বগুড়া জেলা মহিলা দলের যুগ্ম সম্পাদক সুরাইয়া জেরিন রনির জামিন আবেদন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠিয়েছেন আদালত। রবিবার (১৭ জুলাই) দুপুরে দলীয় নেতাকর্মীদের সঙ্গে নিয়ে জেলা জজ আদালতে হাজির হয়ে জামিন চাইলে তাকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন বিচারক নরেশ চন্দ্র সরকার। আদালতের সরকারি কৌঁসুলি আবদুল মতিন এ তথ্য জানিয়েছেন।
এ সময় আদালত চত্বরে ছাত্রলীগ, যুবলীগের বিক্ষুব্ধ নেতাকর্মীরা বিএনপির এই নেত্রীর দিকে পচা ডিম ও জুতা নিক্ষেপ করেন। এ ছাড়া জেলা মহিলা লীগের নির্বাহী সদস্য শাবেরাত মুন্নী মহিলা দলের এই নেত্রীর গালে চড়ও মারেন। তখন উভয় দলের নেতাকর্মীদের মধ্যে উত্তেজনা দেখা দিলে পুলিশ দুই পক্ষকে শান্ত করে।
জানা গেছে, গত ২৭ মে গাবতলী উপজেলা বিএনপির দ্বি-বার্ষিক সম্মেলনে সুরাইয়া জেরিন রনি প্রধানমন্ত্রীকে উদ্দেশ্য করে কটূক্তিমূলক বক্তব্য দেন। পরদিন জেলা আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক সুলতান মাহমুদ খান গাবতলী থানায় মামলা করলেও পুলিশ তা জিডি হিসেবে গ্রহণ করে। এদিকে, প্রধানমন্ত্রীকে কটূক্তির প্রতিবাদে গত ২৯ মে গাবতলী উপজেলা আওয়ামী লীগ প্রতিবাদ সমাবেশের আয়োজন করে।
সেখানে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি নেতাকর্মীদের মাঝে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। পুলিশ লাঠিচার্জ ও রাবার বুলেট নিক্ষেপ করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে। উভয়পক্ষের কমপক্ষে ৩০ জন আহত হন। ৩১ মে গাবতলী পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি আজিজার পাইকার বাদী হয়ে সুরাইয়া জেরিন রনিসহ বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের ১৩৩ নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মামলা করেন। এই নেত্রীর শাস্তির দাবিতে বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ হয়েছে। কুশপুতুলও দাহ করা হয়েছে। মহিলা দলের এই নেত্রী হাইকোর্ট থেকে ছয় সপ্তাহের অন্তর্বর্তীকালীন জামিন নেন।
রবিবার দুপুরে রনি বিপুল সংখ্যক দলীয় নেতাকর্মী ও উকিল পরিবেষ্টিত হয়ে জেলা জজ আদালত চত্বরে আসেন। খবর পেয়ে ছাত্রলীগ ও যুবলীগের বিক্ষুব্ধ নেতাকর্মীরা উপস্থিত হন। তাদের ভয়ে বিএনপির এই নেত্রী শৌচাগারে আশ্রয় নেন। খবর পেয়ে যুবদল ও স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতাকর্মীরা আদালত চত্বরে এলে দুই পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা দেখা দেয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে আদালত চত্বরে বিপুল সংখ্যক পুলিশ মোতায়েন করা হয়। পুলিশ রনিকে হেফাজতে নিয়ে আদালতে হাজির করেন। আইনজীবী জামিন প্রার্থনা করলে জেলা জজ নরেশ চন্দ্র সরকার শুনানি শেষে নামঞ্জুর করে রনিকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।
এদিকে, দুপুর আড়াইটার দিকে পুলিশের পাহারায় তাকে আদালত ভবন থেকে নিচে প্রিজনভ্যানে তোলার জন্য নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল। তখন সিঁড়িতে জেলা মহিলা লীগের নেত্রী শাবেরাত মুন্নী ক্ষিপ্ত হয়ে রনির গালে থাপ্পড় দেন। তখন দলীয় নেতাকর্মীরা উত্তেজিত হয়ে উঠলে পুলিশ দ্রুত আসামিকে প্রিজনভ্যানে তোলেন। তখন ছাত্রলীগ ও যুবলীগের নেতাকর্মীরা বিএনপির এই নেত্রীকে লক্ষ্য করে ডিম ও জুতা নিক্ষেপ করেন। এ অবস্থায় পুলিশ দ্রুত প্রিজনভ্যানটি নিয়ে আদালত ত্যাগ করে।
চড় দেওয়ার কথা স্বীকার করে বগুড়া জেলা মহিলা লীগের নির্বাহী সদস্য শাবেরাত মুন্নী জানান, রনি প্রকাশ্যে জনসভায় প্রধানমন্ত্রীকে কটূক্তি করে বক্তব্য দেন। ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণের জন্য তিনি রনির গালে চড় দিয়েছেন। এর জন্য তিনি যেকোনো সাজা মাথা পেতে নেবেন।
বগুড়া জেলা ছাত্রলীগের সাবেক প্রচার সম্পাদক মুকুল ইসলাম জানান, ওই নেত্রী প্রধানমন্ত্রীকে নিয়ে ঔদ্ধত্যপূর্ণ বক্তব্য রাখায় শুধু দলীয় নেতাকর্মী নয়, সাধারণ মানুষ ও তাদের দলীয় নেতাকর্মীরাও ক্ষুব্ধ হন। তাই আজ তাকে লক্ষ্য করে অর্ধশতাধিক পঁচা ডিম ও জুতা-স্যান্ডেল নিক্ষেপ করে ঘৃণা প্রকাশ করা হয়েছে।
বগুড়া সদর পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ (ইন্সপেক্টর) তাজমিলুর রহমান জানান, আদালত চত্বরে দুই পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা বিরাজ করছিল। তবে পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখে। আদালতের আদেশে রনিকে কারাগার কর্তৃপক্ষের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।
একই মামলায় গাবতলী উপজেলা বিএনপি সভাপতি সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান মোরশেদ মিল্টনসহ তিন নেতাকে কারাগারে পাঠানো হয়েছিল।