ঘাঘট নদীর অব্যাহত ভাঙনে রংপুর সিটি করপোরেশনের ১০ নম্বর ওয়ার্ডের বখতিয়ারপুর উচাটারী মহল্লার ১০টি বাড়ি বিলীন হয়ে গেছে। ঈদগাহ মাঠসহ আরও ছয় পরিবারের ১৫টি বাড়ি নদীগর্ভে বিলীনের ঝুঁকিতে রয়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ড, জেলা প্রশাসন ও সিটি করপোরেশনকে একাধিকবার জানানোর পরও ভাঙন প্রতিরোধে কোনও ব্যবস্থা না নেওয়ার অভিযোগ এলাকাবাসীর।
বখতিয়ারপুর উচাটারীসহ আশপাশের বেশ কয়েকটি মহল্লার ওপর দিয়ে ঘাঘট নদী প্রবাহিত। এই নদী খরস্রোতা ওয়ায় নদী ভাঙন ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। গত এক সপ্তাহে চারটি পরিবারের ১০টি ঘরবাড়ি বিলীন হয়ে গেছে। সর্বশান্ত পরিবারগুলো বিভিন্ন স্থানে পরিবার-পরিজন নিয়ে মানবেতর দিন কাটাচ্ছে। ভাঙনের তীব্রতা বৃদ্ধি পাওয়ায় ওই এলাকার একমাত্র ঈদগাহ মাঠটি নদীগর্ভে বিলিন হতে হতে এখন ৪-৫ শতক জায়গায় এসে ঠেকেছে। বাকিটুকু বিলীন হওয়ার পথে।
বখতিয়ারপুর উচাটারী মহল্লার বাসিন্দা আব্দুল মজিদ ও মোশারফ হোসেন জানান, তাদের ঈদগাহ মাঠটি বিশাল এলাকাজুড়ে ছিল। এখানে প্রতি ঈদে প্রায় ৩-৪ হাজার মানুষ নামাজ পড়তো। কিন্তু নদী ভাঙনে বিলীন হতে হতে এখন ৪-৫ শতক জায়গা এসে ঠেকেছে। এটাও যেকোনও দিন নদীীগর্ভে বিলীন হয়ে যাবে।
সাইফুল ইসলাম নামে এক বাসিন্দা জানান, তার ১০ শতক জায়গাজুড়ে চার কক্ষবিশিষ্ট আধাপাকা বাড়ি ছিল। পুরোটাই নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। এখন তাদের বাড়িঘর নেই। মানুষের জমিতে দুটি টিনের চালা তুলে পরিবার-পরিজন নিয়ে মানবেতর দিন কাটছে।
স্থানীয় শরিফুল মিয়া বলেন, ‘ঘাঘট নদীর ভাঙন প্রতিরোধের জন্য অনেকবার সিটি করপোরেশনে গিয়েছি। কিন্তু কোনও পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলরও খোঁজ নিতেও আসেননি।’
রফিক নামে এক যুবক বলেন, ‘নদী ভাঙন থেকে রক্ষা করতে এলাকার লোকজন কয়েকদিন ধরে জেলা প্রশাসকের কাছে স্মারকলিপি দেওয়া হয়েছে। এরপর সিটি করপোরেশনের ভারপ্রাপ্ত মেয়র মাহমুদুর রহমান টিটোর সঙ্গে দেখা করে ভাঙনরোধে ব্যবস্থা নেওয়ার অনুরোধ করেছি। তিনি আশ্বাস দিয়েছেন, কিন্তু কাউকে কোনও পদক্ষেপ নিতে দেখা যাচ্ছে না।
এলাকাবাসী জানান, ভাঙন প্রতিরোধে ব্যবস্থা নিতে পানি উন্নয়ন বোর্ডের প্রধান প্রকৌশলীর সঙ্গে কার্যালয়ে দেখা করেছেন। কিন্তু আপাতত বরাদ্দ নেই জানিয়ে তিনি বলেন, ‘দেখা যাক কী করা যায়’।
রংপুর সিটি করপোরেশনের ভারপ্রাপ্ত মেয়র মাহমুদুর রহমান টিটো জানান, তিনি করপোরেশনের প্রকৌশলীকে নিয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। ভাঙন প্রতিরোধে সাময়িক ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের প্রধান প্রকৌশলী আমিরুল ইসলাম জানান, ঘাঘট নদী ভাঙন প্রতিরোধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় অর্থ নেই। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।