Image default
বাংলাদেশ

এবার আগেভাগেই শুরু হচ্ছে সুন্দরবনে মধু সংগ্রহ

বাংলাদেশের জাতীয় পশু রয়েল বেঙ্গল টাইগার, সুন্দরী গাছ, মধু মোমসহ নানা প্রাকৃতিক সম্পদ ও সৌন্দর্যে ভরপুর সুন্দরবন। অন্যান্য প্রাকৃতিক উৎসের পাশাপাশি এই বন দেশের মধুর চাহিদাও পূরণ করছে। কী নেই বিশ্বের অন্যতম ম্যানগ্রোভ এই বনে। করোনাকালে মধু আহরণে মৌয়ালীদের সঙ্গে সুন্দরবনে কেটেছে ‘মধুর সম্পর্ক’। আগামী ১৫ মার্চ থেকে সুন্দরবনে মধু আহরণ শুরু হচ্ছে। অন্যান্য বছর ১ এপ্রিল থেকে মধু ও মোম সংগ্রহের কাজ শুরু হলেও এবার কিছুটা আগেই শুরু হচ্ছে।

খুলনা, বাগেরহাট ও সাতক্ষীরা জেলায় অবস্থিত পৃথিবীর বৃহত্তম প্রাকৃতিক ম্যানগ্রোভ বন সুন্দরবন। এ বন বঙ্গোপসাগরের কোল ঘেঁষে অবস্থিত। সুন্দরবনের মোট আয়তন ১০ হাজার বর্গ কিলোমিটার। এর মধ্যে বাংলাদেশের অংশের আয়তন প্রায় ছয় হাজার ১৭ বর্গ কিলোমিটার। জীববৈচিত্র্যের আধার এই সুন্দরবন।

দেশে মধু উৎপাদনের অন্যতম প্রধান ক্ষেত্র হচ্ছে সুন্দরবন। ১৮৬০ সাল থেকে সুন্দরবনে মধু সংগ্রহ করা হয়। বনসংলগ্ন একটি ক্ষুদ্র গোষ্ঠী বংশ পরম্পরায় মধু সংগ্রহ করে। এদেরকেই মৌয়াল বলা হয়। সুন্দরবনের সবচেয়ে ভালো মানের মধু খোলসী ফুলের ‘পদ্ম মধু’। মানের দিক থেকে এরপরেই গরান ও গর্জন ফুলের ‘বালিহার মধু’। মৌসুমের একেবারে শেষে আসা কেওড়া ও গেওয়া ফুলের মধু অপেক্ষাকৃত কম সুস্বাদু। মধু সংগ্রহের জন্য প্রতি বছরের ১ এপ্রিল থেকে তিন মাসের (এপ্রিল, মে ও জুন) জন্য বন বিভাগ মৌয়ালদের অনুমতিপত্র (পাস) দেয়। মধু সংগ্রহ করতে যাওয়ার আগে বিশেষ প্রার্থনা করে নেন মৌয়ালরা।

মৌয়ালরা এখন সনাতন পদ্ধতির পাশাপাশি হাইজেনিক পদ্ধতিতেও সুন্দরবন থেকে মধু ও মোম সংগ্রহ করছেন। যার ফলে মধু ও মোম সংগ্রহের পরিমাণ দিন দিন বাড়ছে। পরিচ্ছন্নভাবে মধু সংগ্রহ এবং এর গুণগত মানও বজায় রাখার জন্য বেসরকারি সংগঠনগুলো মৌয়ালদের যন্ত্রপাতি বিতরণ করছে।

সুন্দরবনের মধু শক্তি প্রদায়ী, হজমে সহায়তা, কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে, ফুসফুসের যাবতীয় রোগ ও শ্বাসকষ্ট নিরাময় করে। মধুতে রয়েছে ভিটামিন যা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট হিসেবে কাজ করে। মধুতে প্রায় ৪৫টি খাদ্য উপাদান থাকে।

সুন্দরবন বিভাগের তথ্যে জানা গেছে, ২০২০-২১ অর্থবছরে এক হাজার ২০৪টি পাস নিয়ে সাত হাজার ৭১ জন বনে মধু আহরণে যান। তা থেকে ৪৩ লাখ ১১ হাজার ৫৬৩ টাকার রাজস্ব আসে। এর মধ্যে মধু থেকে ৩০ লাখ ৭৯ হাজার ৬১৩ টাকা ও মোম থেকে ১২ লাখ ৩১ হাজার ৯৫০ টাকা আসে। গত মৌসুমে সুন্দরবন থেকে চার হাজার ১০৬ দশমিক ১৫ কুইন্টাল মধু ও এক হাজার ২৩১ দশমিক ৯৫ কুইন্টাল মোম আহরিত হয়।

সুন্দরবন পশ্চিম বিভাগের তথ্য মতে, ২০২০-২১ অর্থ বছরে মধু ও মোম আহরণের জন্য এক হাজার ১২টি পাসের আওতায় ছয় হাজার ৭৯৭ জন মৌয়াল সুন্দরবনে প্রবেশ করেন। তারা তিন হাজার ৪১৯ দশমিক ১৫ কুইন্টাল মধু ও এক হাজার ২৫ দশমিক ৮৫ কুইন্টাল মোম আহরণ করে। আর মধু থেকে ২৫ লাখ ৬৪ হাজার ৩৬৩ টাকা ও মোম থেকে ১০ লাখ ২৫ হাজার ৮৫০ টাকা রাজস্ব আসে।

সুন্দরবন পূর্ব বিভাগের তথ্যমতে, ২০২০-২১ অর্থবছরে মধু ও মোম আহরণের জন্য ১৯২টি পাসের আওতায় এক হাজার ৩৭৪ জন মৌয়াল সুন্দরবনে প্রবেশ করেন। তারা ৬৮৭ কুইন্টাল মধু ও ২০৬ দশমিক ১০ কুইন্টাল মোম আহরণ করেন। আর মধু থেকে পাঁচ লাখ ১৫ হাজার ২৫০ ও মোম থেকে দুই লাখ ছয় হাজার ১০০ টাকা রাজস্ব আসে।

সুন্দরবন পশ্চিম বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা ড. আবু নাসের মোহসিন হোসেন জানান, আগে মৌয়ালদের পাস-পারমিট দেওয়া হতো। কিন্তু কিছু মৌয়াল পাস-পারমিট না নিয়ে অবৈধভাবে আগেই বনে ঢুকে মধু আহরণ শুরু করেন। এর ফলে পাস-পারমিট নিয়ে বনে যাওয়া মৌয়ালরা তাদের কাঙ্ক্ষিত মধু আহরণ করতে পারেন না। বনের মৌচাকগুলোতে ১৫ মার্চ থেকেই মধু পাওয়া যায়। সে কারণে এ বছর ১৫ মার্চ থেকে মধু সংগ্রহের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

খুলনা সার্কেলের বন সংরক্ষক মিহির কুমার দো বলেন, ‘গতবছর সুন্দরবন থেকে মৌয়ালরা চার লাখ ৪৬ হাজার ৩১৫ কেজি মধু ও এক লাখ ৩৩ হাজার ৯০৫ কেজি মোম আহরণ করেছিলেন। এ বছর এর পরিমাণ আরও বাড়বে বলে আশা করা হচ্ছে।’

Source link

Related posts

পোতা দিয়ে প্রেমিকার আঘাতেই প্রাণ হারান রাফি

News Desk

অনুপ ভট্টাচার্যের মৃত্যুতে প্রধানমন্ত্রীর শোক

News Desk

সারাদেশে করোনায় মৃত্যু ১৯ হাজার ছাড়াল

News Desk

Leave a Comment