রাজীব গান্ধীর হত্যাকারী নলিনী বললেন তিনি অনুতপ্ত
আন্তর্জাতিক

রাজীব গান্ধীর হত্যাকারী নলিনী বললেন তিনি অনুতপ্ত

নলিনী শ্রীহরণ

ভারতের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী রাজীব গান্ধীকে হত্যার অপরাধে যাবজ্জীবন সাজা প্রাপ্ত ছয় জন আসামীকে যেদিন সুপ্রিম কোর্ট মুক্তির আদেশ দিল, তার এক ঘণ্টার মধ্যেই ৩২ বছর কারাগারে বন্দী নলিনী শ্রীহরণসহ সবাই জেল থেকে বেরিয়ে এসেছিলেন।

মুক্তিপ্রাপ্ত ওই ছয় জনের মধ্যে একমাত্র নলিনী শ্রীহরণই ছিলেন এলটিটিই-র সেই আত্মঘাতী দলের সদস্য, যারা রাজীব গান্ধীকে হত্যা করেছিল। খবর-বিবিসির।

ওই দলটির একমাত্র জীবিত সদস্য এখন মিজ শ্রীহরণ।

জেল থেকে বেরনোর পরে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে নলিনী বলেছেন, যে রাজীব গান্ধীসহ যে ১৭ জনকে হত্যার জন্য তাকে সাজা দেওয়া হয়েছিল, সেই ঘটনার জন্য তিনি অনুতপ্ত।

নলিনীদের মুক্তির বিরোধিতা নিহতদের পরিবারের

রাজীব গান্ধীর স্ত্রী সনিয়া নলিনী শ্রীহরণকে আগেই ক্ষমা করে দিয়েছিলেন। কিন্তু বাকি ১৬ জন নিহতের পরিবার মিজ শ্রীহরণসহ ১৬ জন হত্যাকারীকে মুক্তি দেওয়ার বিরোধিতা করছেন।

নলিনী শ্রীহরণ জেল থেকে বেরিয়ে বলেছেন, ওই পরিবারগুলির জন্য আমার দুঃখ হয়। আমি জানি না তাদের আত্মীয়রা কোনও আর্থিক সহায়তা পেয়েছেন কিনা।পরিবারের কর্তাকে হারানোটা খুবই দুঃখজনক। আমার খুবই খারাপ লাগে। ওই ১৭ জনের মৃত্যু কি আমি ইচ্ছা করে ঘটিয়েছি? কী দরকার ছিল? আমি কি লেখাপড়া করিনি? তাদের হত্যা করে জীবিকা নির্বাহ করার কি কোনও কারণ থাকতে পারে?

তিনি বলেন, ‘আমি তো তাদের চিনতামও না, নামও জানতাম না। তাদের ক্ষতি করার কথা চিন্তাও করিনি। তবে তাদের হত্যার অপরাধে আমার সাজা হয়েছে। এটা আর কিছুই না, আমারই দুর্ভাগ্য।’

যারা ওই হত্যাকাণ্ডের মূলচক্রী ছিলেন, তাদের সম্বন্ধে বলতে গিয়ে মিজ শ্রীহরণ বলেন, ওদের দেখে ঠিক বুঝতে পারিনি যে এরকম হবে। বলতে পারেন, সেসময়ে একটু বোকাই ছিলাম আমি। খুব ব্যস্ত থাকতাম সেই সময়ে। পড়াশোনা ছিল, কাজ করতাম, আবার প্রাইভেট কোচিংয়েও যেতাম। বাড়ি ফিরতে ফিরতে রাত ১১টা বেজে যেত।

গ্রেপ্তার হওয়ার পর ‘খুব ভয় পেয়েছিলাম’

নলিনী শ্রীহরণ বলছেন, ধরা পড়ার আগে এসব ব্যাপারে তার কোনও ধারণাই ছিল না।

তিনি বলেন, যখন আমাকে রিমান্ডে নিয়ে আলাদা সেলে রাখা হল, তখন খুব ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম। খুব চিৎকার করেছিলাম। গলা দিয়ে রক্ত বেরিয়ে গিয়েছিল। হাঙ্গামা করে বাইরে বেরিয়ে গিয়েছিলাম আমি। আমার মা পাশের সেলে বন্দী ছিল। আমার অবস্থা দেখে মাও খুব চিৎকার করছিল।

তবে তাকে আবার বুঝিয়ে শুঝিয়ে সেলে ফেরত পাঠানো হয়।

বন্দুকধারী প্রহরীদের তিনি বলেছিলেন যে ভাল হতো যদি তারা গুলি চালিয়ে তাকে মেরে ফেলত।

