আগামী ২৮ অক্টোবর দেশের প্রথম টানেল উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। কর্ণফুলী নদীর তলদেশে নির্মিত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেল উদ্বোধন করতে চট্টগ্রাম আসবেন প্রধানমন্ত্রী। নগরীর পতেঙ্গা প্রান্তে টানেলের নামফলক উন্মোচনের পর অপর প্রান্তে কাফকো কলোনি সংলগ্ন কেইপিজেড মাঠে জনসভায় যোগ দেবেন শেখ হাসিনা। চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের উদ্যোগে এ জনসভা হবে। সেখানে ১০ লাখ মানুষের জনসমাগম ঘটাতে তৎপরতা শুরু করেছে চট্টগ্রাম মহানগর, উত্তর ও দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগ। জনসভার জন্য প্রস্তুত সাড়ে ৯ লাখ ঘনফুট আয়তনের মাঠ। চলছে জনসভা ঘিরে সাজসজ্জা। মাঠে জনসভার মঞ্চ তৈরি করা হবে নৌকার আদলে।
এলাকা ঘুরে দেখা যায়, প্রধানমন্ত্রীর আগমনকে ঘিরে টানেলের পতেঙ্গা ও আনোয়ারা প্রান্তে চলছে সাজসজ্জার কাজ। সমতল করা হচ্ছে জনসভার স্থান। সংস্কারের পাশাপাশি রঙ করা হচ্ছে সড়কগুলো। প্রধানমন্ত্রীকে স্বাগত জানাতে নগরী ও আনোয়ারা প্রান্তে আওয়ামী লীগ ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীদের পোস্টার-ব্যানারে চেয়ে গেছে পথঘাট।
চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মফিজুর রহমান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘দক্ষিণ এশিয়া তথা দেশের প্রথম টানেল উদ্বোধন করতে প্রধানমন্ত্রী ২৮ অক্টোবর চট্টগ্রামে আসছেন। ওইদিন টানেলের আনোয়ারা প্রান্তে কেইপিজেড মাঠে জনসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সাড়ে ৯ লাখ বর্গফুটের এই মাঠে ১০ লাখ লোকের জনসমাগম ঘটাতে চট্টগ্রাম মহানগর, উত্তর ও দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। এছাড়া বান্দরবান, কক্সবাজার, রাঙ্গামাটি ও খাগড়াছড়ি থেকেও নেতাকর্মীরা প্রধানমন্ত্রীর জনসভায় যোগ দেবেন।’
মফিজুর রহমান বলেন, ‘টানেল নির্মাণের মধ্য দিয়ে ওয়ান সিটি টু টাউনের স্বপ্ন পূরণ হয়েছে। শহরের খুব কাছে থাকা সত্ত্বেও শুধু যোগাযোগ ব্যবস্থার অভাবে অবহেলিত ছিল আনোয়ারা প্রান্ত। টানেল নির্মাণের মধ্যে কর্ণফুলী-আনোয়ারা আরেকটি শহরে রূপ নিয়েছে। আনোয়ারা থেকে চট্টগ্রাম শহরের যোগাযোগ ব্যবস্থাকে সহজতর করেছে টানেল। মাত্র তিন থেকে সাড়ে তিন মিনিটে টানেল পাড়ি দেওয়া যাবে। টানেলকে ঘিরে আনোয়ারায় গড়ে উঠছে শিল্প কারখানা। আসছে বিদেশি বিনিয়োগও। এতে কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে। এসব হয়েছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সদিচ্ছার কারণেই।’
চট্টগ্রাম উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এম এ সালাম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের উদ্যোগে প্রধানমন্ত্রীর এ জনসভার আয়োজন করা হলেও উত্তর এবং মহানগরী থেকে সর্বোচ্চ জনসমাগমের প্রস্তুতি থাকবে। সর্বোচ্চ উপস্থিতি নিশ্চিত করতে বৃহস্পতিবার (১৯ অক্টোবর) উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের উদ্যোগে বর্ধিত সভার আয়োজন করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর জনসভায় উপস্থিতি বাড়াতে প্রস্তুতি চলছে।’
টানেল নির্মাণ প্রকল্পের পরিচালক মো. হারুনুর রশীদ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘যানবাহন চলাচলের জন্য পুরোপুরি প্রস্তুত টানেল। ইতোমধ্যে একাধিকবার পরীক্ষামূলক গাড়ি চলাচল করা হয়েছে। এখন সাজসজ্জার কাজ হচ্ছে। নিরাপত্তা তথা খুঁটিনাটি বিষয়গুলো দেখা হচ্ছে। আগামী ২৮ অক্টোবর এ প্রকল্প উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। উদ্বোধনের পরদিন ২৯ অক্টোবর থেকে যানবাহন চলাচলের জন্য টানেল উন্মুক্ত করা হবে। বর্তমানে প্রকল্পের অগ্রগতি ৯৯ শতাংশ। কিছু ভবন নির্মাণের কাজ বাকি আছে। সেগুলো ডিসেম্বরের মধ্যে শেষ হবে।’
কর্ণফুলী নদীর তলদেশে ১৮ থেকে ৩১ মিটার গভীরে টানেলটি নির্মাণ করা হয়েছে। মূল টানেলের দৈর্ঘ্য ৩ দশমিক ৩২ কিলোমিটার। চার লেনবিশিষ্ট দুটি টিউবের প্রতিটির দৈর্ঘ্য ২ দশমিক ৪৫ কিলোমিটার। গত বছরের ২৬ নভেম্বর টানেলের দক্ষিণ প্রান্তের একটি টিউবের পূর্তকাজের সমাপ্তি উদযাপন করা হয়েছে। এই উদযাপন অনুষ্ঠানে গণভবন থেকে ভার্চুয়লি যুক্ত হন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
এছাড়া, মূল টানেলের পশ্চিম ও পূর্ব প্রান্তে ৫ দশমিক ৩৫ কিলোমিটার সংযোগ সড়ক এবং আনোয়ারা প্রান্তে ৭২৭ মিটার দৈর্ঘ্যের একটি ফ্লাইওভার থাকবে।
২০১৫ সালের নভেম্বরে অনুমোদন পায় প্রকল্পটি। ২০১৬ সালের ১৪ অক্টোবর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। ২০১৯ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি বঙ্গবন্ধু টানেলের নির্মাণকাজ উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
শুরুতে এর ব্যয় ধরা হয়েছিল ৮ হাজার ৪৪৬ দশমিক ৬৪ কোটি টাকা। পরে ব্যয় বৃদ্ধি পেয়ে ১০ হাজার ৩৭৪ দশমিক ৪২ কোটি টাকায় দাঁড়ায়। এরমধ্যে চীনের এক্সিম ব্যাংক ২ শতাংশ সুদে ৫ হাজার ৯১৩ দশমিক ১৯ কোটি টাকা দিচ্ছে। বাকি টাকা দিচ্ছে বাংলাদেশ সরকার।