‘ঐতিহাসিক’ চুক্তির পরেই ওদেসা বন্দরে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা রাশিয়ার
আন্তর্জাতিক

‘ঐতিহাসিক’ চুক্তির পরেই ওদেসা বন্দরে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা রাশিয়ার

ইউক্রেনে রাশিয়ার হামলা। ফাইল ছবি

ইউক্রেন থেকে সমুদ্রপথে খাদ্যশস্য রপ্তানি শুরু করার বিষয়ে রাশিয়ার সাথে চুক্তি সই হওয়ার পরদিনই ইউক্রেনের বৃহৎ একটি বন্দর বিস্ফোরণে কেঁপে ওঠেছে। বন্দর শহর ওডেসাতে চালানো এই ক্ষেপণাস্ত্র হামলার পর কিয়েভ ও মস্কোর মধ্যে হওয়া এই সমঝোতার ভবিষ্যৎ নিয়ে বড় ধরনের সংশয় দেখা দিয়েছে। এই চুক্তিতে রাশিয়া প্রতিশ্রুতি দিয়েছে যে তারা ওডেসা বন্দর থেকে খাদ্যশস্য বহনকারী কোনো মালবাহী জাহাজের ওপর আক্রমণ করবে না। তবে স্থানীয় খবরে বলা হচ্ছে আজকের এই হামলায় বন্দরের অবকাঠামো ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। খবর বিবিসির

ইউক্রেনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন মুখপাত্র বলেছেন, এখন যদি খাদ্যশস্য রপ্তানির চুক্তি ভেস্তে যায় তাহলে তার জন্য দায়ী হবে রাশিয়া।

ইউক্রেনের সামরিক বাহিনী বলছে, চারটি ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করা হয়েছিল যার দুটিকে তারা গুলি করে মাটিতে নামিয়ে এনেছে। বাকি দুটি ক্ষেপণাস্ত্র শনিবার সকালে ওডেসা শহরে আঘাত হেনেছে।

এই হামলার বিষয়ে রাশিয়ার পক্ষ থেকে এখনও কোনো মন্তব্য করা হয়নি।

ইস্তাম্বুলে চুক্তি সইয়ের সময় জাতিসংঘ মহাসচিব গুতেরেজ ও প্রেসিডেন্ট এরদোয়ানের সাথে রুশ প্রতিরক্ষামন্ত্রী সের্গেই শোইগু (পেছনে বামে) এবং তুর্কি প্রতিরক্ষামন্ত্রী হুলুসি আকছার (পেছনে ডানে)

ইউক্রেন ও রাশিয়ার যুদ্ধের মধ্যেই গতকাল তুরস্কের ইস্তাম্বুল শহরে এই চুক্তিটি সই হয় এবং জাতিসংঘের পক্ষ থেকে এটিকে ঐতিহাসিক সমঝোতা বলে উল্লেখ করা হয়।

কিন্তু চুক্তি সই হওয়ার চব্বিশ ঘণ্টা পার হওয়ার আগেই ইউক্রেনের বন্দরে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালানো হলো।

ইউক্রেনের সামরিক বাহিনীর দক্ষিণাঞ্চলীয় কমান্ড সেন্টার সোশ্যাল মিডিয়ায় দেওয়া এক পোস্টে বলেছে দুটো কালিবর ক্ষেপণাস্ত্র ওডেসা বন্দরে আঘাত করেছে। আর বাকি দুটোকে বিমান-প্রতিরোধী ব্যবস্থার সাহায্যে ভূপাতিত করা হয়েছে।

স্থানীয় একজন এমপি ওলেক্সি হোনচারেঙ্কো টেলিগ্রামে লিখেছেন হামলার পর শহরের বন্দরে আগুন ধরে যায়। তিনি লিখেছেন, “ঘৃণ্য ওই লোকদের এক হাতে চুক্তি এবং আরেক হাতে ক্ষেপণাস্ত্র।”

“একারণে আমাদের বিমান প্রয়োজন এবং কৃষ্ণ সাগরে রাশিয়ার যতো নৌবহর আছে সেগুলোকে ডুবিয়ে দিতে হবে। খাদ্যশস্য রপ্তানির জন্য এটাই হবে সবচেয়ে ভালো ব্যবস্থা।”

