Image default
বাংলাদেশ

ভারতের চেরাপুঞ্জিতে ১২২ বছরে সর্বোচ্চ বৃষ্টি, সিলেটে ভয়াবহ বন্যা

গত তিন দিনে বাংলাদেশের উজানে ভারতের আসাম ও মেঘালয়ে প্রায় আড়াই হাজার মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। ওই বৃষ্টির পানি ঢল হয়ে বাংলাদেশের সিলেট বিভাগের সব কটি জেলায় প্রবেশ করেছে। সরকারের বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের পূর্বাভাস বলছে, আগামী তিন দিন উজানে ভারতীয় অংশে ও বাংলাদেশ অংশে ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টি অব্যাহত থাকতে পারে। ফলে বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হওয়ার আশঙ্কা আছে।

অন্যদিকে দেশের উত্তরাঞ্চলের প্রধান নদী তিস্তা ও ব্রহ্মপুত্র নদের পানি দ্রুত বাড়ছে। এরই মধ্যে তিস্তা অববাহিকার চারটি জেলার নিম্নাঞ্চলে বন্যার পানি প্রবেশ করেছে। লালমনিরহাট, নীলফামারী, কুড়িগ্রাম, রংপুর ও কুড়িগ্রামে বন্যা পরিস্থিতির দ্রুত অবনতি হতে পারে বলে মনে করছে বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র। ব্রহ্মপুত্রের পানি যমুনা দিয়ে নামার সময় তিন–চার দিনের মধ্যে বগুড়া, সিরাজগঞ্জ ও টাঙ্গাইল পর্যন্ত বন্যার পানি চলে আসতে পারে।

এদিকে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হওয়ায় সিলেট বিভাগের বেশির ভাগ এলাকার যোগাযোগব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে। টেলিফোন নেটওয়ার্ক অকার্যকর হয়ে গেছে। বিদ্যুৎ বিভাগ থেকে নিরাপত্তার স্বার্থে ও দুর্ঘটনা এড়াতে পুরো সিলেটের বিদ্যুৎ–সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেওয়া হয়েছে। ফলে সিলেট বিভাগ কার্যত সারা দেশ থেকে প্রায় বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে বলা যায়।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের বন্যা ও পানি ব্যবস্থাপনা ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক সাইফুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, সিলেট বিভাগে গত কয়েক যুগের মধ্যে সবচেয়ে বড় বন্যা শুরু হয়েছে। দুই–তিন দিন এই বৃষ্টি ও বন্যা চলতে পারে। ফলে ওই এলাকার মানুষের জীবন ও সম্পদ রক্ষায় সরকারের সব কটি বাহিনী ও সংস্থাকে সক্রিয় করতে হবে।

এদিকে ভারতের আবহাওয়া অধিদপ্তরের (আইএমডি) বরাত দিয়ে হিন্দুস্তান টাইমসের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ভারতের চেরাপুঞ্জি বিশ্বের সবচেয়ে বৃষ্টিপ্রবণ এলাকা। গত ২৪ ঘণ্টায় সেখানে ৯৭২ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে, যা জুন মাসে ১২২ বছরের মধ্যে সবচেয়ে বেশি। আর গত তিন দিনে সেখানে প্রায় আড়াই হাজার মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। এটিও গত ২৭ বছরের মধ্যে তিন দিনে সবচেয়ে বেশি বৃষ্টিপাতের রেকর্ড।

ভারতের আবহাওয়া অধিদপ্তরের পূর্বাভাস বলছে, চেরাপুঞ্জিতে আগামী ২৪ ঘণ্টায় আরও ৫৫০ মিলিমিটার বৃষ্টি হতে পারে। অন্যদিকে ব্রহ্মপুত্রের উজানে আসামে গুয়াহাটিতে ৩০০ মিলিমিটার বৃষ্টি হতে পারে। ওই দুই এলাকার ভাটি এলাকা হিসেবে বাংলাদেশের সিলেট ও কুড়িগ্রামে ওই পানি নামা শুরু করবে। এর আগে থেকেই ওই এলাকায় এমনিতেও বৃষ্টি বেশি ছিল। এর সঙ্গে নতুন পানি যোগ হয়ে বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হতে পারে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

এদিকে বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের হিসাবে, আজ সকাল থেকে সিলেট বিভাগের সব কটি নদ–নদীর পানি ও উত্তরাঞ্চলে তিস্তার পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে বইছে। দেশের বিভিন্ন নদ–নদীর ১০৬টি পয়েন্টের মধ্যে ৮৬টির পানি বাড়ছে, ২০টির কমছে।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের নির্বাহী প্রকৌশলী আরিফুজ্জামান ভূঁইয়া প্রথম আলোকে বলেন, সিলেট বিভাগের বন্যা পরিস্থিতি আরও দুই–তিন দিন অবনতি হতে পারে। উত্তরাঞ্চলের বন্যা পরিস্থিতিও দ্রুত খারাপ হতে পারে। কারণ, উজানে ভারী বৃষ্টি শুরু হয়েছে, বাংলাদেশের ভেতরেও বৃষ্টি চলছে।

এদিকে রাজধানীসহ দেশের বেশির ভাগ এলাকাজুড়ে আজ সকাল থেকে বৃষ্টি শুরু হয়েছে। রাজধানীতে আজ দুপুর পর্যন্ত ৩২ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। দেশের সবচেয়ে বেশি বৃষ্টি হয়েছে রংপুরে ১০৯ মিলিমিটার। আগামী ২৪ ঘণ্টায় বরিশাল ও খুলনা বিভাগের কয়েকটি স্থানে এবং দেশের বাকি এলাকার বেশির ভাগ স্থানে মাঝারি থেকে ভারী বৃষ্টি হতে পারে। এর মধ্যে উত্তরাঞ্চল ও সিলেট বিভাগের কোথাও কোথাও ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টি হতে পারে।

Related posts

যেভাবে কাটবেন বাণিজ্য মেলার টিকিট, নেই ভোগান্তি

News Desk

বৃষ্টিতে রাজধানীতে জলাবদ্ধতা, ভোগান্তি

News Desk

বিকাশ-রকেটে আনা যাবে রেমিট্যান্স

News Desk

Leave a Comment