দক্ষিণাঞ্চলের ২১ জেলার মানুষের আরেক স্বপ্নপূরণ
বাংলাদেশ

দক্ষিণাঞ্চলের ২১ জেলার মানুষের আরেক স্বপ্নপূরণ

শেষ হলো অপেক্ষার প্রহর। দেশের দক্ষিণাঞ্চলের ২১ জেলার মানুষের আরেক স্বপ্নপূরণ হতে যাচ্ছে। পদ্মা সেতু হয়ে যানবাহন চলাচলের পর এবার শুরু হচ্ছে ট্রেন চলাচল। বুধবার (০১ নভেম্বর) খুলনা থেকে ‘সুন্দরবন এক্সপ্রেস’ ও পরদিন ২ নভেম্বর বেনাপোল থেকে ‘বেনাপোল এক্সপ্রেস’ পদ্মা সেতু হয়ে ঢাকায় যাবে। এর মধ্য দিয়ে খুলছে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২১ জেলার ভাগ্যের চাকা। আরেক ধাপ এগিয়ে গেলো এ অঞ্চলের যোগাযোগ ব্যবস্থা। সবার মাঝে বইছে আনন্দের বন্যা। ট্রেনে পদ্মা সেতু পাড়ি দিতে উচ্ছ্বসিত তারা।

রেলওয়ে সূত্রে জানা গেছে, ১ নভেম্বর থেকে সুন্দরবন এক্সপ্রেস এবং ২ নভেম্বর থেকে বেনাপোল এক্সপ্রেস নতুন রুট (খুলনা-পোড়াদহ-কুষ্টিয়া কোর্ট-রাজবাড়ী-ফরিদপুর-পদ্মা সেতু-ঢাকা কমলাপুর) দিয়ে যাতায়াত করবে। ঢাকা থেকে পদ্মা সেতু হয়ে ভাঙ্গা স্টেশন পর্যন্ত ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছে মেইল ট্রেনে ৮০ টাকা, কমিউটার ট্রেনে ১০০ টাকা, শোভন চেয়ার ২৩০ টাকা, এসি চেয়ার ৪৪৩ টাকা, এসি সিট ৫২৯ টাকা এবং এসি বার্থ ৭৯৪ টাকা। 

রেলওয়ের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ১ নভেম্বর ‘সুন্দরবন এক্সপ্রেস’ ট্রেনটি খুলনা ছাড়বে রাত ৯টা ৪৫ মিনিটে। পদ্মা সেতু অতিক্রম করবে ভোর ৪টা ৭ থেকে ১৮ মিনিটে। ঢাকায় পৌঁছাবে ভোর ৫টা ১০ মিনিটে। তবে মাওয়া, শ্রীনগর ও নিমতলা স্টেশনে ট্রেনটি যাত্রাবিরতি করবে না। খুলনা থেকে ঢাকায় যাওয়ার পথে দৌলতপুর, নোয়াপাড়া, যশোর, মোবারকগঞ্জ, কোটচাঁদপুর, চুয়াডাঙ্গা, আলমডাঙ্গা, পোড়াদহ জংশন, কুষ্টিয়া কোর্ট, রাজবাড়ী, ফরিদপুর এবং ভাঙ্গা জংশন স্টেশনে যাত্রাবিরতি করে কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনে থামবে। পরদিন সকাল ৮টা ১৫ মিনিটে ঢাকা থেকে ভাঙ্গার উদ্দেশে ছেড়ে যাবে। সকাল ৯টা ৩০ মিনিটে ভাঙ্গায় পৌঁছাবে। পরে ভাঙ্গা থেকে ফরিদপুর হয়ে রাজবাড়ী, কুষ্টিয়া, চুয়াডাঙ্গা, যশোর হয়ে খুলনায় যাবে। 

২ নভেম্বর থেকে যাত্রা শুরু করবে ‘বেনোপোল এক্সপ্রেস’। ওই দিন বেনাপোল ছাড়বে দুপুর ১টায় এবং ঢাকায় পৌঁছাবে রাত ৮টা ৪৫ মিনিটে। ট্রেনটি ঢাকা ছাড়বে রাত ১১টা ৪৫ মিনিটে এবং বেনাপোল পৌঁছাবে সকাল ৭টা ২০ মিনিটে। পদ্মা সেতুতে রেল সংযোগের ফলে ঢাকা-খুলনার দূরত্ব কমবে ২১২ কিলোমিটার। 

