নিজ ভাষার বই পেয়ে উচ্ছ্বসিত ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর শিশুরা
বাংলাদেশ

নিজ ভাষার বই পেয়ে উচ্ছ্বসিত ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর শিশুরা

পার্বত্য জেলা রাঙামাটিতে সাধারণ বইয়ের সঙ্গে নিজ ভাষার বই পেয়ে খুশি ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর শিশুরা। নতুন বছরের প্রথম দিন সোমবার (০১ জানুয়ারি) তাদের হাতে নতুন পাঠ্যবই তুলে দেওয়া হয়েছে। তবে নতুন কারিকুলাম নিয়ে অভিভাবকদের মাঝে রয়েছে শঙ্কা। যদিও শিক্ষা সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলেছেন, এটি আমাদের প্রচলিত শিক্ষাব্যবস্থার জন্য নিঃসন্দেহে ইতিবাচক পরিবর্তন। এতে শিশুরা যোগ্য হিসেবে গড়ে উঠবে।

সোমবার সকালে রাঙামাটি শহরের গোধুলী আমাতনবাগ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বই বিতরণ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন জেলা প্রাশসক মোহাম্মদ মিজানুর রহমান। এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) নাসরিন সুলতানা, জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা হৃষীকেশ শীল, পিটিআইয়ের সুপারিনটেনডেন্ট এমরানুল ইসলাম মানিক ও বিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও অভিভাবকবৃন্দ। এর আগে সকাল সকাল বিদ্যালয়ে জড়ো হয় শিক্ষার্থীরা। অধীর আগ্রহ নিয়ে অপেক্ষায় থাকে। বই হাতে পেয়ে আনন্দে মেতে ওঠে। 

এ বছর জেলায় ৭০৭টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ৯১ হাজার ৩১৬ শিক্ষার্থীর মাঝে ৩ লাখ ৮৬ হাজার ৭৮৯টি সাধারণ বই এবং ৯ হাজার ৯৯৪ শিক্ষার্থীর মাঝে ৬৩ হাজার ৪৬৮টি (চাকমা, মারমা, ত্রিপুরা) মাতৃভাষার বই বিতরণ করা হয়েছে। 

এর মধ্যে প্রাক-প্রাথমিকে চাকমা ভাষার ১১ হাজার ৭৪টি, মারমা ভাষার দুই হাজার ৩০৮টি ও ত্রিপুরা ভাষার ৬৩৬টি বই বিতরণ করা হয়। প্রথম শ্রেণিতে চাকমা ভাষার ১৬ হাজার ৫৯৩টি, মারমা ভাষার তিন হাজার ৫৩৪টি, ত্রিপুরা ভাষার এক হাজার দুটি, দ্বিতীয় শ্রেণিতে চাকমা ভাষার ১৬ হাজার ৯৯৮টি, মারমা ভাষার তিন হাজার ৩৭৫টি, ত্রিপুরা ভাষার ৯৫৪টি, তৃতীয় শ্রেণিতে চাকমা ভাষার পাঁচ হাজার ৫৪০টি, মারমা ভাষার এক হাজার ১১২টি, ত্রিপুরা ভাষার ৩৪২টি পাঠ্যবই চাহিদা আনুযায়ী পাওয়া গেছে। 

ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর শিক্ষার্থীদের ঝরেপড়া রোধে প্রাক-প্রাথমিক থেকে তৃতীয় শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের হাতে মাতৃভাষার বই তুলে দিচ্ছে সরকার। সাধারণ বইয়ের সঙ্গে নিজের ভাষার বই পেয়ে খুশি এসব শিশু। ২০১৭ সাল থেকে পার্বত্য চাকমা, মারমা ও ত্রিপুরা ভাষাভাষি শিশুদের হাতে তুলে দেওয়া হচ্ছে এসব বই। 

তৃতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থী মো. হাবিবুর রহমান জানায়, ‘আমি দ্বিতীয় শ্রেণি থেকে তৃতীয় শ্রেণিতে উঠেছি। নতুন বছরের প্রথম দিন নতুন বই পেয়ে আমার খুব ভালো লাগছে। অনেক খুশি হয়েছি।’

চতুর্থ শ্রেণির শিক্ষার্থী রোকেয়া আক্তার জানায়, ‘নতুন বইয়ের ঘ্রাণ সব সময় ভালো লাগে। নতুন বই নিতে স্কুলে এসেছি। বইও পেয়েছি।’

তৃতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থী অর্পা চাকমা জানায়, ‘আমি চাকমা ভাষার বই পেয়ে অনেক খুশি। বাংলা শেখার পাশাপাশি এখন চাকমা ভাষা শিখতে ও লিখতে পারবো।’

নতুন কারিকুলাম নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করে স্থানীয় অভিভাবক রাবেয়া আক্তার বলেন, ‘নতুন কারিকুলাম শুরু হয়েছে। শিশুরা কী শিখবে, তা নিয়ে চিন্তিত। শিক্ষকরা যাতে তাদের ভয় দূরে করে দেয়, সে অনুরোধ করছি।’

আরেক অভিভাবক রুমা আক্তার বলেন, ‘ফেসবুকে দেখেছি নতুন কারিকুলামে শিক্ষার্থীদের স্কুলে ভাত রান্না শেখাচ্ছে। এসব তারা বাড়িতে এমনিতেই শিখবে। শিশুদের পড়ালেখার জন্য স্কুলে পাঠাই, ভাত রান্নার জন্য নয়।’

রাঙামাটি শহরের গোধুলী আমাতনবাগ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বই বিতরণ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়

রীতা চাকমা বলেন, ‘ছোটবেলায় আমাদের সময় চাকমা ভাষা বলতে পারলেও লিখতে পারতাম না। এখন স্কুলে মাতৃভাষা শিক্ষা দেওয়া হচ্ছে। এতে আমাদের শিশুরা তাদের মাতৃভাষা ভালো করে শিখতে পারছে। তবে বিদ্যালয়গুলোতে মাতৃভাষা শিক্ষাদানের শিক্ষক সংকট রয়েছে। শিক্ষক সংকট দূর করা দরকার।’

চাহিদা অনুযায়ী সাধারণ বইয়ের সঙ্গে মাতৃভাষার বইও বিদ্যালয়ে পৌঁছে গেছে বলে জানিয়েছেন জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা হৃষীকেশ শীল। তিনি বলেন, ‘মাতৃভাষা পাঠদানের জন্য স্ব স্ব ভাষায় শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ ফেব্রুয়ারিতে আবারও শুরু হবে।’

নতুন কারিকুলাম নিয়ে শঙ্কার কোনও কারণ নেই উল্লেখ করে জেলা প্রাশসক মোহাম্মদ মিজানুর রহমান বলেন, ‘সারা বিশ্বের শিক্ষা ব্যবস্থায় যে কারিকুলাম রয়েছে, সেগুলো পর্যালোচনা করেই নতুন কারিকুলাম প্রস্তুত করা হয়েছে। কাজেই শঙ্কিত হওয়ার কিছুই নেই। এটি যুগোপযোগী কারিকুলাম। বিশ্বের সঙ্গে আমাদের শিশুরা যাতে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে পারে সেজন্য নতুন কারিকুলাম। এর মাধ্যমে শিশুরা যোগ্য নাগরিক হিসেবে গড়ে উঠবে।’

Source link

Related posts

বাড়তি বিদ্যুৎ উৎপাদন করে দেশকে আর্থিকভাবে বিপদে ফেলা হচ্ছে: রেহমান সোবহান

News Desk

হাঁড়িভাঙা বদলে দিলো ভাগ্য, ২০০ কোটি টাকা বিক্রির আশা

News Desk

করোনায় ৩৪ জনের মৃত্যু, শনাক্ত ১৮৮৭

News Desk

Leave a Comment