গাজীপুরে আ.লীগের ৩ কার্যালয়ে ভাঙচুর, নেতাদের বাড়ি-অফিসে হামলা
বাংলাদেশ

গাজীপুরে আ.লীগের ৩ কার্যালয়ে ভাঙচুর, নেতাদের বাড়ি-অফিসে হামলা

গাজীপুরে অসহযোগ আন্দোলন কর্মসূচি চলাকালে রবিবার (৪ আগস্ট) বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভ ও সড়ক অবরোধ করেছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনকারীরা। এ সময় আওয়ামী লীগের জেলা কার্যালয়সহ কাপাসিয়া ও কালিয়াকৈর উপজেলা কার্যালয়ে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে। বিকালে গাজীপুর জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ও শ্রীপুর উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান নাসির মোড়লের শ্রীপুরের মাওনা চৌরাস্তার বাসভবনে অগ্নিসংযোগ করে। দুপুরে গাজীপুর জেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী ও শ্রীপুর উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক জাহিদুল আলম রবিন ও পৌর যুবলীগ নেতা মোরছালিন মামুনের বাড়িতে হামলা করে ভাঙচুর চালানো হয়।

কালিয়াকৈর থানা ও শ্রীপুর হাইওয়ে থানায় বিভিন্ন ঘটনায় জব্দ করে রাখা ৭/৮টি গাড়িতে অগ্নিসংযোগ করেছে। এ ছাড়াও কালিয়াকৈরে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে যোগ দিয়ে বিভিন্ন কারখানার শ্রমিকরা সফিপুর আনসার একাডেমিতে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর করে। এসব ঘটনায় সাংবাদিক ও আওয়ামী লীগ নেতাসহ বেশ কয়েকজন আহত হয়েছেন।

জানা গেছে, সকাল ১০টার দিকে কাপাসিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের দলীয় কার্যালয়ে নেতাকর্মীরা উপস্থিত হতে শুরু করেন। আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের সঙ্গে আন্দোলনকারীদের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। এ সময় হঠাৎ আন্দোলনকারীরা উপজেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে হামলা ও ভাঙচুর করে অগ্নিসংযোগ করে। তারা দলীয় কার্যালয়ের সামনে রাখা নেতাকর্মীদের ১২টি মোটরসাইকেল ভাঙচুর করে আগুন ধরিয়ে দেয়।

কাপাসিয়া ফায়ার সার্ভিসের ডিউটি অফিসার সজিব মিয়া জানান, তরগাঁও মোড়ে ফায়ার সার্ভিসের অফিসের সামনের সড়কে রাখা একটি বাইকে আগুন দেয়। রাজেন্দ্রপুর-কিশোরগঞ্জ মহাসড়কের কাপাসিয়ার তাজউদ্দীন আহমদ চত্বরের আশপাশে এসব ঘটনা ঘটে। বেলা সাড়ে ১১টার দিকে কাপাসিয়ার ফকির মজনু শাহ সেতুতে আওয়ামী লীগ-ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের একটি মিছিল আসতে থাকে এবং আন্দোলনকারীদের ধাওয়া দেয়। কয়েক মিনিটের মধ্যেই আওয়ামী লীগ-ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা সেখান থেকে পিছু হটে।

জানা গেছে, রবিবার সকাল থেকে আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা দলীয় কার্যালয়সহ বিভিন্ন পয়েন্টে অবস্থান নেন। বেলা ১১টার দিকে আন্দোলনকারীরা জড়ো হয়ে ঢাকা-গাজীপুর সড়কের শিববাড়ি মোড় এলাকা এসে বিক্ষোভ শুরু করেন। এ সময় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা শিববাড়ির দিকে অগ্রসর হলে দুই পক্ষের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও সংঘর্ষ শুরু হয়। এ ঘটনায় আওয়ামী লীগ নেতা এ বি এম নাসির, আইয়ুব রানা, লিটনসহ কয়েকজন আহত হন। একপর্যায়ে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা পিছু হটেন। পরে আন্দোলনকারীরা শিববাড়ি থেকে চান্দনা চৌরাস্তায় গিয়ে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করে।

গাজীপুরে আ.লীগের ৩ কার্যালয়ে ভাঙচুর, নেতাদের বাড়ি-অফিসে হামলা

এ সময় ঢাকা-ময়মনসিংহ, ঢাকা-টাঙ্গাইল ও ঢাকা-গাজীপুর সড়কে সব ধরনের যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে পড়ে। বিকালে আওয়ামী লীগের কর্মীরা শিববাড়ি এলাকায় যায়। এ সময় কয়েকজনের ওপর হামলার খবর পেয়ে আন্দোলনকারীরা শিববাড়ি ফিরে আসে। তারা জেলা শহরে গিয়ে আওয়ামী লীগের জেলা অফিস ও দুটি মোটরসাইকেল ভাঙচুর এবং অগ্নিসংযোগ করে। তারা ইটপাটকেল ছুড়ে গাজীপুর প্রেসক্লাব ভাঙচুর করে। খবর পেয়ে সেনাবাহিনী ও পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।

