আল-জাজিরার খবরে বলা হয়েছে, বিক্ষোভে অংশ নেওয়া শিক্ষার্থীরা বলেছেন, শ্রীলঙ্কার অর্থনৈতিক সংকটের জন্য দায়ী প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া। দেশটি ১৯৪৮ সালে স্বাধীনতার পর থেকে আর কখনো এ রকম অর্থনৈতিক সংকটে পড়েনি। সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব নেওয়া রনিলের বিরুদ্ধে শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, তিনি দেশের চলমান সংকট নিরসনের প্রতিশ্রুতি দিয়ে ক্ষমতায় এলেও প্রতিশ্রুতি রক্ষা করেননি।
অর্থনৈতিক অব্যবস্থাপনা ও কোভিড মহামারির কারণে সাত দশকের মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ আর্থিক সংকটে পড়েছে শ্রীলঙ্কা। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ তলানিতে ঠেকায় জ্বালানি, ওষুধ, খাবারের মতো নিত্যপণ্য আমদানি করা যাচ্ছে না। ডিজেল ও পেট্রলের ক্রমাগত ঘাটতির কারণে জনগণের অসন্তোষ আরও বেড়েছে। এই সংকটের জন্য বর্তমান প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপক্ষে তথা রাজাপক্ষে পরিবারকে দায়ী করা হচ্ছে। বিক্ষোভের মুখে গত মাসে গোতাবায়ার ভাই মাহিন্দা রাজাপক্ষে প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে সরে দাঁড়ান। এর আগেই তাঁর আরও দুই ভাই ও ভাইপো মন্ত্রীর পদ থেকে সরে দাঁড়ান।
পদত্যাগ না করতে অনড় প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া স্বীকার করেছেন, তিনি দেশের অর্থনৈতিক পতন ঠেকানোর জন্য শুরুতেই যথেষ্ট পদক্ষেপ নেননি।
প্রেসিডেন্টের ক্ষমতা কমাতে সংবিধান সংশোধনকে যুগান্তকারী পদক্ষেপ হিসেবে মনে করা হচ্ছে। গতকাল মন্ত্রিসভা সংশোধনের অনুমোদন দিয়েছে, যাতে বিক্ষোভকারীদের ক্ষোভ কমতে পারে। সংবিধানের ২১তম সংশোধনী প্রস্তাবে বলা হয়েছে, সংবিধান সংশোধনের মাধ্যমে প্রেসিডেন্টের একচ্ছত্র আধিপত্য কমে কিছু ক্ষমতা পার্লামেন্টের হাতে ফিরবে এবং গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে সরকারের কমিশনগুলো স্বাধীনতা ভোগ করবে।
শ্রীলঙ্কার পর্যটনমন্ত্রী হারিন ফার্নান্দো এক টুইট বার্তায় বলেছেন, ২১তম সংশোধনী মন্ত্রিসভায় উত্থাপিত এবং পাস করা হয়েছে। প্রস্তাবটি এখন দেশের পার্লামেন্টে পাঠানো হবে। যেখানে এটি পাসের জন্য দুই-তৃতীয়াংশ পার্লামেন্ট সদস্যের ভোট প্রয়োজন।
গত এপ্রিলে ইতিহাসে প্রথমবারের মতো নিজেদের ঋণখেলাপি ঘোষণা করে শ্রীলঙ্কা। মারাত্মক আর্থিক সংকটে পড়ে ঋণ পরিশোধে ব্যর্থ হয়ে দেশকে দেউলিয়া ঘোষণা করতে বাধ্য হয় সরকার। এরপরই ভঙ্গুর অর্থনীতির গতি ফেরাতে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলসহ (আইএমএফ) দাতা সংস্থাগুলোর কাছে ৩০০ কোটি ডলার সাহায্য চায় সরকার। গতকাল আইএমএফের ৯ সদস্যের একটি প্রতিনিধিদল শ্রীলঙ্কার বাণিজ্যিক রাজধানী কলম্বোয় পৌঁছায়। এদিন শ্রীলঙ্কার জন্য ১৭তম ঋণ কর্মসূচি গঠন প্রক্রিয়া নিয়ে প্রধানমন্ত্রী রনিল বিক্রমাসিংহের সঙ্গে তাঁরা আলোচনা করেছেন।
এদিকে অর্থনৈতিক সংকট মোকাবিলায় এবং বেশি বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের জন্য বিদেশে কাজ করতে যেতে নারী কর্মীর বয়সসীমা কমিয়ে দিয়েছে শ্রীলঙ্কা। এখন থেকে দেশটির ২১ বছর বয়সী নারীরা বিদেশে কাজের জন্য যেতে পারবেন। আগে বিদেশে কাজের জন্য যেতে নারী কর্মীর বয়স ২৩ বছর নির্ধারিত ছিল। সৌদি আরবে ১৭ বছর বয়সী এক নারী কর্মীর মৃত্যুদণ্ডের পরিপ্রেক্ষিতে ২০১৩ সালে বয়সসীমা নির্ধারণ করেছিল কলম্বো।
বিদেশে কর্মরত শ্রীলঙ্কানদের কাছ থেকে পাঠানো রেমিট্যান্স দীর্ঘদিন ধরে দেশটির বৈদেশিক মুদ্রার মূল উৎস। প্রতিবছর প্রায় ৭ বিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স আসে। কিন্তু এ বছর তা অর্ধেকে নেমেছে। ২ কোটি ২০ লাখ জনসংখ্যার দেশটির ১৬ লাখ মানুষ বিদেশে কাজ করেন। এর মধ্যে বেশির ভাগ বিদেশি আয় আসে মধ্যপ্রাচ্য থেকে।