সিরাজগঞ্জ সদরের বহুলী ইউনিয়নের খাগা উচ্চ বিদ্যালয়ের গাছ নিয়ম না মেনেই কেটে ফেলা হচ্ছে। রবিবার (৩১ জুলাই) দুপুরে সরেজমিন দেখা যায়, বিদ্যালয়ের মাঠের পশ্চিম পাশের আঞ্চলিক সড়কের পাশ থেকে কাটা হচ্ছে মেহগনি গাছগুলো। ইতোমধ্যেই বিশালাকৃতির পাঁচটি মেহগনি ও একটি কাঁঠাল গাছ কাটা হয়েছে। গাছ কাটার জন্য ভেঙে ফেলা হয়েছে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতরের আঞ্চলিক সড়কের কিছু অংশ। গাছকাটা শ্রমিকরা জানান, প্রধান শিক্ষকের নির্দেশে তারা গাছগুলো কাটছেন।
এ বিষয়ে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মহিদুর রহমান বলেন, ‘গাছগুলো কাটার জন্য ম্যানেজিং কমিটির পক্ষ থেকে একটা রেজুলেশন করা হয়েছে। ওখানে একটা সীমানা প্রাচীর নির্মাণ করা হবে, তাই গাছগুলো কাটা হচ্ছে। কাটা গাছের কিছু অংশ বিদ্যালয়ের একটি ঘর নির্মাণে ব্যবহার করা হবে এবং বাকিগুলো বিক্রি করা হবে।’
গাছগুলো কে কাটছে, জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘মূলত বিদ্যালয়ের কমিটির পক্ষ থেকে গাছগুলো কাটা হচ্ছে। সেখানে ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি এবং আমিসহ সবাই আছি।’
এ ব্যাপারে বহুলী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি ও বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি টিএম মঞ্জুরুল ইসলাম মঞ্জু বলেন, ‘আমরা এখানে একটা সীমানা প্রাচীর নির্মাণ করবো। সীমানা প্রাচীর নির্মাণ করার জন্য গাছগুলো কাটা দরকার। যেহেতু গাছগুলো বিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে লাগানো হয়েছিল তাই আমরাই সেগুলো কেটে নিচ্ছি।’
স্থানীয় বহুলী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ফরহাদ হোসেন বলেন, ‘এই গাছগুলোর প্রকৃত মালিক ইউনিয়ন পরিষদ। কিন্তু আমাকে এ বিষয়ে কিছুই জানানো হয়নি। যদি গাছগুলো কাটার প্রয়োজন হলে নিয়ম অনুযায়ী কাটতে হবে।’
সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা এলিজা সুলতানা বলেন, ‘শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের গাছ কাটতে হলে একটা কমিটি আছে, তাদের মাধ্যমে কাটতে হবে। এই কমিটির সভাপতি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এবং সদস্য সচিব থাকেন বন বিভাগের একজন কর্মকর্তা। তারা আবেদন করবেন এবং সে আবেদন ঢাকায় যাবে। সেখান থেকে অনুমোদন হয়ে আসার পরে সেই গাছের একটা মূল্য নির্ধারণ হবে। সেই নির্ধারিত টাকা ব্যাংকে জমা দেওয়ার পরেই তারা গাছগুলো কাটতে পারবেন।’
তিনি আরও বলেন, ‘তারা যেহেতু নিয়ম না মেনে কাজগুলো কাটছেন তাই অবশ্যই বিষয়টি তদন্ত সাপেক্ষে তাদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
সদর উপজেলা বন কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) মো. মামুনুল রশীদ খান বলেন, ‘তারা এভাবে ইচ্ছে করলেই গাছগুলো কাটতে পারেন না। এর জন্য নির্ধারিত কিছু নিয়ম আছে। তাদের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আমরা (বন বিভাগ) সেই গাছের মূল্য নির্ধারণ করে দেবো এবং পরবর্তী সময়ে টেন্ডারের মাধ্যমে বিক্রি করতে হবে। এর বাইরে এই গাছগুলো কাটার কোনও সুযোগই নেই।’
সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মাশুকাতে রাব্বি বলেন, তারা এভাবে গাছগুলো কাটতে পারেন না। তারা এর জন্য কোনো অনুমতিও নেননি। আমি এখনই মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তাকে এবিষয়ে ব্যাবস্থা নিতে বলছি।
সড়ক ভেঙে ফেলার ব্যাপারে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতরের (এলজিইডি) সিরাজগঞ্জের নির্বাহী প্রকৌশলী মিজানুর রহমান বলেন, ‘বিষয়টি আমার জানা নেই। আমি উপজেলা প্রকৌশলীকে এ বিষয়ে ব্যাবস্থা নিতে বলছি।’
বিভাগীয় বন কর্মকর্তা কাশ্যপী বিকাশ চন্দ্র জানান, গাছ কাটার জন্য আবেদন করলে বন বিভাগ সেই গাছের মূল্য নির্ধারণ করে দেবে এবং পরে টেন্ডারের মাধ্যমে সেই গাছ বিক্রি করতে হবে। তারা যদি এগুলো না করে থাকেন তাহলে কর্তৃপক্ষ তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে।