অস্ট্রেলিয়ার পেসার ম্যাককেন্নার বলে চার মেরে জয় নিশ্চিত করেই ব্যাট উঁচিয়ে উল্লাসে মেতে উঠেন সুমাইয়া আক্তার। ওপ্রান্ত থেকে মুহূর্তেই উড়ে এসে তাকে আলিঙ্গনে বাঁধেন স্বর্ণা আক্তার। বাংলাদেশের অনূর্ধ্ব-১৯ নারী দলের অন্য সতীর্থরাও ডাগআউট থেকে দৌড়ে এসে অভিনন্দন জানান দুই অপরাজিত নায়ককে। এরপর সবাই দল বেঁধে বেনোনির উইলোমুর পার্কে উত্সবে মাতেন বাংলাদেশের তরুণীরা। তাদের বাঁধভাঙা উল্লাসে বেনোনির ছোট্ট স্টেডিয়ামটি যেন হয়ে উঠে এক টুকরো বাংলাদেশ।
প্রথম অনূর্ধ্ব-১৯ নারী টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের প্রথম ম্যাচেই বেনোনিতে লেখা হলো বাংলাদেশের মেয়েদের জয়কাব্য। ৭ উইকেটের সেই জয়টাও পরাশক্তি অস্ট্রেলিয়ার তরুণীদের হারিয়ে। সুমাইমা, স্বর্ণা, দিলারা, মারুফা, অধিনায়ক দিশা বিশ্বাসদের মুক্ত পাখি মতো ডানা মেলে নাচানাচিটা ছিল স্বাভবিক চিত্রই।
দুই ওভার বাকি থাকতেই ৭ উইকেটের সহজ জয়টা দলীয় প্রচেষ্টারই ফসল। দলের প্রত্যেকেই কিছু না কিছু অবদান রেখেছেন। তবে ব্যাট-বলের পারফরম্যান্সের নিত্তিতে এগিয়ে ছিলেন দিলারা, সুমাইয়া, আফিয়া, স্বর্ণা, মারুফা দিশা বিশ্বাসরা। প্রথম ম্যাচেই দেশকে রোমাঞ্চকর জয় উপহার দিতে এরাই মূল ভূমিকা রেখেছেন। এই নায়কদের মধ্যে আবার সবচেয়ে এগিয়ে ছিলেন দিলারা আক্তার। অস্ট্রেলিয়ার ১৩০ রানের জবাবে দিলারাই খেলেছেন বাংলাদেশের পক্ষে সর্বোচ্চ ৪০ রানের ইনিংস। ৭ চারে সাজানো ৪২ বলের ইনিংসটির সুবাদে ম্যাচ সেরার পুরস্কারও লাভ করেছেন তিনিই। তবে দিলারা মূল নায়ক হলে সুমাইয়া, আফিয়া, স্বর্ণা, মারুফা, দিশারা তার যোগ্য পার্শ্ব নায়ক। দলের পক্ষে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৩১ রানের অপরাজিত ইনিংস খেলেছেন চার মেরে জয় নিশ্চিত করা সুমাইয়া। মাত্র ২৫ বলের ইনিংসটিতে ৫টি চার মারেন তিনি। সমান দুটি করে ছক্কা ও চারের সহায়তায় ২২ বলে ২৪ রান করেন আফিয়া হুমাইরা আমান প্রত্যাশা।
সুমাইয়ার সঙ্গে জয় নিয়ে মাঠ ছাড়া স্বর্ণা আক্তার খেলেছেন অপরাজিত ২৩ রানের ইনিংস। ১৮ বলের ইনিংসটিতে একটি ছক্কা ও দুটি চার মেরেছেন তিনি। এই চারজনের সঙ্গে ব্যাট করতে পেরেছেন বাংলাদেশের আর মাত্র একজন। সেই মিস্টি রানী সাহা ওপেন করতে নেমে ইনিংসের প্রথম বলেই আউট হয়ে যান। তার ‘গোল্ডেন ডাক’ ক্ষণিকের জন্য হলেও শঙ্কায় ফেলে দিয়েছিল দলকে। ব্যাট হাতের কারিগরদের আগে বল হাতে সবচেয়ে বড় ভূমিকা রাখেন বাংলাদেশের দুই উদ্বোধনী বোলার মারুফা আক্তার ও দিশা বিশ্বাস। অস্ট্রেলিয়াকে সাধ্য সীমায় আটকে রাখতে দুই পেসারই নেন দুটি করে উইকেট। দিশা ৩ ওভারে ২৫ রান দিয়ে নেন দুই উইকেট। মারুফা ৪ ওভারে খরচ করেন ২৯ রান। এছাড়া একটি উইকেট নেন লেগস্পিনার রাবেয়া খান। বোলার দিশা ফিল্ডার হিসেবেও ম্যাজিক দেখিয়েছেন বেনোনিতে। তিনি নেন দুটি ক্যাচ। মারুফা এবং রাবেয়াও নেন একটি করে ক্যাচ। উইকেট সাফল্য না পেলেও ডানহাতি স্পিনার মোসাম্মদ দিপা খাতুন ঘুর্ণির ভেল্কিটা দেখান অসাধারণ। ৪ ওভারে বল করে মাত্র ১৬ রান দেন তিনি। টুর্নামেন্টে বাংলাদেশের পরের ম্যাচ ১৬ জানুয়ারি, শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে। যুক্তরাষ্ট্রের বিপক্ষে গ্রুপপর্বের শেষ ম্যাচটি ১৮ জানুয়ারি।