চট্টগ্রামে বন্যা পরিস্থিতি উন্নতির দিকে
বাংলাদেশ

চট্টগ্রামে বন্যা পরিস্থিতি উন্নতির দিকে

চট্টগ্রামে বন্যা পরিস্থিতি উন্নতির দিকে, গত ২৪ ঘণ্টায় জেলার বিভিন্ন উপজেলায় অন্তত এক থেকে দুই ফুট পানি কমেছে। বৃষ্টিপাত কমে যাওয়ায় বন্যার পানি কমতে শুরু করেছে। তবে বুধবার (৯ আগস্ট) সন্ধ্যা পর্যন্ত ডুবে আছে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের বেশ কিছু অংশ। ফলে চট্টগ্রাম শহরের সঙ্গে সাতকানিয়া, লোহাগাড়া, বান্দরবান, কক্সবাজারের সঙ্গে যোগাযোগ বন্ধ রয়েছে।

চট্টগ্রাম পতেঙ্গা আবহাওয়া অফিসের সহকারী আবহাওয়াবিদ মো. আলাউদ্দিন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘বৃষ্টি কমে গেছে। আগামী কয়েকদিন ভারী বৃষ্টিপাতের আশঙ্কা নেই। যে কারণে বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হবে। পানি ধীরে ধীরে কমে যাবে।’

এদিকে, বৃষ্টি না হওয়ায় চট্টগ্রাম নগরী থেকে পানি নেমে গেছে। এ কারণে নগরীর জলাবদ্ধতা অনেকাংশে কমে গেছে। তবে জোয়ারের সময় বাকলিয়াসহ কিছু এলাকায় বুধবারও পানি নিয়ে দুর্ভোগ পোহাতে হয় বাসিন্দাদের।  

চট্টগ্রামে টানা বৃষ্টিতে জেলার ১৪টি উপজেলায় কম-বেশি জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। এরমধ্যে চন্দনাইশ, সাতকানিয়া ও লোহাগাড়া উপজেলায় ভয়াবহ বন্যা দেখা দেয়। এখনও এ তিন উপজেলার লাখ লাখ মানুষ পানিবন্দি অবস্থায় রয়েছে।

চন্দনাইশ উপজেলার বাসিন্দা এসএম রহমান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আটটি ইউনিয়ন এবং দুটি পৌরসভা নিয়ে চন্দনাইশ উপজেলা। এ উপজেলার ৮০ শতাংশ এলাকায় বন্যায় ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। বুধবার পানি কিছুটা কমেছে, তবে তা অতি সামান্য। এখনও চন্দনাইশ কসাই পাড়া এলাকায় চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের অনেকাংশ ডুবে আছে। হাজার হাজার বাড়ি ঘর পানিতে ডুবে আছে। লোকজন ঘর ছেড়ে আত্মীয়-স্বজন এবং আশ্রয় কেন্দ্রে উঠেছে। গত তিন দিন ধরে অধিকাংশ এলাকায় বিদ্যুৎ নেই। খাবার পানি সংকট তীব্র হয়েছে। ঘরে রান্না না হওয়ায় লোকজন খাদ্য সংকটে ভুগছে। মিলছে না প্রয়োজনীয় ত্রাণ সহায়তা। মানুষ এক দুর্বিষহ অবস্থার মধ্যে দিয়ে দিনযাপন করছে।’

চন্দনাইশ থানার ওসি আনোয়ার হোসেন জানান, ‘এখনও চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়ক পানির কারণে বন্ধ হয়ে আছে। এ কারণে চট্টগ্রামের সঙ্গে চন্দনাইশের একাংশ, সাতকানিয়া, লোহাগাড়া, কক্সবাজার ও বান্দরবানের সঙ্গে চট্টগ্রাম শহরের যোগাযোগ ব্যবস্থা বন্ধ রয়েছে। তবে গত ২৪ ঘণ্টায় পানি কিছুটা কমেছে।’

সাতকানিয়া উপজেলার নলুয়া ইউনিয়নের পূর্ব গাটিয়াডেঙ্গা গ্রামের বাসিন্দা মিজানুল ইসলাম বলেন, ‘স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যা এটি। বৃষ্টি না হওয়ায় গত ২৪ ঘণ্টায় বন্যার পানি কিছুটা কমেছে। তবে এখনও বাড়িতে ফিরতে পারছে না লোকজন। কোনও কোনও ঘরে এখনও হাঁটু থেকে কোমড় সমান পানি। অসংখ্য মাটির ঘর এবং সেমিপাকা ঘর ধসে পড়েছে। আশা করছি আগামী দুই-তিনদিন বৃষ্টি না হলে পরিস্থিতি আরও স্বাভাবিক হবে।’

চট্টগ্রাম বন্যা পরিস্থিতি

সাতকানিয়া উপজেলার চরতি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ রুহুল্লাহ চৌধুরী বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমার ইউনিয়নে ৯০ শতাংশ মানুষই ক্ষতিগ্রস্থ ছিল। ৮০ শতাংশ মানুষই ঘর ছেড়ে নিরাপত্তার জন্য আত্মীয়-স্বজনের বাড়ি কিংবা আশ্রয় কেন্দ্রে ঠাঁই নিয়েছে। অনেক কাঁচা ঘর, সেমিপাকা ঘর ধসে পড়ে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে।’

লোহাগাড়া উপজেলার আমিরাবাদ ইউনিয়নের বাসিন্দা সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘এই ইউনিয়নের ৮০ শতাংশ ঘরে পানি ঢুকেছে। এ কারণে ঘর ছেড়ে নিরাপত্তার জন্য আশ্রয় কেন্দ্র কিংবা অন্যত্র ঠাঁই নিয়েছে। তিন দিন ধরে বিদ্যুৎ নেই। এ কারণে মোবাইলও বন্ধ হয়ে আছে। ঘরে রান্নাবান্না হচ্ছে না। পানির কারণে আশপাশের দোকানপাঠ বন্ধ রয়েছে। নেই পর্যাপ্ত ত্রাণ সহায়তা। মানুষ চরম দুর্ভোগের মধ্যে দিন কাটাচ্ছে।’

লোহাগাড়া উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) মোহাম্মদ শাহজাহান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘লোহাগাড়ায় বন্যা পরিস্থিতি উন্নতির দিকে। বৃষ্টি না হলে দুই-এক দিনের মধ্যে পুরোপুরি পানি নেমে যাবে। আশ্রয় কেন্দ্রে আসা লোকজনকে শুকনো খাবার দেওয়া হচ্ছে। পানি বিশুদ্ধকরণের জন্য দেওয়া হচ্ছে ট্যাবলেট।’

Source link

Related posts

‘বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশ’ জাদুঘর যেন ইতিহাসের প্রতিচ্ছবি

News Desk

বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্কে ৩ পরামর্শক নিয়োগ

News Desk

‘জীবনে প্রথমবার নিজের ঘরে ঈদ করবো’

News Desk

Leave a Comment