করোনা অতিমারির মধ্যে কোভিড-১৯ আক্রান্ত রোগীদের সঠিক স্বাস্থ্য সেবা দিতে যখন হিশমিশ খাচ্ছে স্বাস্থ্য বিভাগ। ঠিক সেই মুহূর্তে দেশবাসীর জন্য কিছুটা হলেও স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলার সুযোগ করে দিচ্ছে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন (ডিএনসিসি)। কেননা শত কোটি টাকার রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হলেও মানুষের সেবার উদ্দেশ্যে বহুতল মার্কেটটি হাসপাতাল করার জন্য ছেড়ে দিয়েছেন মেয়র মো. আতিকুল ইসলাম।
রাজধানীর মহাখালী বাস স্ট্যান্ডের কাছেই নির্মিত এই বহুতল মার্কেটটি এখন ‘ডিএনসিসি কোভিড-১৯ ডেডিকেটেড হাসপাতাল’। গতবছর করোনা সংক্রমণ দেখা দেবার পর মার্কেটটি ‘ডিএনসিসি করোনা আইসোলেশন সেন্টার’ ঘোষণা করা হয়। সেই আইসোলেশন সেন্টারটি এখন পূর্ণাঙ্গ হাসপাতলে রূপ নিয়েছে। রোববার (১৮ এপ্রিল) আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হতে যাচ্ছে ‘ডিএনসিসি কোভিড-১৯ ডেডিকেটেড হাসপাতাল’। স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক ও ডিএনসিসি মেয়র মো. আতিকুল ইসলামের হাসপাতালটি উদ্বোধন করার কথা রয়েছে।
সশস্ত্র বাহিনীর তত্তাবধানে পরিচালিত হবে এই হাসপাতাল। ১০০০ শয্য বিশিষ্ট হাসপাতালে ১০০ শয্যার আইসিইউ এবং ১১২টি এইচডিইউ শয্য থাকবে। যা এযাবৎকালে দেশের ইতিহাসে সর্ববৃহৎ আইসিইউ সার্পোট হাসপাতাল বলে জানিয়েছেন হাসপাতালটির পরিচালক।
রোববার ৫০টি আইসিইউ বেড ও ৫০টি ইমার্জেন্সি বেড এবং বাকি ১৫০টি সাধারণ বেড নিয়ে আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু হবে। তবে চলতি মাসের ২৯ তারিখের মধ্যে পুরো এক হাজার শয্য চালু করার টার্গেট নিয়ে কাজ চলছে বলে জানান পরিচালক।
হাসপাতালটির পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এ কে এম নাছির উদ্দিন বার্তা২৪.কম-কে মোবাইলফোনে বলেন, ‘আগামীকাল রোববার হাসপাতালটি উদ্বোধন করবেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী এবং সাথে থাকবেন মেয়র। আমরা ২৫০ শয্যা নিয়ে কাল যাত্রা শুরু করছি, তবে আগামী ২৯ এপ্রিলের মধ্যে পুরো এক হাজার শয্যা চালু করব ইনশাল্লাহ।’
তিনি আরও বলেন, ‘যেহেতু নতুন একটা মার্কেট ভেঙে কাজ করতে হচ্ছে তাই কিছুটা সময় লেগে যাচ্ছে। তবে আগামীকাল যে ২৫০ শয্যা নিয়ে চালু হবে তার জন্য ডাক্তার, নার্সসহ সকল স্টাফ প্রস্তুত আছে। তাছাড়া প্রতিদিনই এখানে ডাক্তার নার্স যুক্ত হচ্ছে। হাসপাতালটি সশস্ত্র বাহিনীর নিয়ন্ত্রণে থাকবে। তবে সকল নাগরিক এখান থেকে সেবা নিতে পারবেন।’
হাসপাতাল সম্পর্কে পরিচালক বলেন, ‘এখানকার ডাক্তার নার্স ও অন্যান্য স্টাফ এবং সকল আর্থিক সহযোগিতা করবে স্বাস্থ্য বিভাগ। আর ডিএনসিসি মেয়র তার এই ভবনটি দিয়ে আমাদের সহযোগিতা করেছেন।’
কোভিড পরবর্তিতে এটি হাসপাতাল হিসেবে থাকবে কি না- জানতে চাইলে বলেন, ‘এই হাসপাতালটি এমনভাবে প্রস্তুত করেছি যেন পরবর্তিতে এটা জেনারেল হাসপাতাল হিসেবেই পরিচালনা করা যায়। এখানে ৬ তলার পুরোটাই আইসিইউ প্যাটার্ন। ভবনের ৬ তলার পুরোটাই আইসিইউ ২১২ সার্পোট থাকবে। এটা দেশের মধ্যে সবচেয়ে বড় আইসিইউ সার্পোট হাসপাতাল হতে যাচ্ছে। এরকম একটা জায়গায় আমরা প্রত্যাশা করি কোভিড চলে গেলেও এটা যেন জেনারেল হাসপাতাল হিসেবেই ভবিষতে চালানো যায়।’
হাসপাতালের বিষয়ে এর আগে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের মেয়র মো. আতিকুল ইসলাম বলেছেন, ‘আমি রাজস্বের কথা চিন্তা করিনি। এই মার্কেটের দোকান থেকে প্রায় ১০০ কোটি টাকা বছরে রাজস্ব পেতাম সেটা আমি ছেড়ে দিয়েছি। আমি চিন্তা করেছি মানুষের সেবা আগে। এখানে যারা দোকান বরাদ্দ পেয়েছিল তাদের টাকা ফেরত দিয়েছি অনেককে অন্যত্রে স্থানন্তর করে দিয়েছি। যেহেতু ডিএনসিসিতে বড় হাসপাতাল নেই তাই আমি চিন্তা করেছি এটি হাসপাতালের জন্যই ছেড়ে দেব। সেই চিন্তা থেকেই বলা এখন সেটি বাস্তবে রূপ পেতে যাচ্ছে।