শেষ মুহূর্তে নড়াইলে মাশরাফি বিন মুর্তজার নির্বাচনি মাঠ জমে উঠেছে। জাতীয় ক্রিকেট দলের সফল অধিনায়ক মাশরাফিকে দ্বিতীয় বারের মতো সংসদ সদস্য হিসাবে বরণ করে নিতে প্রস্তুত নড়াইলবাসী। বিশেষ করে নতুন ভোটাররা ভোট দিতে মুখিয়ে রয়েছেন তরুণ প্রজন্মের এই আইকনকে। অনেকেই অপেক্ষার প্রহর গুনছেন ভোটের দিনের জন্য। মাশরাফি বন্দনায় গোটা নড়াইল মুখরিত।
আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীকের প্রার্থী দলটির কেন্দ্রীয় কমিটির যুব ও ক্রীড়া বিষয়ক সম্পাদক ক্রিকেট তারকা মাশরাফি বিন মুর্তজার বিকল্প কাউকে ভাবছেন না বেশিরভাগ ভোটার। অবহেলিত নড়াইলের উন্নয়নে অনেক দৌঁড়ঝাপ করে কয়েকটি মেগা প্রকল্প অনুমোদন করাতে সক্ষম হয়েছেন মাশরাফি। যে কারণে ভোটের সমীকরণে অন্য প্রার্থীদের তুলনায় হ্যাভিওয়েট মাশরাফি অনেকটা সুবিধাজনক অবস্থানে রয়েছেন।
মাশরাফির প্রচেষ্টায় নড়াইলে আইটি পার্ক, ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ, নড়াইল সদর হাসপাতাল ২৫০ শয্যায় উন্নীতকরণ, নড়াইল শহরের ফোরলেন সড়ক, পাসপোর্ট অফিসের নিজস্ব নতুন ভবন, নার্সিং কলেজ, নড়াইল পৌরসভার নতুন ভবনসহ বিভিন্ন অবকাঠামো নির্মিত হয়েছে। নড়াইলে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় ও ইকোনমিক জোন স্থাপনের বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। নড়াইলবাসী ভাবছে মাশরাফি পুনরায় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হলে এ জেলায় উন্নয়নের ছোঁয়া আগের তুলনায় আরও অনেক বেশি হবে।
নির্বাচনি এলাকার যেসব উন্নয়নকাজ অসমাপ্ত রয়েছে এবার এমপি হলে আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে সব কাজ সমাপ্ত করবো প্রতিশ্রুতি দিয়ে মাশরাফি বিন মর্তুজা সম্প্রতি পথসভায় বলেছেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সবার উন্নয়নে কাজ করছেন। কোনও উন্নয়ন প্রকল্প তিনি দল কিংবা প্রার্থী দেখে দেন না। দেশের সব জনপদের সাধারণ মানুষের দুঃখ-দুর্দশা দূর করতে যেকোনো উন্নয়ন প্রকল্প তিনি বরাদ্দ দেন। মানুষের মুখে হাসি ফোটানো তার লক্ষ্য। আপনাদের জন্য কাজ করতে এখানে আমাকে তিনি মনোনয়ন দিয়ে পাঠিয়েছেন। আগামী ৭ জানুয়ারি কেন্দ্রে গিয়ে নৌকা প্রতীকে আপনারা ভোট দেবেন। আপনাদের ভোটে আমি এমপি নির্বাচিত হতে চাই।’
ইতালির রোম শহর একদিনে তৈরি হয়নি উল্লেখ করে মাশরাফি বলেন, ‘নড়াইল জেলা এমনিতেই অনেক সুন্দর। এটিকে আরও সুন্দর ও বসবাস উপযোগী করে গড়ে তুলতে চাই। জন্মস্থানের টানে বারবার এখানে ছুটে আসি। মানুষের সুখ-দুঃখের ভাগিদার হতে চাই। পৃথিবীর যে দেশেই খেলতে কিংবা ঘুরতে গিয়েছি, সবখানে নড়াইলের কথা তুলে ধরেছি। সামনের দিনগুলোতে আরও তুলে ধরতে চাই।’
মাশরাফি বিন মুর্তজা আরও বলেছেন, ‘আমি দৌড়াতে পারি মন্ত্রণালয়ে। অফিস থেকে অফিসে আমি দৌড়েছি বলেই নড়াইলে মেগা প্রকল্প দৃশ্যমান। যেসব কাজে মানুষের কল্যাণ সাধিত হয়, নতুন প্রজন্মসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ উপকৃত হয়, আগামীতে সেসব কাজ বাস্তবায়নের জোর প্রচেষ্টা চালাবো।’
মাশরাফির ভোটের মাঠের পরিস্থিতি কেমন জানতে চাইলে নড়াইল জেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট সোহরাব হোসেন বিশ্বাস বলেন, সন্তানতুল্য মাশরাফি আমাদের গর্ব। দেশ-বিদেশে তার অনেক পরিচিতি রয়েছে। বিগত ৫বছর তার প্রচেষ্টায় জেলায় অনেক উন্নয়ন হয়েছে। আমরা তাকে এমপি হিসেবে পুনরায় দেখতে চাই।
লোহাগড়া পৌরসভার মেয়র সৈয়দ মশিয়ূর রহমান জানান, মাশরাফির জন্মস্থান নড়াইল সদর উপজেলায় হলেও লোহাগড়াকে তিনি নিজের জন্মভিটার মতো ভালোবাসেন। এ উপজেলার মানুষের সুখে-দুঃখে সবসময় পাশে থাকার চেষ্টা করেন। লোহাগড়াকে কখনও আলাদা চোখে দেখেন না। লোহাগড়ার মানুষও তাকে নিজের সন্তানের মতো ভালোবাসেন। মাশরাফির জয়ের ব্যাপারে আমরা একাট্টা।
লোহাগড়ার আমাদা গ্রামের সন্তান মেডিক্যাল ছাত্র ফাহিম শাহরিয়ার খান জানান, নতুন প্রজন্মের আইকন মাশরাফি ভাইয়াকে ভোট দিতে অপেক্ষায় আছি। মাদকমুক্ত পরিবেশে নতুন প্রজন্মকে কীভাবে মানুষের মতো মানুষ হিসাবে গড়ে তোলা যায় এটাই তার ভাবনা। যে কারণে আমরা নতুন প্রজন্ম তাকে অনেক বড় জায়গায় দেখতে চাই।
লোহাগড়া উপজেলার ১২টি ইউনিয়ন ও নড়াইল পৌরসভাসহ সদর উপজেলার ৮টি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত নড়াইল-২ আসন। এখানে আওয়ামী লীগের প্রার্থী মাশরাফি ছাড়াও বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির প্রার্থী শেখ হাফিজুর রহমান, জাতীয় পার্টির খন্দকার ফায়েকুজ্জামান (ফিরোজ), ন্যাশনাল পিপলস পার্টি-এনপিপির মো. মনিরুল ইসলাম, গণফ্রন্ট মনোনীত মো. লতিফুর রহমান, ইসলামী ঐক্যজোটের মো. মাহবুবুর রহমান এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী মো. নুর ইসলাম নির্বাচনি প্রচার-প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন। এ আসনে লোহাগড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক উপজেলা চেয়ার্যমান স্বতন্ত্র প্রার্থী সৈয়দ ফয়জুল আমির লিটু মাশরাফি বিন মুর্তজাকে সমর্থন জানিয়ে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন।
৯৪ নড়াইল-২ আসনে মোট ভোটার সংখ্যা ৩ লাখ ৬৫ হাজার ৭২৯। এর মধ্যে মহিলা ভোটার ১ লাখ ৮৩ হাজার ৭৩৯ এবং পুরুষ ভোটার ১ লাখ ৮১ হাজার ৯৯০ জন।