৩৬ বছরের আক্ষেপ মিটিয়ে বিশ্বকাপ শিরোপা জয়ের লক্ষ্য নিয়েই আজ কাতার বিশ্বকাপের ফাইনালে মাঠে নামছে আর্জেন্টিনা। বিশ্বকাপের প্রথম ম্যাচেই সৌদি আরবের কাছে অপ্রত্যাশিত হারের পর দুর্দান্তভাবে ঘুরে দাঁড়িয়েই বিশ্বকাপের ফাইনালেই উঠে এসেছে আলবিসেলেস্তারা।
আর্জেন্টিনাকে ফাইনালে তুলে আনার পেছেনে সবচেয়ে বড় ভূমিকা দলের প্রাণভোমরা মেসির। এলএম টেন যেন একাই টেনে নিয়ে চলেছেন আর্জেন্টিনার শিরোপার স্বপ্নকে। কঠিন এই রাস্তায় অবশ্য নতুন সঙ্গীও পেয়ে গেছেন মেসি। জুলিয়ান আলভারেজকে পেয়ে যেন এক সোনার হরিণের খোঁজই পেয়েছে আর্জেন্টিনা। মেসিকে যোগ্য সং দেওয়ার জন্য আলভারেজ ঠিক যেন একটা হীরার টুকরা।
আলভারেজ বিশ্বকাপে আর্জেন্টিনার জন্য নতুন আবিস্কার হলেও নিজের ছোট্ট গ্রামে ‘স্পাইডার’ নামে পরিচিত। সেমিফাইনালে ক্রোয়েশিয়ার বিপক্ষে নিজের দক্ষতা প্রদর্শনের কারণে উদযাপন করার সময় গ্রামবাসী তাকে ‘নায়ক’ ও ‘দূত’ হিসেবে আখ্যায়িত করে।
বদলি হিসেবে কাতার বিশ্বকাপ শুরু করা আলভারেজ কয়েকটি ম্যাচজয়ী পারফরম্যান্স দেখিয়ে মূল একাদশে নিজের জায়গা নিশ্চিত করতে সক্ষম হয়েছেন। এ পর্যন্ত টুর্নামেন্টে ৪ গোল করে গোল্ডেন বুটের দৌড়েও রয়েছেন আলভারেজ। আজকের ফাইনালে ফ্রান্সের বিপক্ষে একাদশের জায়গা পাওয়া প্রায় নিশ্চিত ২২ বছর বয়সী এই উদীয়মান তারকার।
কালচিনের রিভোরা ইন্দারতে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে আলভারেজের শিক্ষক প্যাট্রিসিয়া ম্যাগনিনো এএফপিকে বলেন, ‘সাত বছর বয়স থেকেই সে ছিল খুবই সহায়ক, দায়িত্ববান, অধ্যয়নশীল ও সঙ্গীদের উপকারে এগিয়ে আসতেন। এখন সে তারকা, লিওনেল মেসির সঙ্গী।’
আরেকজন প্রাক্তন শিক্ষক গ্রাসিয়েলা ডি বারবেরিস জানান, ‘নম্রতা ও স্বল্পভাষী হওয়ার কারণে তিনি সব সময় আলাদা ছিলেন। আপনি যদি কাজ করেন তাহলে স্বপ্ন সত্যি হবে।’
স্থানীয় আঞ্চলিক ভাষায় কালচিন শব্দের অর্থ হচ্ছে ‘লবনাক্ত স্থান’। কর্ডোবার শিল্পাঞ্চলের উত্তরপূর্বে অবস্থিত একটি সমৃদ্ধ প্রত্যন্ত গ্রাম, যেখানে তিন হাজার লোকের বাস। গ্রামের প্রবেশপথে অবস্থিত স্কুলের দেয়ালে আলভারেজের প্রশংসা করে একটি বিলবোর্ড লাগানো হয়েছে। সেখানে লেখা আছে, ‘জুলিয়ান কালচিনের গৌরব।’
গ্রামটির প্রতিটি ভবন একতলা এবং রাস্তাগুলোর দুই পাশে রয়েছে সবুজ গাছের সারি। ফুটবলকে নিয়ন্ত্রণে রেখে জালে পাঠানোর অসাধারণ দক্ষতার কারণে আলভারেজকে ডাকা হতো ‘স্পাইডার’ নামে। মাকড়সা যেমন মাছি ধরে জালে আটকে রাখে সেরকম ভাবেই বল ধরতে পারতেন তিনি।
কাতার বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে আলভারেজের জোড়া গোলে ক্রোয়েশিয়ার বিপক্ষে ৩-০ ব্যবধানে জিতে ফাইনালে ওঠে আর্জেন্টিনা। এর আগে পোল্যান্ড ও অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষেও গোল করেছিলেন তিনি।
স্থানীয় ক্লাব অ্যাটলেটিকো কালচিনের হয়ে খেলোয়াড়ি জীবন শুরু করেন আলভারেজ। যেখানে শুধু একটি প্রধান স্ট্যান্ড ছিল, ধারণ ক্ষমতা ছিল মাত্র ১৫০ জন দর্শক। আর আজ দোহার লুসাইল আইকনিক স্টেডিয়ামে বিশ্বকাপের ফাইনালে ফ্রান্সের বিপক্ষে ৮৯ হাজার দর্শকের সামনে মাঠে নামবেন কালচিনের ‘স্পাইডার’।