রিমালের তাণ্ডবে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি, এখনও আতঙ্ক কাটেনি উপকূলে
বাংলাদেশ

রিমালের তাণ্ডবে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি, এখনও আতঙ্ক কাটেনি উপকূলে

নদীতে ভাটা প্রবাহের সময় ঘূর্ণিঝড় রিমাল আঘাত হানায় বড় ধরনের বিপর্যয় থেকে রক্ষা পেলেও আতঙ্ক কাটেনি সাতক্ষীরার উপকূলীয় জনপদে। বেড়িবাঁধ ভেঙে লবণাক্ত পানিতে জনপদ প্লাবিত হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।

উপকূলীয় উপজেলা শ্যামনগর ও আশাশুনিতে জোয়ারের পানিতে বেঁড়িবাধ উপচে এবং প্রবল বর্ষণে শত শত মৎস্যঘের প্লাবিত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। ঘূর্ণিঝড়ে উপকূলীয় এলাকায় ৫৪১ কাঁচা ঘরবাড়ি ধসে গেছে। ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে উপকূলীয় এলাকাসহ সাতক্ষীরা জেলাশহর বিদ্যুৎসংযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে।

এদিকে, সাতক্ষীরা-মুন্সীগঞ্জ সড়কে একাধিক পয়েন্টে গাছগাছালি ভেঙে পড়ায় সড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। পরে পুলিশ ও স্থানীয় জনতা ভেঙে পড়া গাছ-গাছালি সরিয়ে ফেলায় ভোর রাতে যোগাযোগ ব্যবস্থা স্বাভাবিক হয়।

এর আগে রবিবার রাত ৯টার দিকে ঘূর্ণিঝড় রিমাল উপকূলীয় অঞ্চলের মূল ভূখণ্ডে আঘাত হানে। এ সময় সুন্দরবন সংলগ্ন নদ-নদীতে ছিল ভাটার প্রবাহ। যার কারণে সৃষ্ট জলোচ্ছ্বাসে পানি উন্নয়ন বোর্ডের বেঁড়িবাধে তেমন কোনও ক্ষয়ক্ষতি হয়নি।

গাবুরা ইউনিয়নের বাসিন্দা ওয়েজ কুরুনি বলেন, ‘রবিবারের মতো আজও সাতক্ষীরা উপকূলে ঝড় এবং বৃষ্টি শুরু হয়েছে।’

উপকূলে অবস্থান করা সাংবাদিক এম কামরুজ্জামান বলেন, ‘ঘূর্ণিঝড় রিমালে সাতক্ষীরা উপকূল এলাকায় খুব বেশি ক্ষতি না হলেও নদ-নদীগুলো এখনও উত্তাল রয়েছে। এর আগেও দেখা গেছে, সাতক্ষীরা উপকূলে ঝড়ের চেয়ে লবণাক্ত জলের কারণে সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়। উপকূলের মাটির বাঁধগুলো সব জরাজীর্ণ হয়ে গেছে। এখনও গত কালকের মতো বৃষ্টি এবং ঝড় বয়ে যাচ্ছে। আশঙ্কা করা হয়েছে, বেড়িবাঁধ ভেঙে বিভিন্ন এলাকা প্লাবিত হতে পারে। এ জন্য আতঙ্ক কাটেনি সাতক্ষীরা উপকূলের মানুষের। কী পরিমাণ ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে প্রশাসন সেটি এখনও নিরূপণ করে আমাদের জানাতে পারেনি।’

বেড়িবাঁধ উপচে প্রবশে করা পানি ঠেকানোর চেষ্টা গ্রামবাসীর গাবুরা ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মাসুদুল আলম বলেন, ‘ঘূর্ণিঝড় রিমাল সাতক্ষীরা উপকূলে ব্যাপক তাণ্ডব চালিয়েছে। রাত ১০টা থেকে ৩টা পর্যন্ত একটানা বৃষ্টি ও ঝড় বয়ে গেছে। আমার ইউনিয়নের দেড় শতাধিক বাড়িঘর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। প্রবল বর্ষণে ৪০-এর অধিক মৎস্যঘের ভেসে গেছে। শত শত গাছ উপড়ে পড়েছে। বাঁধ না ভাঙলেও কোথাও কোথাও বাঁধ ছাপিয়ে লোকালয়ে পানি প্রবেশ করেছে। বৃষ্টিতে বাঁধগুলো খুবই ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে। সোমবার দুপুর থেকে আবারও বৃষ্টি এবং ঝড় শুরু হয়েছে। কী হবে আল্লাহ ভালো জানেন।’

সাতক্ষীরা পানি উন্নয়ন বোর্ড বিভাগ-১-এর নির্বাহী প্রকৌশলী সালাহ উদ্দীন জানান, বেড়িবাঁধের দুর্বল পয়েন্টে দিনরাত কাজ করা হয়েছে। এ কারণে এখন পর্যন্ত তেমন কোনও ক্ষয়ক্ষতি হয়নি।

শ্যামনগর উপজেলা নির্বাহী অফিসার নজিবুল আলম বলেন, ‘ঘূর্ণিঝড়ে বড় ধরনের কোনও ক্ষয়ক্ষতি হয়নি। প্রাথমিকভাবে আমরা যে তথ্য পেয়েছি তাতে দেখা যাচ্ছে, শ্যামনগরের গাবুরা, পদ্মপুকুর, বুড়িগোয়ালিনী, আটুলিয়াসহ বারোটি ইউনিয়নে ৫৪১টি কাঁচা বাড়িঘর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এর মধ্যে ৯৩টি সম্পূর্ণ এবং ৪৪৮টি আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। প্রবল জোয়ারে নদীর পানি ছাপিয়ে কোথাও কোথাও লোকালয়ে প্রবেশ করলেও বাঁধ ভাঙার খবর পাওয়া যায়নি। তবে গতকালের টানা বর্ষণে কিছু মাছের ঘের তলিয়ে গেছে‌। তবে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ এখনই জানানো সম্ভব হচ্ছে না।’

Source link

Related posts

ভয়-আতঙ্কে বান্দরবানের হোটেল-রিসোর্ট ফাঁকা, পর্যটনে ধস

News Desk

ভারতীয় গরু নিয়ে যত চিন্তা

News Desk

৬ বছরে পুঁজিবাজার থেকে ৪৮৩১ কোটি টাকার মূলধন সংগ্রহ

News Desk

Leave a Comment