বাসের টিকিট না পেয়ে কিশোরগঞ্জের ভৈরব থেকে ঢাকায় আসার জন্য একটি প্রাইভেট কারে উঠেছিলেন একটি বেসরকারি ব্যাংকের কর্মকর্তা আল–মামুন। গাড়িটি নরসিংদী আসার পর যাত্রী ছদ্মবেশে থাকা চারজন ছিনতাইকারী তাঁর হাত–পা ও চোখ বেঁধে ফেলে। গলায় ছুরি ধরে পকেটে থাকা মুঠোফোন, মানিব্যাগ কেড়ে নেওয়া হয়।
মানিব্যাগে ব্যাংকের কার্ড ছিল। পরে হত্যার হুমকি দিয়ে আল–মামুনের কাছ থেকে গোপন নম্বর জেনে নরসিংদীতে ডাচ্–বাংলা ব্যাংকের বুথ থেকে ১ লাখ ৯১ হাজার টাকা তুলে নেয় ছিনতাইকারীরা। একপর্যায়ে ২০০ টাকা পকেটে দিয়ে আল–মামুনকে ঢাকা–সিলেট মহাসড়কের নরসিংদীর বাবুরহাট এলাকার একটি হোটেলের সামনে হাত–পা বাঁধা অবস্থায় ফেলে পালিয়ে যায় তারা।
১০ সেপ্টেম্বর রাতে ভৈরব থেকে ঢাকায় আসার পথে ছিনতাইয়ের শিকার হন একটি বেসরকারি ব্যাংকের ঢাকার শ্যামপুর ক শাখার কর্মকর্তা আল–মামুন। সেই রাতের ঘটনার বর্ণনা দিয়ে গত শনিবার আল–মামুন বলেন, ছিনতাইকারীরা যখন তাঁকে রাস্তায় ফেলে যায় তখন গভীর রাত। তিনি কাছের একটি বাজারে গিয়ে এক নিরাপত্তাকর্মীর মুঠোফোন থেকে জাতীয় জরুরি সেবা নম্বর ৯৯৯–এ ফোন করেন। এরপর নরসিংদী সদর ও মাধবদী থানা পুলিশের সদস্যরা ঘটনাস্থলে আসেন। দুই থানার পুলিশ সদস্যরা কথা বলে তাঁকে মাধবদী থানায় নিয়ে যান। কিন্তু থানায় কোনো অভিযোগ না নিয়ে তাঁকে ঢাকার একটি বাসে তুলে দেওয়া হয়।
ঘটনার চার দিন পর এ বিষয়ে একটি লিখিত অভিযোগ নিয়ে আবার নরসিংদীতে যান বলে জানান আল-মামুন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘অভিযোগ দেখে নরসিংদী সদর থানার ওসি বলেন, “আপনি ব্যাংকে চাকরি করেন, এই ভুল কেমনে করলেন? বেঁচে আছেন শুকরিয়া করে চলে যান।”’
ব্যাংকের কার্ড দিয়ে ছিনতাইকারীরা এত টাকা কীভাবে তুলে নিল জানতে চাইলে আল–মামুন বলেন, কার্ডের গোপন নম্বর নিয়ে রাত ১২টার আগে ৯১ হাজার টাকা তোলা হয়। বাকি টাকা তোলা হয় রাত ১২টার পর।
যা বললেন দুই থানার ওসি
আল–মামুন জানান, ঘটনার পর ৯৯৯–এ ফোন করলে মুঠোফোনে কনফারেন্সে তাঁর সঙ্গে নরসিংদী সদর ও মাধবদী থানার পুলিশ সদস্যদের কথা বলিয়ে দেওয়া হয়। দুই থানার কর্মকর্তারা প্রায় কাছাকাছি সময়ে তাঁর কাছে ছুটে আসেন। তাঁরা তাঁকে নিয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। পরে তাঁরা নিজেদের মধ্যে আলোচনা করে তাঁকে মাধবদী থানায় নিয়ে যান।
আল–মামুন বলেন, ‘থানায় নেওয়ার পরে পুলিশ আমার অভিযোগ না নিয়ে বলে, ঘটনাস্থল নাকি তাদের থানা এলাকার মধ্যে পড়েনি। এমন একটা পরিস্থিতির মধ্যে আমি ভয়ে কাঁপছিলাম। তখন আমি পুলিশকে বলেছিলাম, এখন অনেক রাত, আমাকে থানায় থাকতে দিন, সকালে চলে যাব। কিন্তু পুলিশ আমাকে ভোর সাড়ে চারটার দিকে ১০০ টাকা দিয়ে গাড়িতে তুলে দেয়।’