এক জেলায় বন্যায় ক্ষতি ৪৫০ কোটি টাকা
বাংলাদেশ

এক জেলায় বন্যায় ক্ষতি ৪৫০ কোটি টাকা

নেত্রকোনায় বন্যার পানি নেমে যাচ্ছে। জেলার সবকটি নদ-নদীর পানি কমে বিপদসীমার অনেক নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। পানি নেমে যাচ্ছে লোকালয় থেকেও। তবে পানি কমতে শুরু করার সঙ্গে সঙ্গে ফুটে উঠছে ক্ষয়ক্ষতির চিত্র। বন্যায় কৃষি, মৎস্য ও সড়কেই প্রায় ৪৫০ কোটি টাকার মতো ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট দফতরগুলোর দেওয়া প্রাথমিক তথ্যে জানা গেছে।

আমন ধানের ক্ষতি

এ বছর জেলার ১০টি উপজেলায় ১ লাখ ৩৫ হাজার ৯০০ হেক্টর জমিতে আমন আবাদ করা হয়। এর মধ্যে আকস্মিক বন্যায় ২৪ হাজার ৬৬৭ হেক্টর জমির ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এছাড়া, ১৭৭ হেক্টর জমির সবজি নষ্ট হয়েছে, যার ক্ষতিক্ষতির পরিমাণ ৩১৩ কোটি টাকা। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপপরিচালক মোহাম্মদ নূরুজ্জামান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, বন্যায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে জেলার কলমাকান্দা উপজেলায় ৮ হাজার ৩৪৫ হেক্টর আমন ও ৪৫ হেক্টর শাকসবজি, দুর্গাপুর উপজেলায় ৭ হাজার হেক্টর আমন ও ৫২ হেক্টর শাকসবজি, বারহাট্টা উপজেলায় ৫ হাজার ১১৭ হেক্টর আমন ও ১০ হেক্টর শাকসবজি, পূর্বধলা উপজেলায় ২ হাজার ১০০ হেক্টর আমন ও ৪০ হেক্টর শাকসবজি এবং সদর উপজেলায় ১ হাজার ১৮০ হেক্টর আমন ও ৩০ হেক্টর শাকসবজির ক্ষেত। এছাড়া, মোহনগঞ্জ উপজেলায় ১৪০ হেক্টর আমন, আটপাড়া উপজেলায় ৭৫০ হেক্টর আমন, মদন উপজেলায় ২৫ হেক্টর আমন ও খালিয়াজুরী উপজেলায় ১০ হেক্টর আমন ক্ষেতের ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। সব মিলিয়ে ক্ষতির পরিমাণ ৩১৩ কোটি টাকা।

তিনি আরও বলেন, আমরা বন্যায় ক্ষয়ক্ষতির প্রতিবেদন ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠিয়েছি। সরকারি বরাদ্দ প্রাপ্তি সাপেক্ষে সহায়তা প্রদান করা হবে। বরাদ্দ প্রাপ্তির সম্ভাবনা আছে।

মৎস্য খাতে ক্ষতি

জেলায় মুক্ত ও বদ্ধ জলাশয় রয়েছে ৮৪ হাজার ১৬৫ হেক্টর। এতে মাছ উৎপাদন হয় প্রায় ১ লাখ ১০ মেট্রিক টন। এর মধ্যে ছোট-বড় ৮৯টি হাওরে ৪০ শতাংশ, খাল-বিল ও নদ-নদীতে ১৫ শতাংশ মাছ উৎপাদিত হয়। বাকি ৪৫ শতাংশ মাছ ফিশারি ও পুকুরে চাষ করা হয়। জেলায় মোট পুকুরের সংখ্যা ৬০ হাজার ১০২টি এবং মৎস্য চাষির সংখ্যা ৪৮ হাজার ২৩৮ জন। বন্যায় জেলার ১ হাজার ৭৩০টি ফিশারি, পুকুর ও মৎস্য খামারের মাছ ভেসে গেছে। এতে ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৮ কোটি টাকা।

জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. শাহজাহান কবীর বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, জেলায় মোট উৎপাদিত মাছের অর্ধেকই উদ্বৃত্ত থাকে। তা দেশের বিভিন্ন স্থানে সরবরাহ করা হয়। কিন্তু বন্যা মৎস্য সম্পদের বেশ ক্ষতি হয়েছে। ২৫৭ দশমিক ৫৯ হেক্টর জমিতে থাকা অন্তত ১ হাজার ৭৩০টি ফিশারি, পুকুর ও খামারের ৭৪১ দশমিক ৯৭ মেট্রিক টন মাছ ও পোনা ভেসে গেছে। এ কারণে প্রায় ৯০০ জন মাছ চাষি প্রত্যক্ষভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন।

