ঘূর্ণিঝড় ‘ইয়াস’ এর প্রভাবে সৃষ্ট জলোচ্ছ্বাসে উপকূলবর্তী শ্যামনগর উপজেলার দ্বীপ ইউনিয়ন গাবুরা ও কৈখালী ইউনিয়ন জোয়ারের পানিতে প্লাবিত হয়েছে। এছাড়া বেড়িবাঁধ উপচে ভাঙ্গন কবলিত শ্যামনগরের বুড়িগোয়ালীনি, পদ্মপুকুর, মুন্সিগঞ্জ, কাশিমাড়ী ও রমজাননগর ও দেবহাটার কুলিয়া ইউনিয়নের প্রায় অর্ধ্ব শতাধিক গ্রামে জোয়ারের পানি প্রবেশ করেছে। এদিকে, আশাশুনি উপজেলার প্রতাপনগর, শ্রীউলা ও আশাশুনি সদর ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকায় বেড়িবাঁধ ভেঙ্গে প্লাবিত হয়েছে। দুর্গত এলাকার পাঁচ শতাধিক ঘরবাড়ি পানিতে নিমজ্জিত হওয়া ছাড়াও লক্ষাধিক একর জমির চিংড়ি ঘের পানিতে তলিয়ে গেছে। কয়েক’শ মিষ্টি পানির পুকুর জোয়ারের লবনাক্ত পানিতে একাকার হয়ে গেছে। অর্ধ লক্ষাধিক মানুষ তাৎক্ষনিকভাবে পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। পাশাপাশি উপদ্রুত এলাকায় খাদ্যদ্রব্যসহ পানীয় জলের সংকট দেখা দিয়েছে।
বুধবার (২৬ মে) বেলা সাড়ে দশটার দিকে ঘুর্ণিঝড় ইয়াসের প্রভাব শুরু হয়। প্রবল বেগে ঝড় না হলেও নদীর পানি অস্বাভাবিক বৃদ্ধি পাওয়ায় বিভিন্ন এলাকায় বেড়িবাঁধ ভেঙ্গে ও উপচে লোকালয়ের দিকে নদীর পানি ধেয়ে আসতে থাকে। দুপুরের আগেই উপকূলবর্তী এলকার বহু গ্রাম প্লাবিত হয়। তবে ঝড়ে কোথায় কোন ক্ষয়ক্ষতি হয়নি। এদিকে দুপুরের পরে ভাটা শুরু হওয়ার পরও নদীতে সেভাবে পানির টান না থাকায় বা নদীর পানি না কমায় রাতের জোয়ার নিয়ে প্লাবিত এ জনপদের মানুষের মধ্যে নতুন করে শংকা তৈরী হয়েছে। আগে থেকে সাইক্লোন শেল্টার গুলোতে আশ্রয় না নেয়ায় প্লাবিত হওয়ার পর চারপাশে পানিবেষ্টিত মানুষজন উদ্ধার কর্মীদের সহায়তার জন্য অপেক্ষা করছে। ক্ষয়ক্ষতি নিরুপনসহ করনীয় নির্ধারণের জন্য শ্যামনগর উপজেলা প্রশাসন ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটি দুপুরের পরপরই জরুরী সভা করেছেন।
শ্যামনগর উপেজলা নির্বাহী কর্মকর্তা আ.ন.ম আবুজর গিফারী জানান, ক্ষয়ক্ষতি নিরুপনসহ পরবর্তী করণীয় নির্ধারণে ইতিমধ্যে সভা করা হয়েছে। শ্যামনগরের বিস্তীর্ণ এলাকা পানিতে তলিয়ে গেছে। ঝড়ের তেমন তীব্রতা ছিলো না। কিন্তু নদীর পানি অস্বাভাবিক বৃদ্ধি পাওয়ার বাঁধ ভেঙ্গে ও উপচে পড়ার কারণে মানুষজন পানি বন্ধি হয়ে পড়েছে। তাদের উদ্ধারের ব্যাপারে ইতিমধ্যে পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে।
সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক এস এম মোস্তফা কামাল জানান, ঝড়ে তেমন ক্ষতি হয়নি। তবে বেড়িবাঁধ ভেঙ্গে এবং উপচে শ্যামনগর ও আশাশুনি উপজেলার বিভিন্ন এলাকা প্লাবিত হয়েছে। সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে চিংড়ি শিল্পের। শত শত মাছের ঘের, ফসলি জমি তলিয়ে নদীর পানির সাথে একাকার হয়ে পড়েছে। উপকূলের কমপক্ষে ১৫টি স্থান দিয়ে পানি প্রবেশের খবর আমরা পেয়েছি। কি পরিমাণ ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে তা জানতে হলে আরো সময় লাগবে। পূর্ণিমার ভরাকাটলা চলছে বিধায় রাতের জোয়ার যদি আরো বৃদ্ধি পায় তাহলে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ কয়েক গুন বেড়ে যাবে। তিনি বলেন, দুর্গত এলাকার মানুষ যাতে ঠিকমত খাদ্য পায় সেজন্য ২ কোটি ১৫ লাখ টাকা বিতরণ করা হয়েছে। এছাড়া ১৬৩ মেট্রিক টন খাদ্য সামগ্রী আমাদের হাতে রয়েছে। পানিবন্দি মানুষজনকে দ্রুত নিরাপদ আশ্রয়ে নিয়ে আসার চেষ্টা চলছে।
এদিকে পানি উন্নয়ন বোর্ড ও চেয়ারম্যানগণ সক্রিয় রয়েছেন ভাটা নেমে যাওয়ার সাথে সাথে পানি বের করতে কাজ করবেন তারা। সাতক্ষীরা উপকূলীয় এলাকায় যাতে টেকসই স্থায়ী বেড়িবাঁধ নির্মান করা হয় সে ব্যাপারে সরকার প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিচ্ছে বলে জানান তিনি। সাতক্ষীরা-৪ শ্যামনগর ও কালীগঞ্জ (আংশিক) এর সাংসদ জিএম জগলুল হায়দার বলেন, এক বছর আগে আঘাত আনা আম্পানের ক্ষত শুকোতে না শুকোতেই আবারো ইয়াসের ছোবল মানুষকে নতুন করে বিপদে ফেলেছে। সকলে মিলে একসাথে কাজ করে পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে হবে।