Image default
বাংলাদেশ

দেশের উত্তরাঞ্চলে বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি

টানা ভারী বর্ষণ এবং পাহাড়ি ঢলে সিলেট ও সুনামগঞ্জসহ দেশের অনেক জেলায় বন্যা পরিস্থিতির তৈরি হয়েছে। লাখ লাখ মানুষ পানিবন্দি অবস্থায় আটকে আছে। এদিকে উত্তরাঞ্চলে বন্যা পরিস্থিতি এখনো অবনতির দিকে। কুড়িগ্রাম, লালমনিরহাট ও গাইবান্ধায় বাড়ছে পানি।

মধ্যাঞ্চলের টাঙ্গাইলেও বন্যায় প্লাবিত হয়েছে শতাধিক গ্রাম। রাজবাড়ীর গোয়ালন্দেও পানি বাড়ছে।

প্রবল স্রোতের কারণে সেখানে ধীরগতিতে চলছে ফেরি। এছাড়া মানিকগঞ্জের শিবালয় উপজেলার চরাঞ্চলে শুরু হয়েছে নদীভাঙন। এরই মধ্যে নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে হাজারেরও বেশি বাড়িঘর।

গতকাল মঙ্গলবার কুড়িগ্রামে ধরলা নদীর পানি সামান্য কমেছে, কিন্তু পানি বেড়েছে ব্রহ্মপুত্রে। সন্ধ্যায় সেতু পয়েন্টে ধরলা নদীর পানি বিপত্সীমার ৩৯ সেন্টিমিটার ও চিলমারী পয়েন্টে ব্রহ্মপুত্রের পানি বিপত্সীমার ৫৭ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে।

জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন অফিসের তথ্যানুসারে, ৪৯টি ইউনিয়নে এক লাখ ৪১ হাজার মানুষ পানিবন্দি অবস্থায় রয়েছে। বেসরকারি সূত্র বলছে, এই সংখ্যা আরো অনেক বেশি।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্যানুসারে, ১৫ হাজার ২০০ হেক্টর জমির ফসল তলিয়ে গেছে। সব মিলিয়ে জেলার ৩২৭টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সাময়িকভাবে পাঠদান বন্ধ রয়েছে।

লালমনিরহাটে নদীর পানি বাড়ায় হাতীবান্ধা উপজেলার সিন্দুর্ণা ও আদিতমারী উপজেলার মহিষখোচা ইউনিয়নে নদীভাঙন দেখা দিয়েছে। গত তিন দিনে এসব এলাকার অন্তত ৫০টি বাড়িঘর নদীগর্ভে তলিয়ে গেছে।

গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে তিস্তা ব্যারাজ (ডালিয়া) পয়েন্টে পানি বিপত্সীমার ২৪ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল।

গাইবান্ধার সব কটি নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। জেলা প্রশাসন জানিয়েছে, সুন্দরগঞ্জ, ফুলছড়ি, সাঘাটা ও গাইবান্ধা সদর উপজেলার ২৩টি ইউনিয়নে ৯৬টি গ্রাম বন্যার পানি প্রবেশ করেছে। পানি বৃদ্ধির ফলে ৪৭ হাজার ৫৬৩ জন মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে।

বগুড়ায় পানি এখনো বিপত্সীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। পাউবো উপবিভাগীয় প্রকৌশলী আসাদুল হক বলেন, গত ২৪ ঘণ্টায় যমুনা নদীর পানি ১০ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়ে মঙ্গলবার সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত বিপত্সীমার ৬৪ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

টাঙ্গাইলে মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়ার পাশাপাশি বিশুদ্ধ পানির সংকট দেখা দিয়েছে। এ ছাড়া নদীতীরবর্তী এলাকায় চোখে পড়েছে ভাঙন।

পানি উন্নয়ন বোর্ড জানায়, মঙ্গলবার সকাল পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় যমুনা নদীর পানি ১৫ সেন্টিমিটার বেড়ে বিপত্সীমার ৪৭ সেন্টিমিটার, ঝিনাই নদীর পানি ১৫ সেন্টিমিটার বেড়ে বিপত্সীমার ৫৪ সেন্টিমিটার এবং ধলেশ্বরী নদীর পানি ১৬ সেন্টিমিটার বেড়ে বিপত্সীমার ১২ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। টাঙ্গাইল সদর, কালিহাতী এবং ভূঞাপুর উপজেলার নিম্নাঞ্চল বেশি প্লাবিত হয়েছে। জেলার ১৮টি ইউনিয়নের প্রায় ১১৫টি গ্রামে পানি ঢুকেছে।

রাজবাড়ীর গোয়ালন্দে গতকাল মঙ্গলবার সকাল পর্যন্ত চব্বিশ ঘণ্টায় পানি বেড়েছে ২০ সেন্টিমিটার। সব মিলিয়ে গত ছয় দিনে পদ্মা নদীর গোয়ালন্দ পয়েন্টে পানি বৃদ্ধি পেয়েছে ১৩৭ সেন্টিমিটার।

বিআইডাব্লিউটিসির দৌলতদিয়া ঘাট ব্যবস্থাপক (বাণিজ্য) প্রফুল্ল কুমার চৌহান জানান, পদ্মায় পানি বৃদ্ধির পাশাপাশি স্রোতের তীব্রতা প্রতিনিয়ত বাড়ছে। ফেরিগুলো স্রোতের কারণে স্বাভাবিক গতিতে চলতে পারছে না। এতে ফেরি পারাপারে আগের চেয়ে সময় বেশি লাগছে।

এ ছাড়া ফেনীর ফুলগাজী ও পরশুরামের মুহুরী নদীর চারটি স্থানে বাঁধ ভেঙে গেছে। ওই স্থান দিয়ে পানি প্রবেশ করে মঙ্গলবার পর্যন্ত ১৫ গ্রাম প্লাবিত হয়েছে।

Related posts

অটোরিকশা-লেগুনা সংঘর্ষে প্রাণ গেলো প্রকৌশলীর

News Desk

আজকে টিকার দ্বিতীয় ডোজ নেবেন রাষ্ট্রপতি

News Desk

ঝালকাঠিতে ৪ কিমি বেড়িবাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত

News Desk

Leave a Comment