এর আগে দুপুরে আন্দোলনকারীরা কালিয়াকৈর থানা ও শ্রীপুর হাইওয়ে থানায় বিভিন্ন ঘটনায় জব্দ করে রাখা ৭/৮টি গাড়িতে অগ্নিসংযোগ করেছে। এ ছাড়াও কালিয়াকৈরে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে যোগ দিয়ে বিভিন্ন কারখানার শ্রমিকরা সফিপুর আনসার একাডেমিতে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর করে। আনসার সদস্যরা টিয়ার শেল ও শটগানের গুলি ছুড়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। তারা চন্দ্রা ও সফিপুরে আওয়ামী লীগের কার্যালয় ও পুলিশ বক্স ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করে। এসব ঘটনায় সাংবাদিকসহ বেশ কয়েকজন আহত হন।

গাজীপুরে আ.লীগের ৩ কার্যালয়ে ভাঙচুর, নেতাদের বাড়ি-অফিসে হামলা

সকাল ১০টার দিকে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের শ্রীপুর উপজেলার মাওনা চৌরাস্তা পল্লী বিদ্যুৎ মোড়ে শিক্ষার্থীরা জমায়েত হতে থাকেন। গাজীপুর জেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী ও শ্রীপুর উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক জাহিদুল আলম রবিন এবং পৌর যুবলীগ নেতা মোরছালিন মামুন নেতাকর্মীদের নিয়ে মাওনা উড়াল সেতুর নিচে অবস্থান নেন। তারা সেখানে আন্দোলনবিরোধী মিছিল করেন। পরে পল্লী বিদ্যুৎ মোড়ে অবস্থান করা আন্দোলনকারীরা ধাওয়া করলে পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে।

রবিবার সকাল সাড়ে ১০টায় গাজীপুরের কালিয়াকৈর উপজেলার সফিপুর বাজার থেকে বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে শত শত শিক্ষার্থী চন্দ্রা ত্রিমোড় এলাকায় মহাসড়কে অবরোধ সৃষ্টি করেন। তারা চন্দ্রা মোড়ে অবস্থান নেন। তাদের সঙ্গে শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও সাধারণ মানুষ যোগ দেন। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে এলাকা জনসমুদ্রে পরিণত হয়।

আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা চন্দ্রা দলীয় কার্যালয়ের সামনে অবস্থান করলে আন্দোলনকারীরা তাদের ধাওয়া দেন। একপর্যায়ে তারা চন্দ্রা ত্রিমোড়ে কালিয়াকৈর উপজেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে আগুন ধরিয়ে দেন। চন্দ্রা ত্রিমোড় এলাকায় পুলিশ বক্সেও ভাঙচুর করা হয়।

গাজীপুরের চান্দনা চৌরাস্তায় ও আশপাশের এলাকায় মহানগর যুবলীগের আহ্বায়ক কামরুল আহসান সরকার রাসেল এবং বোর্ড বাজার এলাকায় মহানগর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুল্লাহ আল মামুন মন্ডলের নেতৃত্বে নেতাকর্মীদের নিয়ে অসহযোগ আন্দোলনের এক দফা কর্মসূচির প্রতিবাদে মহানগর আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগসহ অঙ্গসংগঠনের হাজার হাজার নেতাকর্মী লাঠিসোঁটা হাতে নিয়ে বিক্ষোভ মিছিল করেন।

গাজীপুরের শিববাড়ি এবং শিমুলতলীতে ঢাকা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে আন্দোলনকারীরা অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করেছেন।

কালিয়াকৈর থানার ওসি আবুল ফজল মো. নাসিম বলেন, আন্দোলনকারীরা বিক্ষোভ করছেন। আওয়ামী লীগের দলীয় কার্যালয়ে অগ্নিসংযোগ এবং পুলিশ বক্সেও ভাঙচুর করেছেন।

Source link

Related posts

প্রাইভেটকারের ধাক্কায় প্রাণ গেলো পুলিশ সদস্যের

News Desk

একসঙ্গে হাঁটতে শেখা, একসঙ্গে মৃত্যু

News Desk

বিদ্যালয়ের ১৫৪ শতক জায়গা দখল করে দোকানপাট

News Desk

Leave a Comment