সাবেক হাইকমিশনার এম খায়রুজ্জামানকে বাংলাদেশের কাছে হস্তান্তরের ওপর স্থগিতাদেশ দিয়েছেন মালয়েশিয়ার হাইকোর্ট।
খায়রুজ্জামানকে যাতে বাংলাদেশের কর্তৃপক্ষের কাছে হস্তান্তর করা না হয়, সে জন্য মালয়েশিয়ার অভিবাসন বিভাগের বিরুদ্ধে এই অন্তর্বর্তীকালীন আদেশ দেন দেশটির হাইকোর্ট।
মালয়েশিয়ার হাইকোর্টের বিচারপতি মোহাম্মদ জাইনি মাজলান আজ মঙ্গলবার খায়রুজ্জামানের রিট (হেবিয়াস কর্পাস) আবেদনের শুনানিকালে এ আদেশ দেন। খায়রুজ্জামানের স্ত্রী রীতা রহমান প্রথম আলোকে এসব তথ্য জানান।
ফ্রি মালয়েশিয়া টুডে জানায়, হস্তান্তরের ওপর স্থগিতাদেশ চেয়ে খায়রুজ্জামানের করা আবেদন মঞ্জুর করেন বিচারপতি মোহাম্মদ জাইনি মাজলান।
অন্তর্বর্তীকালীন আদেশে বিচারপতি বলেন, এই আদালতের আদেশের বিরুদ্ধে গিয়ে খায়রুজ্জামানকে হস্তান্তর করা হয়েছে, এমনটি হাইকোর্ট শুনতে চান না।
খায়রুজ্জামানের পক্ষে করা হেবিয়াস কর্পাস আবেদনের শুনানির জন্য মালয়েশিয়ার হাইকোর্ট আগামী ২০ মে তারিখ ধার্য করেছেন।
ফ্রি মালয়েশিয়া টুডের প্রতিবেদনে বলা হয়, খায়রুজ্জামানকে (৬৫) অজ্ঞাত কারণে ফেরত চায় বাংলাদেশ।
খায়রুজ্জামানের স্ত্রী রীতা রহমানের দাবি, রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত কারণে তাঁর স্বামীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
খায়রুজ্জামানকে ১০ ফেব্রুয়ারি মালয়েশিয়ার সেলাঙ্গর প্রদেশের আমপাং এলাকার বাসা থেকে গ্রেপ্তার করে দেশটির অভিবাসন পুলিশ।
খায়রুজ্জামানের আইনজীবীদের দাবি, তাঁদের মক্কেল (খায়রুজ্জামান) একজন রাজনৈতিক আশ্রয়প্রার্থী। তিনি জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থার (ইউএনএইচিআর) কার্ডধারী। তিনি কোনো অভিবাসন আইন লঙ্ঘন করেননি। তাঁর বৈধ ভ্রমণ নথিপত্র আছে। তিনি মালয়েশিয়ায় কোনো কাজ করছিলেন না। তিনি বাড়িতে অবস্থান করছিলেন। তাই তাঁকে আটক করা বেআইনি। তাঁকে বহিষ্কার করার অধিকার মালয়েশিয়ার নেই।
খায়রুজ্জামানকে বাংলাদেশের কাছে হস্তান্তরের ক্ষেত্রে গত শুক্রবার সাময়িক নিষেধাজ্ঞা দিয়েছিলেন মালয়েশিয়ার কুয়ালালামপুরের একটি আদালত। এখন দেশটির হাইকোর্ট তাঁকে হস্তান্তরের ওপর স্থগিতাদেশ দিলেন।
সাবেক সেনা কর্মকর্তা থেকে পরে সামরিক সরকারের আমলে প্রেষণে নিয়োগ পেয়ে কূটনীতিক হন খায়রুজ্জামান।
খায়রুজ্জামানকে গ্রেপ্তারের কারণ নিয়ে দুই ধরনের বক্তব্য পাওয়া গেছে। মালয়েশিয়ার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হামজা জয়নুদ্দিন গত বৃহস্পতিবার এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, বাংলাদেশে অপরাধের সঙ্গে যুক্ততার অভিযোগ রয়েছে খায়রুজ্জামানের বিরুদ্ধে। বাংলাদেশের অনুরোধে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। বিধি মেনেই তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
পরে ঢাকায় পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম সাংবাদিকদের বলেন, মালয়েশিয়ার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় চিঠি দিয়ে কুয়ালামপুরে বাংলাদেশ মিশনকে জানিয়েছে, দেশটির অভিবাসন আইন লঙ্ঘনের অভিযোগে সেখানে খায়রুজ্জামানকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাঁকে যত দ্রুত সম্ভব বাংলাদেশে ফিরিয়ে আনার জন্য সরকার কাজ করছে।
১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর জেলে জাতীয় চার নেতা হত্যা মামলার অন্যতম আসামি খায়রুজ্জামানকে চাকরিচ্যুতির পর গ্রেপ্তার করা হয়।
২০০১ সালে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার ক্ষমতায় এলে খায়রুজ্জামান জামিনে মুক্তি পান। এরপর চাকরি ফিরে পেয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে মহাপরিচালক পদে যোগ দেন তিনি।
২০০৪ সালে জেলহত্যা মামলা থেকে খালাস পান খায়রুজ্জামান। ২০০৫ সালে তিনি মিয়ানমারে বাংলাদেশ দূতাবাসে নিয়োগ পান। পরে ২০০৭ সালে সেনা-সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশের হাইকমিশনার হিসেবে নিয়োগ পান।
আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর ২০০৯ সালে মালয়েশিয়ায় তৎকালীন বাংলাদেশি হাইকমিশনার খায়রুজ্জামানকে দেশে ফেরার নির্দেশ দেওয়া হয়। সেই আদেশ অগ্রাহ্য করে তিনি মালয়েশিয়ায় থেকে যান।
প্যারিসভিত্তিক মানবাধিকার সংগঠন দ্য ফেডারেশন অব ইন্টারন্যাশনাল হিউম্যান রাইটসের (এফআইডিএইচ) তথ্য অনুযায়ী, খায়রুজ্জামান জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থার (ইউএনএইচিআর) নিবন্ধিত শরণার্থী।