গত ১০ অক্টোবর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঢাকা থেকে ভাঙ্গা পর্যন্ত রেলপথ উদ্বোধন করেন। এর আগে রাজশাহী থেকে মধুমতি এক্সপ্রেস চলাচল করেছিল ভাঙ্গা পর্যন্ত। রুট বাড়ানোর পর এই ট্রেনটি পদ্মা সেতু হয়ে ঢাকা পর্যন্ত চলাচল করবে। ২০২৪ সালের জুনে পদ্মা সেতু হয়ে ভাঙ্গা রেলস্টেশন অতিক্রম করে যশোর পর্যন্ত ট্রেন চলাচল শুরু হওয়ার কথা রয়েছে। তখন নকশীকাঁথা এক্সপ্রেসও চলাচল করবে।

প্রকল্প সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, পদ্মা সেতু রেলসংযোগ প্রকল্পের মাধ্যমে ঢাকা থেকে যশোর পর্যন্ত প্রায় ১৭২ কিলোমিটার দীর্ঘ নতুন রেলপথ নির্মাণ করছে রেলওয়ে। এর মধ্যে ঢাকা থেকে ভাঙ্গা পর্যন্ত প্রায় ৮২ কিলোমিটার রেলপথ চালু হচ্ছে। আগামী বছর জুনে যশোর পর্যন্ত ট্রেন চালু হওয়ার কথা রয়েছে।

খুলনা রেলস্টেশনের স্টেশন মাস্টার মো. মাসুদ রানা বলেন, ‘১ নভেম্বর থেকে নতুন রুটে ট্রেন চলাচল শুরু হবে। এজন্য আমাদের সব ধরনের প্রস্তুতি রয়েছে। নতুন এই রুটে যাত্রীদের আগ্রহ বেশি। এরই মধ্যে পদ্মা সেতু পার হয়ে ঢাকায় ট্রেনে যাত্রা করার জন্য বহু যাত্রী টিকিট কেটেছেন।’

১ নভেম্বর থেকে সুন্দরবন এক্সপ্রেস এবং ২ নভেম্বর থেকে বেনাপোল এক্সপ্রেস ট্রেন নতুন রুটে যাত্রা করবে বলে নিশ্চিত করেছেন বাংলাদেশ রেলওয়ের পশ্চিমাঞ্চলের সহকারী চিফ অপারেটিং সুপারিনটেনডেন্ট মো. আব্দুল আওয়াল। তিনি বলেন, ‘এজন্য আমাদের সব প্রস্তুতি সম্পন্ন।’

পদ্মা সেতু রেলসংযোগ প্রকল্পের মাধ্যমে ঢাকা থেকে যশোর পর্যন্ত প্রায় ১৭২ কিলোমিটার দীর্ঘ নতুন রেলপথ নির্মাণ করছে রেলওয়ে

খুলনা ও বেনাপোল বন্দরের ব্যবসায়ীরা বলছেন, বেনাপোলের সঙ্গে যশোর হয়ে ট্রেন যোগাযোগ চালু হওয়ায় পরিবহনের অগ্রযাত্রার সঙ্গে যোগ হচ্ছে আরেকটি নতুন অধ্যায়। যশোরের চেঙ্গুটিয়া থেকে নড়াইল পর্যন্ত রেলসড়কের নির্মাণকাজ এগিয়ে চলছে। সবকিছু ঠিক থাকলে আগামী বছর থেকে বেনাপোলের সঙ্গে নড়াইল হয়ে ঢাকায় যাবে ট্রেন। সম্পূর্ণ রেলপথ নির্মাণ না হওয়ায় বিকল্প পথে অর্থ্যাৎ মাওয়া থেকে ফরিদপুর-রাজবাড়ী-পোড়াদহ হয়ে ট্রেন যাবে যশোর। বেনাপোল থেকে ঢাকা যাবে একই পথে। আপাতত পোড়াদহ হয়ে ঢাকা পৌঁছাতে সময় একটু বেশি লাগবে। তবে বেনাপোলের সঙ্গে নড়াইল হয়ে ঢাকার রেল যোগাযোগ চালু হলে বদলে যাবে বন্দরের চিত্র। তখন সময় আরও কম লাগবে, ব্যবসা-বাণিজ্যে গতি আসবে।

