী পয়েন্টে বিপৎসীমার ৮ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। পানি বৃদ্ধির খেলায় পিছিয়ে নেই দুধকুমার নদ। ঢলে এই নদের পানি বেড়ে সকাল ৯টার দিকে সদরের পাটেশ্বরী পয়েন্টে বিপৎসীমার ৯ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। বাড়ছে তিস্তার পানিও। দুপুর ১২টায় কাউনিয়া পয়েন্টে বিপৎসীমার ২৫ সেন্টেমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হয়। আগামী ৪৮ ঘণ্টা এসব নদ-নদীর উজানে ভারী বৃষ্টিপাতের আশঙ্কা থাকায় বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হতে পারে।
আরও পড়ুন: ব্রহ্মপুত্র-তিস্তার পানিতে ডুবেছে কুড়িগ্রামের নিম্নাঞ্চল
ব্রহ্মপুত্রের পানি বৃদ্ধির ফলে সদর ও উলিপুর উপজেলার নিম্নাঞ্চলের বিভিন্ন দ্বীপচরে পানি ঢুকতে শুরু করেছে। পানিবন্দি হয়ে পড়েছে কয়েক হাজার পরিবার। ধরলার পানি বেড়ে সদরের ভোগডাঙা ও পাঁচগাছী ইউনিয়নের কয়েকশ’ বাড়িঘরে প্রবেশ করেছে।
ব্রহ্মপুত্র ও দুধকুমার নদের পানি বেড়ে পানিবন্দি হয়ে পড়েছে সদরের যাত্রাপুর ইউনিয়ন ও উলিপুরের বেগমগঞ্জ ইউনিয়নের অন্তত ৬-৭ হাজার পরিবার। ঘরের ভেতর পানি প্রবেশ করায় অনেকে নৌকায় ও মাচানে আশ্রয় নিয়েছেন দুর্গতরা। বাড়িঘর ছেড়ে অনেক পরিবার নিকটবর্তী উঁচু বসতিতে আশ্রয় নিয়েছেন বলে জানা গেছে।
যাত্রাপুর ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য আনোয়ার হোসেন জানান, এই ওয়ার্ডের কয়েকটি গ্রামের শতাধিক বাড়িতে পানি প্রবেশ করেছে। এসব গ্রামের হাজারও পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে।
আরও পড়ুন: রংপুরে বাড়িঘর ছেড়ে বাঁধে আশ্রয় নিচ্ছে মানুষ
ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আব্দুল গফুর জানান, বন্যা পরিস্থিতি খারাপ। রাতারাতি অন্তত পাঁচ হাজার পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। ইউনিয়নজুড়ে হাজারেরও বেশি বসতিতে বন্যার পানি প্রবেশ করেছে।
তিনি বলেন, ‘পানি খুব বাড়ছে। চর ভগবতিপুর ও ঝুনকার চরের কিছু বাসিন্দা বাড়িঘর ছেড়ে পার্শ্ববর্তী আবাসনে আশ্রয় নিয়েছে। দুর্গতদের আমরা তথ্য সংগ্রহ করছি।’
পাঁচগাছী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আব্দুল বাতেন সরকার জানান, ছয়টি ওয়ার্ড প্লাবিত হয়েছে। স্থানীয় প্রশাসন বন্যা পরিস্থিতির প্রতিবেদন নিয়েছে বলে জানান তিনি।
ব্রহ্মপুত্র অববাহিকা প্লাবিত হওয়ায় উলিপুর উপজেলার কয়েকটি ইউনিয়নের হাজারও মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। নিম্নাঞ্চলের বসতিগুলোতে পানি প্রবেশ করেছে।
উলিপুরের বেগমগঞ্জ ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মোন্নাফ আলী বলেন, ‘অবস্থা খুব খারাপ। হু হু কইরা পানি বাড়তাছে। আমার ওয়ার্ডের দুই শতাধিক বাড়িঘরে পানি ডুইকা পড়ছে। মানুষজন মাচান কইরা আশ্রয় নিতাছে।’
বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের বরাত দিয়ে পাউবোর কুড়িগ্রামের নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, ‘আগামী ৪৮ ঘণ্টা পর্যন্ত উজানে ভারী বৃষ্টিপাত হতে পারে। এতে আগামী কয়েকদিন জেলার নদ-নদীর পানি বেড়ে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হতে পারে।’
জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ রেজাউল করিম বলেন, ‘দুর্গতদের উদ্ধারে প্রয়োজনীয় সংখ্যক স্পিড বোট, নৌকা এবং আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে। উপজেলাগুলোতে প্রয়োজনীয় বরাদ্দসহ নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। সার্বিক পরিস্থিতি মোকাবিলায় ২০ লাখ টাকা ও ৫৭০ মেট্রিক টন চাল বরাদ্দ পাওয়া গেছে। এছাড়া প্রধানমন্ত্রীর উপহার থেকে এক হাজার প্যাকেট খাবারের বরাদ্দ রয়েছে।’