তার কথায়, সেটা খুব কঠিন সময় ছিল আমার জন্য। আমাকে যখন গ্রেপ্তার করা হয়, তখন আমার খুব জ্বর। বিছানা থেকেই ওঠার অবস্থায় ছিলাম না আমি। দুদিন ধরে তো ওরা আমাকে শুতেও দেয়নি। আমি দাঁত মাজতাম না, চুল আঁচড়াতাম না কদিন।

একটু একটু করে যখন সুস্থ হয়ে উঠছিলেন তিনি, তখন তার মাথায় যন্ত্রণা শুরু হয়।

নলিনী শ্রীহরণ বলেন, অনেকেই ভেবেছিল যে আমি নাটক করছি। কিন্তু যখন চিকিৎসক দেখে গেলেন, তিনিই বলেছিলেন যে সত্যিই আমি অসুস্থ।

সন্ত্রাস দমন আদালত তাদের ২৮ জনের ফাঁসির আদেশ দিয়েছিল। সেই তালিকায় প্রথম নামটাই ছিল মিজ শ্রীহরণের।

ওই আদেশ হওয়ার পরে একটা অন্য জেলে সরিয়ে দেওয়া হয় তাকে।

তিনি বলেন, আমাকে ফাঁসির আসামীর মতোই বন্দি করে রাখা হত। সেই সময়েই আমার মেয়ের জন্ম হয়। তখন পরিস্থিতি কিছুটা ভাল হয়।

গ্রেপ্তার হওয়ার সময়েই তিনি দুমাসের গর্ভবতী ছিলেন।

তিনি ধরা পড়ার কিছুদিনের মধ্যেই তার ভাই, মা এবং স্বামীও গ্রেপ্তার হন।

ফাঁসির আদেশ হয়ে গিয়েছিল

সনিয়া গান্ধী নলিনী শ্রীহরণকে ক্ষমা করার আগে উচ্চ আদালতেও তার ফাঁসির আদেশ বহাল ছিল।

তার আগে সাত বার ঘোষণা হয়ে গিয়েছিল তার ফাঁসির তারিখ, আর চারবার সব প্রস্তুতিও নেওয়া হয়ে গিয়েছিল।

নলিনী শ্রীহরণ বলেন, সব প্রস্তুতি হয়ে গিয়েছিল আমার ফাঁসির। ফাঁসির দড়ি এসে গিয়েছিল। আমার ওজন মাপা হয়েছিল। সেই অনুযায়ী বালির বস্তা ফাঁসির দড়িতে ঝোলানো হয়েছিল। একবার তো আমার শেষ ইচ্ছা জানার জন্য এক ধর্মগুরুকেও জেলে নিয়ে আসা হয়েছিল।

তার কথায়, আমার চোখের সামনেই এসব হয়েছিল। কিন্তু আমি আশা ছাড়িনি।

জেল থেকে মুক্তি পাওয়ার পরে নতুন করে বাঁচতে চান নলিনী শ্রীহরণ।

তিনি বলেন, আমার স্বামী আর মেয়ের সঙ্গে জীবনটা কাটাতে চাই, পরিবারটাকে আবারও এক জায়গায় আনতে চাই।

রাজীব গান্ধীকে যেভাবে হত্যা করা হয়

১৯৯১ সালের ২১শে মে রাতে তামিলনাডুর শ্রীপেরুমবুদুরে এক নির্বাচনী জনসভায় ভাষণ দিতে যান রাজীব গান্ধী।

বহু মানুষ সেখানে ফুলের মালা দিয়ে বরণ করে নিচ্ছিলেন রাজীব গান্ধীকে।

তাদেরই মধ্যে ছিলেন এলটিটিই-র আত্মঘাতী বোমারু ধানু।

রাজীব গান্ধীকে মালা দেওয়ার পরে নিচু হয়ে তার পা ছুঁয়েছিলেন তিনি আর তখনই নিজের কোমরে বাঁধা বোমাটি ফাটিয়ে দেন তিনি।

এমকে

Source link

Related posts

ইসরাইলকে সহযোগিতা করায় ৪ জনকে মৃত্যুদণ্ড দিল ইরান

News Desk

দলের বিদায়ে মেক্সিকো-অধ্যায়ও শেষ মার্টিনোর

News Desk

ইউক্রেনের মাকারিভ শহরে মিলল ১৩২ মরদেহ

News Desk

Leave a Comment