গত এক সপ্তাহে একটি এলাকার ৪০টি গুরুর মৃত্যু হয়েছে। আক্রান্ত হয়েছে আরও অর্ধশতাধিক। ঘটনাটি ঘটেছে দিনাজপুরের বীরগঞ্জ উপজেলার সাতোর ইউনিয়নের প্রাণনগর গোয়ালপাড়া এলাকায়। অজ্ঞাত রোগ মনে করে আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন স্থানীয় খামারিরা। এ ঘটনায় কাজ শুরু করেছে জেলা প্রাণিসম্পদ অধিদফতর। ইতোমধ্যেই নমুনা সংগ্রহ করে কেন্দ্রে পাঠানো হয়েছে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, এটি ক্ষুরারোগের একটি নতুন প্রজাতি। প্রয়োজনীয় চিকিৎসা প্রদানে এখন অনেকটা নিয়ন্ত্রণে।
জানা যায়, ২০০০ সালের দিকে স্বাবলম্বী হওয়ার আশায় বাড়িতেই কয়েকটি গরু নিয়ে খামার গড়ে তোলেন ওই এলাকার বাসিন্দা দুই ভাই গোপাল ঘোষ ও আনন্দ ঘোষ। এরপর থেকে ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে গরুর সংখ্যা। সর্বশেষ তাদের গরুর সংখ্যা দাঁড়ায় ১৩০টিতে। প্রতিদিন এই খামার থেকে ৫ শতাধিক লিটার দুধ উৎপাদিত হয়। মোটামুটি গরুতেই তারা স্বাবলম্বী। এরই মধ্যে গত কয়েকদিন ধরে গরুগুলোকে অজ্ঞাত রোগে আক্রমণ করে। প্রথমদিকেই চিকিৎসা শুরু করলেও ভালো হয়নি। পরের একে একে মারা যায় ৩৫টি গরু।
একই অবস্থা ওই এলাকার গোবিন্দ ঘোষেরও। তার খামারেও ছিল ২০টি গরু ও ১০টি মহিষ। যার মধ্যে একই রোগে ৩টি গরু ও একটি মহিষের মৃত্যু হয়। খামারি গৌতম ঘোষেরও মারা যায় একটি গরু। আক্রান্ত রয়েছে বেশ কয়েকটি গরু। এ নিয়ে ৩টি খামারের মোট ৪০টি গরুর মৃত্যু হয়েছে। আক্রান্ত রয়েছে প্রায় অর্ধশতাধিক।
হঠাৎ করে অজ্ঞাত রোগে একের পর এক গরুর মৃত্যুতে দিশেহারা হয়ে পড়েছে খামারিরা। ঘটনার পর থেকে খামারিদের মাঝে আতঙ্কের সৃষ্টি হয়েছে। তারা জানিয়েছেন, মুখ দিয়ে লালা ঝরা, দুর্বলতা ও কিছু না খাওয়া ছিল লক্ষণ। পরে ঘাড়বাঁকা হয়ে মারা যায় আক্রান্ত গরু।
ক্ষতিগ্রস্ত খামারি আনন্দ ঘোষ বলেন, ‘গরুগুলো আক্রান্ত হওয়ার পর চিকিৎসকদের জানাই। এরপর তাদের পরামর্শ অনুযায়ী ওষুধ সেবন করানো হয়। কিন্তু কোনও লাভ হয়নি। বর্তমানে দিনাজপুর, ঠাকুরগাঁও, বীরগঞ্জ, খানসামাসহ আশপাশের ভেটেরিনারি কর্মকর্তা ও চিকিৎসকরা চিকিৎসা দিলেও কোনও কাজ হচ্ছে না। দিন দিন অবস্থা আরও খারাপের দিকে চলে যাচ্ছে। ইতোমধ্যে যেসব গরু মারা গেছে তার মূল্য এক কোটি টাকারও ওপর।’
খামারি আনন্দ ঘোষ বলেন, ‘আমরা চাই একটি সমাধান। কোনোভাবে যেসব গরু এখন আক্রান্ত তারা যাতে মৃত্যুবরণ না করে। একেই তো আমরা লোকসানের দিকে, সবগুলো গরুকে বাঁচাতে না পারলে আমরা সর্বস্বান্ত হয়ে যাবো।’
খামারি চঞ্চল ঘোষ বলেন, ‘চিকিৎসা তো চলছে কিন্তু উপকার তো হচ্ছে না। আমরা চিকিৎসকদের সব পরামর্শ অনুযায়ীই কাজ করছি। গরুগুলো খাচ্ছে না ঠিকভাবে। এভাবে খাওয়া ছেড়ে দিলে কত দিন বাঁচবে। আমরা চাই, দ্রুত এই সমস্যা থেকে উত্তরণ।’
গরুর মৃত্যু ও আক্রান্তের বিষয়টি জানতে পেরে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে নমুনা সংগ্রহ করার কথা জানিয়েছেন জেলা ভেটেরিনারি কর্মকর্তা ড. আশিকা আকবার তৃষা। তিনি বলেন, ‘বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাকে জানানো হয়েছে। ঢাকা থেকে একটি টিম ওই স্থানে এসে পর্যবেক্ষণ করবেন এবং নমুনা সংগ্রহ করবেন। আপাতত মনে হয়েছে এটি ক্ষুরারোগ। এই রোগের নতুন একটি ভ্যারিয়েন্ট। প্রতিবেদন পেলে বিষয়টি আরও ভালোভাবে জানা যাবে। আপাতত রোগের চিকিৎসা প্রদান করা হচ্ছে এবং আগের চেয়ে পরিস্থিতি অনেকটাই ভালো।’