টি-টোয়েন্টি মানেই যেন চার ছক্কার ধুম-ধামাকা ক্রিকেট। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের সুপার টুয়েলভের প্রথম ম্যাচেই এই কথাটির যথার্থই প্রয়োগ দেখালেন নিউজিল্যান্ডের ব্যাটাররা। মারকাটারি ব্যাটিংয়ে স্বাগতিক অস্ট্রেলিয়ার বোলারদের ওপর দিয়ে যেন তান্ডবলীলা চালালেন কিউই ব্যাটাররা। বিধ্বংসী ব্যাটিংয়ে প্রথম ইনিংসে নিউজিল্যান্ড তুলেছে ৩ উইকেটে ২০০ রান।
সিডনি ক্রিকেট গ্রাউন্ডে সুপার টুয়েলভের প্রথম ম্যাচে টস জিতে নিউজিল্যান্ডকে ব্যাটিংয়ে পাঠিয়েছিলো অজি অধিনায়ক অ্যারন ফিঞ্চ, তবে তার সিদ্ধান্তটি যে ভুল ছিলো সেটিই যেন চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিলেন কিউই ব্যাটাররা।
অজি বোলারদের ওপর তান্ডবের শুরুটা করেছিলেন দুই কিউই ওপেনার ফিন অ্যালেন আর ডেভন কনওয়ে। বিশেষত শুরুতে নেমেই ফিন অ্যালেনের ব্যাট যেন চলেছে পুরো খাপখোলা তলোয়ারের মতো। দুই ওপেনারের বিধ্বংসী ব্যাটিংয়ে পাওয়ার প্লে’র ছয় ওভারেই কিউইরা তুলেছে ১ উইকেটে ৬৫ রান।
ব্যাটিংয়ে নেমেই অজি বোলারদের ওপর তান্ডব শুরু করেন অ্যালেন। মিচেল স্টার্কের প্রথম ওভার থেকেই তুলে নেন ১৪ রান। শুরু যে করলেন তারপর সামনে যাকে পেয়েছেন মারকাটারি ব্যাটিংয়ে তার বলকেই করেছেন বাউন্ডারি ছাড়া।
তাকে দেখেই যেন তেতে অঠেন কনওয়ে। জশ হ্যাজেলউডের পরের ওভারের প্রথম বলেই বাউন্ডারি দিয়ে শুরু করেন এই ওপেনার। তবে তারে চেয়ে বেশি মারমুখী ছিলেন অ্যালেন। এই ওভার থেকে পরে আরও দুই চারে কিউইরা তুলে নেয় ১৫ রান।
প্যাট কামিন্সের তৃতীয় ওভার থেকে অ্যালেন তুলে নেন ১৭ রান। মার্কাস স্টোয়নিসের করা চতুর্থ ওভারে কিছুটা কম হলেও ১০ রান তোলএন দুই কিউই ওপেনার। চার ওভারেই নিউজিল্যান্ডের স্কোরবোর্ডে উঠে যায় বিনা উইকেটে ৫৬ রান।
ফিন অ্যালেনের তান্ডবলীলার ভেতরেই অজিদের ত্রাতা হয়ে উপস্থিত হন নিজের আগের ওভারে ১৫ রান দেওয়া হ্যাজেলউড। পঞ্চম ওভারের প্রথম বলেই দারুন এক ইয়র্কারে ফিন অ্যালেনের স্ট্যাম্প উড়িয়ে সাজঘরে পাঠান অজি পেস তারকা। তবে ফেরার আগে ৫ চার আর ৩ ছক্কায় ১৬ বলে বিধ্বংসী ৪২ রানের ইনিংস খেলে নিউজিল্যান্ডকে উড়ন্ত সূচনা এনে দিয়েই ফিরেছেন অ্যালেন।
এক ওপেনারের বিদায়ের পর কিউই অধিনায়ক কেন উইলিয়ামসন ক্রিজে এসে প্রথম তিন বল দেখেশুনে কাটিয়ে দিয়ে চতুর্থ বলে নিজের রানের খাতা খোলেন বাউন্ডারি মেরে। অই ওভার থেকে ১ উইকেটের বিনিময়ে অই ৪ রানই সংগ্রহ করে কিউইরা।
পাওয়ার প্লে’র শেষ ওভারেও অবশ্য ৫ রান তুলতে পারে ব্ল্যাক ক্যাপসরা। তবে ফিন অ্যালেনের গড়ে দিইয়ে যাওয়া ভিতের ওপর দাঁড়িয়ে পাওয়ার প্লে’র ৬ ওভার শেষেই ১ উইকেটে ৬৫ রান তোলে নিউজিল্যান্ড।
পাওয়ার প্লে’র পর অবশ্য কিউইদের রান তোলার গতি ধীর হয়েছে কিছুটা। তবে কনওয়ে আর উইলিয়ামসনের জুটি আর ভাঙতে পারেননি অজি বোলাররা। ১০ ওভার শেষে ১ উইকেটে ৯৭ রান তোলে কিউইরা।
১৩তম ওভারের প্রথম বলেই ছয় মেরে নিজের ফিফটি তুলে নেনে ৩৬ বলে। ওভারের শেষ বলে গিয়ে অস্ট্রেলিয়াকে ব্রেক থ্রু এনে দেন অ্যাডাম জাম্পা। দলীয় ১২৫ রান দ্বিতীয় উইকেট হারায় নিউজিল্যান্ড। ২৩ বল ২৩ রান করতে জাম্পার এলবিডব্লিউয়ের ফাঁদে পড়েন কিউই অধিনায়ক উইলিয়ামসন।
চার নম্বরে নামা গ্লেন ফিলিপস অবশ্য তেমন কিছু করতে পারেননি। ১৬তম ওভারের শেষ ডেলিভারিতে ১০ বলে ১২ রান করেই হ্যাজেলউডের বলে তার হাতেই ক্যাচ দিয়ে ফেরেন ফিলিপস। ১৫২ রানে ৩য় উইকেট হারায় কিউইরা।
এরপরের শেষ আর ওভারে অজি বোলারদের ওপর দিয়ে টর্নেডো বইয়ে দিয়েছেন কনওয়ে আর জিমি নিশাম মিলে। সেস চার ওভারে ১২ করে রানরেটে নিউজিল্যান্ড তুলেছে ৪৮ রান।
ইনিংসের শেষ বলে ছক্কা মেরে ২০০ রানে নিয়ে গিয়ে ইনিংস শেষ করেন কনওয়ে। ৭ চার আর ২ ছক্কায় ৫৮ বলে ৯২ রান করে অপরাজিত থেকেই মাঠ ছাড়েন এই ওপেনার। ২০০.০০ স্ট্রাইক রেটে ১৩ বল খেলে ২৬ রানের ইনিংস খেলে দলের রানকে ২০০ পর্যন্ত নিয়ে যেতে কনওয়েকে যোগ্য সঙ্গ দিয়েছেন নিশামও।
অজি বোলারদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ঝড় গিয়েছে ওয়ানডে আর টেস্ট অধিনায়ক প্যাট কামিন্স আর জশ হ্যাজেলউডের ওপর দিয়ে। ৪ ওভারে ৪৬ রান দিয়ে উইকেটশূন্য ছিলেন কামিন্স, আর ২টি উইকেট পেলেও নিজের ৪ ওভারে হ্যাজেলউদ খরচ করেছেন ৪১ রান।