এই হামলায় কেউ হতাহত হয়েছে কি না তা এখনও পরিষ্কার নয়।

শুক্রবার কিয়েভ ও রাশিয়ার মধ্যে বহুল প্রতীক্ষিত এই চুক্তিটি সই হয়। বলা হচ্ছে ইউক্রেনের ভেতরে যে লাখ লাখ টন খাদ্যশস্য আটকা পড়ে আছে এই চুক্তির ফলে সেগুলো রপ্তানি করা শুরু হবে।

পাঁচ মাস আগে যুদ্ধ শুরুর পরপরই রাশিয়া ইউক্রেনের উপকূলের কাছে কৃষ্ণসাগরে নৌ অবরোধ দিলে ইউক্রেনের রপ্তানি মুখ থুবড়ে পড়ে।

ইউক্রেন জুড়ে বিভিন্ন গুদামে প্রচুর খাদ্যশস্য মাসের পর মাস রপ্তানির জন্য পড়ে রয়েছে। কৃষ্ণসাগর তীরবর্তী ওডেসা বন্দরে গুদামেই এখন দুই কোটি টনের মত খাদ্যশস্য মজুদ রয়েছে। এগুলো এখন আফ্রিকা এবং মধ্যপ্রাচ্যের যেসব দেশে খাদ্যের অভাব দেখা দিয়েছে সেখানে রপ্তানি করা যাবে বলে আশা করা হচ্ছে।

এই চুক্তিতে রাশিয়া খাদ্যশস্যবাহী ইউক্রেনীয় জাহাজে হামলা না করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। আর ইউক্রেন অঙ্গীকার করেছে এসব জাহাজে অস্ত্র বহন করা হচ্ছে কি না রাশিয়াকে তারা সেটি পরীক্ষা করে দেখার অনুমতি দিবে।

প্রায় দু’মাস ধরে আলোচনার পর চুক্তিটি সই হয় এবং এটি ১২০ দিন কার্যকর থাকবে বলে সমঝোতায় বলা হয়।

চুক্তিটি মানা হচ্ছে কি না তা পর্যবেক্ষণের জন্য ইস্তাম্বুলে একটি মনিটরিং সেন্টার প্রতিষ্ঠার কথা বলা হয়েছে যাতে জাতিসংঘ, তুরস্ক, ইউক্রেন এবং রাশিয়ার কর্মকর্তারা কাজ করবেন। বলা হয়েছে উভয়পক্ষ রাজি হলে চুক্তিটি নবায়ন করা যেতে পারে।

ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির অফিসের প্রধান আন্দ্রে ইয়েরমাক ওডেসা বন্দরে এই হামলার নিন্দা করেছেন এবং রাশিয়ার বিরুদ্ধে “পরিকল্পিতভাবে খাদ্য সঙ্কট সৃষ্টি করার” অভিযোগ করেছেন।

কিয়েভ থেকে বিবিসির সাংবাদিক পল অ্যাডামস বলছেন, ওডেসা বন্দরে এই হামলার পর চুক্তির ভবিষ্যৎ নিয়ে বেশ কিছু প্রশ্ন তৈরি হয়েছে।

তিনি বলছেন চুক্তি লঙ্ঘন করা হলে রাশিয়ার বিরুদ্ধে কী ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হবে এই প্রশ্নের জবাবে জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস বলেছেন এরকম কোনো ব্যবস্থা তাদের কাছে নেই, তবে সেরকম কিছু হলে তা কিছুতেই গ্রহণযোগ্য হবে না।

Source link

Related posts

ইউক্রেনের ইইউ সদস্যপদ নিয়ে বিরোধের ইঙ্গিত

News Desk

নিজেদেরকে ‘পরমাণু অস্ত্রধারী’ রাষ্ট্র ঘোষণা উত্তর কোরিয়ার

News Desk

ভারতকে সহায়তার প্রস্তাব দিয়ে মোদিকে শি জিনপিংয়ের চিঠি

News Desk

Leave a Comment