খুলনায় গণমিছিলে সংঘর্ষ, পুলিশ সদস্য নিহত
বাংলাদেশ

খুলনায় গণমিছিলে সংঘর্ষ, পুলিশ সদস্য নিহত

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ডাকা গণমিছিলে উত্তপ্ত হয়ে ওঠে খুলনা। এই কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে পুলিশের দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়। এতে সুমন ঘরামি নামে পুলিশের এক সদস্য (কনস্টেবল) নিহত হন। এ সময় আরও ২০ পুলিশ সদস্যসহ শতাধিক মানুষ আহত হয়েছে।

খুলনা সিটি মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের প্রশাসনিক কর্মকর্তা হামিদুল ইসলাম বলেন, শুক্রবার সন্ধ্যার পর চার পুলিশ সদস্যকে হাসপাতালে আনা হয়। এর মধ্যে একজন মৃত ছিল। তার মরদেহ হাসপাতালের লাশঘরে রাখা হয়েছে। তার নাম সুমন ঘরামি। অপর তিন জন চিকিৎসাধীন রয়েছেন। তারা হলেন মাজহারুল ইসলাম, সোহানুর রহমান সোহাগ ও সৌমেন।

বিষয়টি নিশ্চিত করে খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশের (কেএমপি) কমিশনার মো. মোজাম্মেল হক বলেন, সংঘর্ষে সুমন ঘরামি নামে পুলিশের এক কনস্টেবল নিহত হন এবং পুলিশের ২০ সদস্য আহত হয়েছেন। সুমনকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে। আহত ২০ জনকেও পিটিয়ে গুরুতর জখম করা হয়েছে। একজনকে আইসিইউতে চিকিৎসাধীন রাখা হয়েছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘পুলিশ কিছু ফাঁকা রাবার বুলেট ছুড়ে আওয়াজ তুলে আন্দোলনকারীদের ভয় দেখাতে চেয়েছে। সরাসরি কারও গায়ে মারা হয়নি। কিন্তু পুলিশ সদস্য ফিরে আসার সময় আন্দোলনকারীরা একজনকে পিটিয়ে নিহত ও অন্যদের আহত করলো।’

জানা গেছে, খুলনার জিরো পয়েন্ট ও গল্লামারী মোড় এবং খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় শুক্রবার বিকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে পুলিশের তিন দফায় সংঘর্ষ হয়। এ সময় পুলিশ শিক্ষার্থীদের লক্ষ্য করে অসংখ্য টিয়ার শেল, রাবার বুলেট ও সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করে। শিক্ষার্থীরাও পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকল ছোড়ে। এ সময় বিক্ষুব্ধ আন্দোলনকারীরা পুলিশের একটি পিকআপে আগুন ধরিয়ে দেয়।

শুক্রবার সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত গুলিবিদ্ধ (রাবার বুলেট ও ছররা গুলি) অবস্থায় সাত জনসহ ১৬ জনকে খুলনা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এর মধ্যে চার জনের অবস্থা গুরুতর। আহত আরও আসছিল। টিয়ার শেলের আঘাতে শতাধিক মানুষ খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিক্যাল সেন্টার থেকে প্রাথমিক চিকিৎসাসেবা নিয়েছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ার পর অ্যাম্বুলেন্সযোগে গুরুতর আহত অনেককে হাসপাতালে নেওয়া হয়।

এদিন বিকাল সোয়া ৩টায় প্রথম সংঘর্ষ হয়। পরে বিকাল ৪টায় ও ৫টা ৩৯ মিনিটে সংঘর্ষ হয়। প্রতিবাদী গান শেষে শিক্ষার্থীরা মিছিল নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের গেট থেকে শিববাড়ির দিকে রওনা হয়। এ সময় গল্লামারী মোড়ে পুলিশ বাধা দেয়। এতে আবারও সংঘর্ষ শুরু হয়। এ সময়ে মুহুর্মুহু টিয়ার শেল, রাবার বুলেট, সাউন্ড গ্রেনেড ছোড়ে পুলিশ। এতে পুরো গল্লামারী এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। এই তিন দফার সংঘর্ষে আহত হয় ১৬ জন। দুজনকে গুরুতর অবস্থায় খুলনা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এর মধ্যে একজন পথচারীসহ সাত জন গুলিবিদ্ধ হয়েছে বলে আন্দোলনকারীরা দাবি করেছেন।

খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় মেডিক্যালে দায়িত্বরত চিকিৎসক ডা.  মিলন বিশ্বাস বলেন, ৮০ জনের মতো শিক্ষার্থীকে তার সেন্টার থেকে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। যারা এসেছিলেন, অধিকাংশই টিয়ার শেল ও রাবার বুলেটের আঘাতে আহত ছিলেন। যাদের অবস্থা একটু গুরুতর, তাদের মেডিক্যালে পাঠানো হয়েছে।

আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা জানান, প্রথম দুই দফায় পুলিশ হামলা চালালে শিক্ষার্থীরা রাজপথে নেমে আসে। তারা তীব্র প্রতিরোধ গড়ে তোলে। এর ফলে পুলিশ পিছু হটতে বাধ্য হয়। এ সময় পুলিশ আটক করা দুই ছাত্রকে ছেড়ে দিতে বাধ্য হয়। সংঘর্ষে ১০ জন ছাত্র আহত হয়। দুজনকে গুরুতর আহত অবস্থায় খুলনা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। অপর আট জনকে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিক্যালে চিকিৎসা দেওয়া হয়। পুলিশের বাধা অতিক্রম করে ছাত্র শিক্ষক জনতার প্রতিবাদী গানের অনুষ্ঠান চলে। এরপর শিক্ষার্থীরা মিছিল নিয়ে শিববাড়ি মোড়ের দিকে রওনা হয়। কিন্তু গল্লামারী পৌঁছালে পুলিশ বাধা দেয়। এতে সংঘর্ষ শুরু হয়। এ সময় পুলিশ অবিরাম টিয়ার শেল, রাবার বুলেট ও সাউন্ড গ্রেনেড ছোড়ে। এতে এক পথচারীসহ আরও ছয় জন গুলিবিদ্ধ হন।

খুলনা মহানগরীর হরিনটানা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি তদন্ত) সঞ্জীব কুমার ঘোষ বলেন, সার্বিক পরিস্থিতি পুলিশের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। সংঘর্ষের পর এখন পরিস্থিতি স্বাভাবিক আছে।

Source link

Related posts

বদলির আদেশ পেয়ে থানার এসি-সোফা-টেলিভিশন বাসায় নিয়ে গেলেন ওসি

News Desk

অর্থনৈতিক অঞ্চলের স্থান পরিদর্শন করে ভুটানের রাজার সন্তোষ প্রকাশ

News Desk

'বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্কে প্রাণীর মৃত্যুর ঘটনায় দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে'  

News Desk

Leave a Comment