Image default
আন্তর্জাতিক

করোনা-দারিদ্র-ক্ষুধায় বিপর্যস্ত ব্রাজিল

করোনায় আক্রান্ত ও মৃত্যুর তালিকায় বিশ্বের অন্যতম শীর্ষ দেশ ব্রাজিল। এক কোটিরও বেশি আক্রান্ত ও তিন লক্ষাধিকেরও অধিক মৃত্যু নিয়ে পর্যুদস্ত অবস্থায় থাকা দক্ষিণ আমেরিকার বৃহত্তম এই দেশটিতে ভয়াবহ সংকট আকারে দেখা দিচ্ছে আরো দু’টি সমস্যা— ক্ষুধা ও দারিদ্র্য।

গত বছর বিশ্বজুড়ে করোনা মহামারি শুরু হওয়ার পর ব্রাজিলের ১ কোটি ৯০ লাখ মানুষ খাদ্য অনিশ্চয়তায় পড়েছিলেন। সরকারি জরিপ বলছে, বর্তমানে এই সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১১ কোটি ৭০ লাখে, যা দেশটির মোট জনসংখ্যার অর্ধেকেরও বেশি।

ব্রাজিলের খাদ্য ও পুষ্টি গবেষণা সংস্থা ব্রাজিলিয়ান ফুড সোভারজিনিটি অ্যান্ড নিউট্রিশনাল সিকিউরিটি রিসার্চ নেটওয়ার্কের সাম্প্রতিক জরিপে এই তথ্য উঠে এসেছে। কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরাকে সংস্থাটির প্রেসিডেন্ট রেনাতো মালুফ বলেন, ‘অতীতের যে কোনো সময়ের তুলনায় বর্তমানে সবচেয়ে ভয়াবহ সময় পার করছে ব্রাজিল।

মহামারির কারণে চাকরি বা কর্মসংস্থান হারানো নাগরিকদের গত ডিসেম্বর পর্যন্ত নিয়মিত অর্থ সহায়তা দিয়েছে ব্রাজিলের সরকার; কিন্তু চলতি বছরের শুরু থেকে সেই সাহায্য হয়ে পড়েছে অনিয়মিত। আলজাজিরাকে মালুফ বলেন, ‘ দারিদ্র্য, ক্ষুধা ও বেকারত্বের ফলে গত কয়েক মাস ধরে ব্রাজিলের খেটে খাওয়া সাধারণ মানুষ চরম দুর্দশায় পড়েছে।’

ব্রাজিলের পরিসংখ্যান অধিদফতর বলছে, চলমান মহামারিতে দেশটিতে প্রধান খাদ্য চালসহ বেড়ে গিয়েছে প্রতিদিনের খাদ্যসামগ্রীর দাম। গত এক বছরে সেখানে চালের দাম বেড়েছে ৭০ শতাংশ। এর পাশাপাশি ব্ল্যাক বিনের (বরবটি জাতীয় একপ্রকার সবজি) দাম বেড়েছে ৫১ শতাংশ, আলুর দাম বেড়েছে ৪৭ শতাংশ, মাংসের দাম বেড়েছে ৩০ শতাংশ, দুধের দাম বেড়েছে ২০ শতাংশ এবং সয়াবিনের দাম বেড়েছে ৮৭ শতাংশ।

এছাড়া গতবছরের তুলনায় সেখানে রান্নার জন্য ব্যবহৃত সিলিন্ডার গ্যাসের দামও বেড়েছে ২০ শতাংশ।

ব্রাজিলের প্রধান শহর সাও পাওলোর শহরতলি এলাকায় বসবাস করেন আনা মারিয়া নগুইয়েরা ও তার স্বামী এরাল্ডো নগুইয়েরা। আলজাজিরাকে আনা মারিয়া বলেন, মহামারির আগে একটি কারখানায় শ্রমিকের কাজ করতেন তার স্বামী। মহামারিতে কারখানা বন্ধ হয়ে যাওয়া এবং শারীরিক অসুস্থতার জন্য এরাল্ডো এখন বাড়িতে আছেন। উভয়ের পেট চালানোর জন্য আনা মারিয়া এখন বাতিল প্লাস্টিক সামগ্রী কুড়ানো ও বিক্রির কাজ করেন।

