কক্সবাজারের চকরিয়া ও পেকুয়া উপজেলার বন্যা পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হয়েছে। মঙ্গলবার (৮ আগস্ট) রাতের পর থেকে কিছু কিছু এলাকায় বন্যার পানি কমেছে। তবে ভাটির দিকে এখনও নতুন নতুন এলাকায় পাহাড়ি ঢলের পানি ঢুকে প্লাবিত হচ্ছে। নদীর বেড়িবাঁধ ভেঙে ঢলের পানি ঢুকে পড়ছে গ্রামে।
এদিকে, চট্টগ্রামের চন্দনাইশে মহাসড়কের ওপর দিয়ে বন্যার পানি প্রবাহিত হওয়ায় এখনও চট্টগ্রামের সঙ্গে কক্সবাজার ও বান্দরবান জেলার সড়ক যোগাযোগ বন্ধ রয়েছে।
জেলা প্রশাসন ও উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, চকরিয়া ও পেকুয়া উপজেলার ২৫টি ইউনিয়নেই বন্যা কবলিত হয়েছে। এতে এসব এলাকায় এখনও লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দি রয়েছেন। তবে মঙ্গলবার রাত থেকে বৃষ্টিপাত কম হওয়ায় মাতামুহুরী নদীর পানি কমলেও এখনও বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
পাহাড়ি ঢলের তোড়ে মাতামুহুরি নদীর কমপক্ষে ১৫টি পয়েন্টে বেড়িবাঁধ ভেঙে গেছে। এসব ভাঙন দিয়ে লোকালয়ে ঢলের পানি ঢুকে নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হচ্ছে। মাতামুহুরি নদীর অববাহিকা এলাকার বাসিন্দারা চরম ভোগান্তিতে রয়েছেন। গত আট দিনে পাহাড় ধসে, পানিতে ভেসে ও সাপের কামড়ে চকরিয়া, পেকুয়া, রামু ও রোহিঙ্গা ক্যাম্পে সাত জন মারা গেছে।
চকরিয়া ও পেকুয়া উপজেলার বন্যাকবলিত এলাকার সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোকে আশ্রয় কেন্দ্র ঘোষণা করেছে। এই দুই উপজেলায় লক্ষাধিক মানুষ সাইক্লোন শেল্টারে আশ্রয় নিয়েছিলেন। তারা এখন বাড়ি ফিরতে শুরু করেছেন।
জেলা প্রশাসক মুহম্মদ শাহীন ইমরান জানান, এবারের বন্যায় সবচেয়ে বেশি প্লাবিত হয়েছে চকরিয়া ও পেকুয়ার সব ইউনিয়ন। প্রশাসনের পক্ষ থেকে ইতোমধ্যে বন্যাকবলিত এলাকায় ৫০ হাজার মেট্রিক টন চাল এবং সাত লাখ টাকা নগদ সাহায্য দেওয়া হয়েছে। এর পাশাপাশি দুর্গত মানুষের মধ্যে শুকনো খাবার দেওয়া হয়েছে।
এ ছাড়া বন্যাকবলিত এলাকায় উদ্ধার অভিযান ও খাদ্য সহায়তা দিয়েছে নৌবাহিনী, কোস্ট গার্ড ও সেনাবাহিনীর সদস্যরা।
বন্যা ও পাহাড়ি ঢলের পানিতে চকরিয়া উপজেলার কাকারা, সুরাজপুর, মানিকপুর, বরইতলী, হারবাং, পূর্ববড় ভেওলা, বিএমচর, পশ্চিম বড়ো ভেওলা, চিরিঙ্গা, লক্ষ্যারচর, কৈয়ারবিল, ফাসিয়াখালী বদরখালী ঢেমুশিয়া কোনাখালী, চকরিয়া পৌরসভা, পেকুয়া সদর ইউনিয়ন সবচেয়ে বেশি প্লাবিত হয়েছে। এখানকার সড়কগুলোও পানিতে তলিয়ে গেছে। এতে চরম ভোগান্তিতে পড়েছে সাধারণ মানুষ। উপকূলীয় এলাকার পানি নিষ্কাশনের বিভিন্ন স্লুইস গেট এবং নির্মাণাধীন রেল লাইনে পর্যাপ্ত কালভার্ট না থাকায় পাহাড়ি ঢলের পানি দ্রুত নিষ্কাশন হতে পারছে না বলে স্থানীয়রা অভিযোগ করেছেন।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের চকরিয়া উপজেলা কর্মকর্তা জামাল মোর্শেদ জানিয়েছেন, মাতামুহুরী নদীর পানি এখনও বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। নদীর ঢলের পানির তোড়ে কইন্যারকুম, বিএমচর, মেহেরনামা বেড়িবাঁধ ভেঙে গেছে।