অসামান্য অভিনয় দক্ষতায় তিনি নামের পাশে জুড়ে নিয়েছেন ‘থালাইভা’ খেতাব। কেবল ভারতে নয় পুরো বিশ্বেই তুমুল জনপ্রিয় এই অভিনেতার আজ ৭২ তম জন্মদিন। প্রবীণ হলেও এখনো ‘অ্যাকশন হিরো’—হিসেবে তরুণ অভিনেতাদের চেয়েও দুর্দান্ত অভিনয় করে যাচ্ছেন তিনি। তাঁর কাছে বয়স শুধুমাত্র একটা সংখ্যা। তিনি সব সময় চিরসবুজ।
রজনীকান্তের আসল নাম শিবাজি রাও গায়কোয়াড়। বেঙ্গালুরুর এক মারাঠি পরিবারে ১৯৫০ সালের ১২ ডিসেম্বর তিনি জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর বাবার নাম রামজি রাও ও মায়ের নাম জিজাবাই। ষষ্ঠ শ্রেণির পড়া শেষ করে, রজনীকান্ত আচার্য পাঠশালা পাবলিক বিদ্যালয়ে ভর্তি হন এবং ওখান থেকে তিনি প্রাক-বিশ্ববিদ্যালয় কোর্স সম্পন্ন করেন। আচার্য পাঠশালায় পড়ার সময় অভিনয়ের প্রতি তাঁর আগ্রহ বাড়তে থাকে। নাটকের অভিনয়ে প্রচুর সময় ব্যয় করতে থাকেন তিনি। এভাবেই একদিন কুরুক্ষেত্র নাটক “দুর্যোধন” চরিত্রে অভিনয় করার সুযোগ পান তিনি। বিদ্যালয়ের পড়া শেষ করার পর তিনি মাদ্রাজ শহরে কাজ খুঁজতে থাকেন। এমনকি কুলি এবং মিস্ত্রীর কাজও করেন এবং সর্বশেষে তিনি বেঙ্গালুরু ট্রান্সপোর্ট সার্ভিসের বাসের কনডাক্টর হিসেবে নিয়োগ পান।
একদিন কন্নড় মঞ্চ নাটক রচয়িতা তোপী মুনিয়াপ্পা তাকে একটি পৌরাণিক চরিত্রে অভিনয়ের প্রস্তাব দেন, এরপর থেকে তিনি কন্নড় নাটকে অভিনয় করা শুরু করেন। সেসময়, সদ্য গঠিত মাদ্রাজ ফিল্ম ইনস্টিটিউটের বিভিন্ন অভিনয় কোর্স নিয়ে নির্মিত একটি বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে পরিচিত হোন। যদিও তাঁর পরিবার এই প্রতিষ্ঠানে যাওয়া পুরোপুরি সমর্থন করেনি, কিন্তু তাঁর বন্ধু ও সহকর্মীরা তাকে ওই প্রতিষ্ঠানে যাওয়ার জন্য উৎসাহ ও আর্থিকভাবেও সমর্থন দেয়। ওই প্রতিষ্ঠানে থাকাকালীন সময়ে, তিনি নিয়মিত মঞ্চ নাটকে অভিনয় করতে থাকেন। সেখানেই তিনি তামিল চলচ্চিত্র পরিচালক কে. বলচান্দেরের নজর পড়েন। পরিচালক তাকে তামিল ভাষা শেখার পরামর্শ দেন এবং তিনি অতি দ্রুত সেই পরামর্শ অনুসরণ করে তামিল ভাষা রপ্ত করেন।
পুরস্কারপ্রাপ্ত তামিল সিনেমা ‘অপূর্ব রাগাঙ্গল’-এর মাধ্যমে ১৯৭৫ সালে তিনি রুপালি জগতে আত্মপ্রকাশ করেন। ১৯৭৮ সালে তামিল ছবির ‘ভৈরবী’তে প্রথম নায়কের চরিত্রে তাঁর আত্মপ্রকাশ হয়। আর ১৯৮৩ সালে ‘আন্ধা কানুন’ সিনেমায় অভিনয়ের মাধ্যমে বলিউডে আত্মপ্রকাশ করেন তিনি। সিনেমায় তাঁর অভিনয় ও সংলাপ দেওয়ার ধরনের কারণে তাঁর জনপ্রিয়তা বৃদ্ধিতে ভূমিকা রেখেছে। ‘শিবাজি’ সিনেমায় অভিনয়ের জন্য তিনি রেকর্ড ৮.৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার সম্মানী নিয়ে তিনি জ্যাকি চ্যানের পর এশিয়ার সর্বোচ্চ পারিশ্রমিক গ্রহণকারী তারকা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হন।
দক্ষিণের মানুষের কাছে রজনীকান্তের জন্মদিন উদ্যাপন রীতিমতো প্রথায় পরিণত হয়েছে। তাঁর ছবির সামনে প্রদীপ জ্বালিয়ে পুজো করা, মণ্ডপ সাজিয়ে তাঁর ছবির গান বাজিয়ে উল্লাসে মেতে ওঠেন ভক্তেরা। এমনকি তাঁর ছবির কাটআউটে কলসি কলসি দুধ ঢেলে তাঁরা উৎসবে মেতে ওঠেন। তবে বারবার তিনি ভক্তদের তা নিষেধ করে গেছেন।
রজনীকান্ত দক্ষিণীদের কাছে এতটাই জনপ্রিয় যে, তাঁকে বলা হয় ‘গড অব ইন্ডিয়ান সিনেমা’! অমিতাভ বচ্চন একবার বলেছিলেন, তিনি রজনীকান্তকে তাঁর অনুপ্রেরণা হিসেবে দেখেন। এ অভিনেতার ‘এন্ধিরান’ বা ‘রোবট’ ছবিটি মুক্তি পাওয়ার সময় চেন্নাইয়ের রজনীকান্ত ভক্তরা তাঁর প্রায় ৪০ ফুট উঁচু একটি মূর্তি বানিয়ে দুধ দিয়ে গোসল করিয়েছিল! সবচেয়ে মজার তথ্য হলো, রজনীকান্তকে রুপালি পর্দায় অনেক দিন হলো মরতে দেখা যায় না। ছবির নির্মাতাদের ধারণা, রজনীকান্তের মৃত্যু দেখালে রজনী-ভক্তরা শোকের উন্মাদনায় রাস্তায় নেমে প্রতিবাদ করবে।
এই অভিনেতা ছয়বার তামিলনাড়ু স্টেট ফিল্ম অ্যাওয়ার্ড এবং একবার ফিল্মফেয়ার (তামিল) অ্যাওয়ার্ড পেয়েছেন। ২০০০ সালে ভারতের সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মাননা ‘পদ্মভূষণ’ পুরস্কারে ভূষিত হোন।