বয়সজনিত কারণে বিভিন্ন শারীরিক সমস্যায় ভুগছেন আনা মারিয়াও। তাই সপ্তাহে একদিন তিনি বের হতে পারেন বাড়ি থেকে।

আল জাজিরাকে তিনি বলেন, যেদিন তিনি সাড়ে তিন ডলার উপার্জন করতে পারেন, সেদিনটি তাদের জন্য সৌভাগ্যের দিন। কারণ সেদিন স্থানীয় একটি ক্যাথলিক চার্চ থেকে ৫ কেজি চাল কিনতে পারেন তিনি।

মহামারি শুরুর পর থেকে ওই এলাকা দরিদ্র মানুষদের মাঝে স্বল্পমূল্যে খাদ্যসামগ্রী বিক্রি করছে চার্চ কর্তৃপক্ষ। আড়াই ডলারে ৫ কেজি চালের যে প্যাকেটটি তারা বিক্রি করে, ব্রাজিলের মুদি দোকানগুলোতে সেই প্যাকেটের দাম সাড়ে ৪ ডলার।

আল জাজিরাকে আনা বলেন, ‘তিন বেলা খাওয়া এখন আমাদের কাছে বিলাসিতা। চার্চ আছে বলে এখনো বেঁচে আছি। যদি কোনোদিন এই সেবা বন্ধ হয়ে যায়, না খেয়ে মরতে হবে আমাদের।’

জেইন সান্তোস নামে আনা মারিয়ার এক প্রতিবেশী জানান, মহামারি শুরুর আগ পর্যন্ত একটি রেস্তোঁরায় ওয়েটারের কাজ করতেন তিনি, তার স্বামী একটি প্রতিষ্ঠানে ড্রাইভারের চাকরি করতেন। একটি সন্তান আছে এই দম্পতির।

দুজনের আয়ে মোটামুটি ভালোই চলছিল সংসার, কিন্তু মহামারি শুরুর পর চাকরি হারান জেইন ও তার স্বামী। এখন জেইন বাড়িতে থাকেন, তার স্বামী করেন ‘অড জবস’ বা দিন মজুরের কাজ।

আলজাজিরাকে জেইন বলেন, ‘আমরা মাংস খাওয়া ছেড়ে দিয়েছি। দীর্ঘদিন ধরে শুধু ডিম দিয়ে আমিষের অভাব পূরণ চলছে। মাঝে মাঝে সেটাও থাকে না।’

রেনাতো মালুফ বলেন, ‘শহরের থেকেও গ্রামের পরিস্থিতি বেশি খারাপ। কারণ শহরে তবু কোনো ক্ষুধার্ত ব্যক্তি কারো কাছে হাত পাততে পারে, কিন্তু গ্রামে সেটি সম্ভব নয়।’

বিপদে-আপদে একে অপরের পাশে দাঁড়ানো ব্রাজিলিয়ানদের অন্যতম চারিত্রিক বৈশিষ্ট। মহামারি যখন শুরু হলো তখন সরকারের পাশাপাশি দরিদ্র জনসমষ্টির পাশে খাদ্য সহায়তা নিয়ে দাঁড়িয়েছিল ব্যাংক-বীমাসহ বিভিন্ন বেসরকারি প্রতিষ্ঠান। কিন্তু বর্তমানে অনিয়মিত সরকারি সহায়তা ছাড়া দেশটির জনগণের সামনে আর কোনো নির্ভরতা নেই।

দেশটির অর্থনীতিবিদ এডিনসন লিনো বাস্টোস আল জাজিরাকে বলেন, ‘ব্যাপারটি এমন নয় যে ব্রাজিলিয়ানরা তাদের ঐতিহ্য থেকে সরে গেছে… তারা আসলে ক্লান্ত। এছাড়া দীর্ঘদিন ধরে মহামারি চলার কারণে দেশের অধিকাংশ জনগণ কমবেশি দারিদ্র্যের মুখে পড়েছে।

Related posts

ইরাকের করোনা হাসপাতালে আগুন লেগে ২৭ জনের মৃত্যু

News Desk

শ্রীলঙ্কার নতুন প্রেসিডেন্ট রনিল বিক্রমাসিংহে

News Desk

প্রথম ভারতরত্ন হিসেবে ২১ বার বিনামূল্যে বিমানে চড়েছেন অমর্ত্য সেন

News Desk

Leave a Comment