তিনি আরও বলেন, প্রাথমিকভাবে তথ্য নিয়ে ক্ষতির পরিমাণ নির্ধারণ করা হয়েছে। সব মিলিয়ে প্রায় ৮ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। ক্ষতি পুষিয়ে নিতে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে বরাদ্দ চাওয়া হবে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বন্যায় জেলার ৫টি উপজেলার ১৮টি ইউনিয়নের মৎস্য চাষিদের ক্ষতি বেশি হয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে সদর উপজেলায়। সদরের ৩টি ইউনিয়নের ৯৬০টি পুকুরের ৩১০ দশমিক ২৩ মেট্রিক টন মাছ ও পোনা ভেসে গেছে। যার আনুমানিক মূল্য ৩ কোটি ২৫ লাখ টাকারও বেশি। এছাড়া, কলমাকান্দা উপজেলার ৮টি ইউনিয়নের ৩২০টি ফিশারি, পুকুর ও মৎস্য খামারের ২১০ মেট্রিক টল মাছ ভেসে গিয়ে ৩ কোটি ২ লাখ, বারহাট্টা উপজেলার ৩টি ইউনিয়নের ৩৫০টি ফিশারি, পুকুর ও মৎস্য খামারের ১২০ দশমিক ৫৪ মেট্রিক টন মাছ ভেসে গিয়ে ৯৯ দশমিক ২০ লাখ, দুর্গাপুর উপজেলার ২টি ইউনিয়নের ৬৫টি ফিশাারি, পুকুর ও মৎস্য খামারের ৫৬ দশমিক ২০ মেট্রিক টন মাছ ভেসে গিয়ে ১৮ দশমিক ৩৫ লাখ এবং পূর্বধলা উপজেলার ২টি ইউনিয়নের ৩৫টি ফিশারি, পুকুর ও মৎস্য খামারের ৪৫ মেট্রিক টন মাছ ভেসে গিয়ে ৪৪ দশমিক ৩৫ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে। এতে পুঁজি হারিয়ে পথে বসেছেন অনেক মৎস্য চাষি। পাশাপাশি ভৌত অবকাঠামোগত ক্ষতি হয়েছে আরও ১ কোটি টাকারও বেশি। তবে চাষিদের দাবি, মৎস্য সম্পদের মোট ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ ১০ কোটি টাকারও বেশি হবে।

রাস্তাঘাটের ক্ষতি

জেলায় এলজিইডির আওতাধীন ৫ হাজার ৯৫৩ কিলোমিটার সড়ক রয়েছে। এর মধ্যে ১ হাজার ৬৩৮ কিলোমিটার পাকা সড়ক। বাকিগুলো সিসি, আরসিসি, মেগাটম, কার্পেটিং ও কাঁচা সড়ক। এর মধ্যে প্রায় ৬৫০ কিলোমিটার কাঁচা-পাকা সড়ক পানিতে তলিয়ে যায়। পানিতে তলিয়ে যাওয়া যেসব সড়ক থেকে পানি নেমে গেছে, তার অধিকাংশ ব্যবহার করা যাচ্ছে না। স্রোতে স্থানে স্থানে ভেঙে গেছে। বিভিন্ন স্থানে ছোট-বড় পাকা সেতু, বক্স কালভার্টসহ সংযোগ সড়ক ধসে গেছে। রাস্তাঘাটের ক্ষতির পরিমাণ ১২২ কোটি টাকার মতো।

স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতর (এলজিইডি) নেত্রকোনা জেলা কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ রবিউল ইসলাম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, যেসব সড়ক থেকে বন্যার পানি নেমেছে, সেসব সড়কের প্রাথমিক হিসাব অনুযায়ী প্রায় ১২২ কোটি টাকার মতো ক্ষতি হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত রাস্তাগুলো দ্রুতসময়ের মধ্যে মেরামত করা হবে।

নেত্রকোনার জেলা প্রশাসক বনানী বিশ্বাস বলেন, বন্যার পানি এখন দ্রুতই নেমে যাচ্ছে। আশা করি, সম্মিলিত প্রচেষ্টায় দ্রুত সময়ের মধ্যেই সবকিছু স্বাভাবিক হয়ে যাবে। ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা তৈরি করে প্রশাসনের পক্ষ থেকে সহযোগিতা করা হবে।

/এএম/এএকে/

Source link

Related posts

হাসপাতালে এক যুগ পর অস্ত্রোপচার, খরচ হয়নি রোগীর

News Desk

একসঙ্গে মা-দাদি-নানিকে হারালো ৭ মাসের শিশুটি

News Desk

রাজশাহী মেডিকেলের করোনা ইউনিটে ১৮ জনের মৃত্যু

News Desk

Leave a Comment