দক্ষিণাঞ্চলের ২১ জেলার মানুষের আরেক স্বপ্নপূরণ হওয়া উচ্ছ্বসিত সিরাজদিখান উপজেলার বাসিন্দা বাবুল মিয়া। তিনি বলেন, ‘পদ্মা সেতু দিয়ে ট্রেন চলাচলের কথা এই অঞ্চলের মানুষ স্বপ্নেও ভাবেনি। এজন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ।’

১ নভেম্বর থেকে নতুন রুটে ট্রেন চলাচল শুরু হবে

পদ্মা সেতু রেল সংযোগ প্রকল্পের ঢাকা-মাওয়া অংশে তিনটি রেলস্টেশন থাকছে। সেগুলো হলো সিরাজদিখান উপজেলার নিমতলা স্টেশন, শ্রীনগর উপজেলার শ্রীনগর স্টেশন, লৌহজং উপজেলার মাওয়া স্টেশন। এগুলো এখনও চালু হয়নি। আগামী ডিসেম্বরে চালু হওয়ার কথা জানালেন প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা।

নিমতলা রেলস্টেশনের সহকারী প্রকৌশলী সম্রাট পারমিক বলেন, ‘রেললাইনের কাজের শুরু থেকে ঝড়বৃষ্টি মাথায় নিয়ে পরিশ্রম করছি। এখন কাজ শেষ প্রান্তে। এই প্রকল্পের কর্মী হতে পেরে আমি গর্বিত।’

ঢাকা থেকে মাওয়া অংশের প্রকল্প ইঞ্জিনিয়ার মোহাম্মদ শাহজাহান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘এই রেললাইনে ট্রেন চলাচলের সময় অন্যান্য রেললাইনের মতো ঝক ঝক শব্দ হবে না। আছে আধুনিক সিগন্যাল ব্যবস্থা। বেশিরভাগ স্টেশনে রাখা হয়েছে লো-হাই কাউন্টার, ফুটওভারব্রিজের সঙ্গে লিফট ব্যবস্থাসহ নানা সুবিধা আছে। চীন থেকে আনা অত্যাধুনিক সু্বিধাসম্পন্ন বগিগুলোতে সিসি ক্যামেরা, মোবাইল চার্জার, ব্রেস্ট ফিডিং কর্নার ও প্রতিবন্ধীদের জন্য বিশেষ ব্যবস্থা আছে।’

গত ১০ অক্টোবর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঢাকা থেকে ভাঙ্গা পর্যন্ত রেলপথ উদ্বোধন করেন

ঢাকা থেকে মাওয়া অংশের প্রকল্প ব্যবস্থাপক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আহমেদ জামিউল ইসলাম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘ইতোমধ্যে ঢাকা থেকে পদ্মা সেতু হয়ে ভাঙ্গায় পরীক্ষামূলকভাবে ট্রেন গেছে। ১২০ কিলোমিটার গতিতে ট্রেন চলাচলের উপযুক্ত করে লাইন নির্মাণ করা হয়েছে। তবে নতুন রুট হওয়ায় এবং স্থানীয়দের সচেতনতার জন্য প্রথমদিকে এত গতিতে ট্রেন চলাচল বাধাগ্রস্ত হতে পারে। এজন্য ঢাকা থেকে গেন্ডারিয়া পর্যন্ত ৬০, গেন্ডারিয়া থেকে কেরানীগঞ্জ পর্যন্ত ৮০, কেরানীগঞ্জ থেকে মাওয়া পর্যন্ত ১০০, মাওয়া থেকে ভাঙ্গা পর্যন্ত ১১৪ কিলোমিটার গতিতে চলবে।’

প্রকল্পের মাওয়া অংশের কিছু কাজ বাকি আছে উল্লেখ করে আহমেদ জামিউল ইসলাম বলেন, ‘নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কাজগুলো শেষ করবো আমরা। তবে প্রাথমিক পর্যায়ে সবকটি স্টেশন একসঙ্গে চালু করার খুব একটা প্রয়োজন নেই। আশা করছি, আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে সবগুলো স্টেশনের কাজ শেষ হয়ে যাবে।’ 

Source link

Related posts

আগামী বাজেটে যেসব বিষয় দেখা উচিত

News Desk

দেশে এপর্যন্ত করোনার ১৪০ ভ্যারিয়েন্ট শনাক্ত

News Desk

১০ ডিসেম্বর জায়গা নিয়ে দ্বন্দ্ব, ‘সমাধান হয়ে যাবে’ বললেন সেতুমন্ত্রী

News Desk

Leave a Comment